‘দুই পুরুষ’ ছবিতে লিলি ও সুপ্রিয়া
বেণুদির সঙ্গে অনেক ছবিতে কাজ করেছি। আপাতত দুটো ছবির কথা মনে পড়ছে— ‘ভোলা ময়রা’ আর ‘দুই পুরুষ’। বেণুদি আমাকে ছোট বোনের মতো ভালবাসতেন। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার পরিচিতি বাড়লে তাঁর সঙ্গেও ভাব জমে গিয়েছিল। বেণুদি দাদার (উত্তমকুমার) জন্য রান্না করে আনতেন। কিন্তু আমি ফ্লোরে থাকলে ডেকে নিতেন, একসঙ্গে খেতাম। শিল্পী সংসদের অনুষ্ঠানে বহু বার ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়েছি। লোকজন ভীষণ পছন্দ করতেন বেণুদি। নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াতেন।
একটা সময় আমার অভ্যেস ছিল অল্প জরদা দিয়ে পান খাওয়ার। ‘ভোলা ময়রা’র শুটে বেণুদি আমাকে বললেন, ‘পান খাবি?’ বললাম, ‘খাব, জরদা দিয়ে।’ পান এলে তা মুখে পুরে, জরদার প্যাকেট থেকে কিছুটা জরদা মুখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর মাথা ঘুরতে লাগল। মনে হচ্ছিল, শরীরের ভিতর থেকে সব যেন বেরিয়ে আসবে। আসলে জরদা দিয়ে পান খাব বলায় পানে আগে থেকেই জরদা দেওয়া ছিল। আমি সেটেই শুয়ে পড়লাম। ওই অবস্থাতেও শুনতে পেলাম, দাদা যেতে যেতে বলে গেলেন, ‘যেগুলো সহ্য হয় না, খাওয়া কেন?’ কিছুক্ষণ পর বেণুদি বললেন, ‘চল, মেকআপ রুমে গিয়ে শুবি।’ আমি বললাম, ‘আমার দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।’ উনি বললেন, ‘আমার কাঁধে ভর দিয়ে চল।’ উত্তর শুনে বলেছিলাম, ‘সুপ্রিয়াদেবীর কাঁধে হাত দিয়ে যাব! লোকে কী বলবে?’ উনি আমার কথা পাত্তাই দেননি। জোর করে আমাকে ধরে মেকআপ রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তার পর লাঞ্চ ব্রেক হল। আমি ঘুমিয়েও পড়ি। ঘুম ভাঙে অনেক পরে। টের পাই বেজায় খিদে পেয়েছে। লাঞ্চ পড়ে আছে মুখের সামনে। খেতে যাব, তখন এক জন খাবারটা নিয়ে গেল গরম করতে। শুনলাম, বেণুদি বলে গিয়েছিলেন, আমাকে যেন না ডাকা হয় এবং ঘুম ভাঙলে খাবার গরম করে দেওয়া হয়। আমার জন্য সকলে অপেক্ষা করছিলেন। সে দিন যা লজ্জা পেয়েছিলাম, তা বলার নয়।
যখনই বেণুদির সঙ্গে দেখা হয়েছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে উত্তমকুমারের জন্মদিনে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানে গিয়ে বসে আছি, মঞ্চে ডাকছে না! দেরির কারণ জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম, বেণুদি বলেছেন, উনি এলে তার পর যেন আমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই আন্তরিকতা কি ভোলা যায়!