Sandhya Mukhopadhyay

Sandhya Mukherjee: উত্তরসূরিদের অকাতরে পরামর্শ দিয়েছেন

সালটা ঠিক মনে নেই, তবে আমি আর জয় সায়েন্স সিটিতে মান্না দে এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান শুনতে গিয়েছি।

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:০০
Share:

উস্তাদ বিলায়েত খানের সঙ্গে।

সন্ধ্যাদি আমাদের প্রাণের মানুষ ছিলেন। শুধু যে দূর থেকে ওঁর গান ভাল লেগেছে তা নয়। ওঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, ভালবাসা পেয়েছি। আমরা একজন যথার্থ অভিভাবক হারালাম। বয়স হয়েছিল, কষ্টও পাচ্ছিলেন। এই অবস্থায় চলে যাওয়াই ভাল, তবুও মন মানতে চায় না। এখন আমি কলকাতা থেকে অনেক দূরে রয়েছি। মনের মধ্যে হাজারো পুরনো কথা ভিড় করছে।

Advertisement

সন্ধ্যাদির সঙ্গে প্রথম স্মৃতি, যে বছর আমার ‘বেণীমাধব’ মুক্তি পেল। তখন ল্যান্ডফোনের জমানা। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একটা ফোন এল। এ দিকে আমি বরাবর দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। ফোনটা তুলতে ও পার থেকে কেউ বললেন, ‘আমি সন্ধ্যাদি বলছি।’ প্রথমে বুঝতেও পারিনি কে ফোন করেছেন। তার পর আবার বললেন, ‘আমি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলছি। গান গাই।’ তখন মনে হচ্ছে ধরণী দ্বিধা হও! ‘বেণীমাধব’ শুনে ওঁর ভাল লেগেছিল বলে ফোন করেছিলেন।

এটা ১৯৯৬ এর ঘটনা। সেই থেকে একটা ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুরু হল। মাস দুয়েক আগেও উনি একদিন নিজে ফোন করেছিলেন। বেশির ভাগ সময়ে ফোন করে বলতেন, ‘‘তোমরা তো আর দিদির খবর রাখো না, তাই দিদিকেই তোমাদের খোঁজ নিতে হয়।’’ সত্যি বলতে কী আমি বা জয় (সরকার) কেউই সময় করে ওঁকে ফোন করে উঠতে পারতাম না। কিন্তু উনি একজন অভিভাবকের মতো আমাদের খোঁজ নিতেন। ফোন করে গান শোনাতেন। আর বলতেন, ‘দেখো তো ঠিক করে গাইতে পারলাম কি না।’ লজ্জায় পড়ে যেতাম আমরা।

Advertisement

গানের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উনি মাতৃসমা ছিলেন। কত আদর, যত্ন করতেন। বাড়ি গেলে যত্ন করে নিজে হাতে খেতে দিতেন। শুধু আমাকেই নয়, সকলে ওঁর স্নেহ, ভালবাসা পেয়েছেন। কী খেলে গলা ভাল থাকবে, অনুষ্ঠানের আগে কী করা উচিত... নিয়মিত রেওয়াজ করি কি না, জানতে চাইতেন। উঁচু গলায় কথা বলতে বারণ করতেন। আমি তো সব দিক দিয়ে উল্টো। সারাক্ষণ চেঁচাচ্ছি। জোরে জোরে হাসছি।

সালটা ঠিক মনে নেই, তবে আমি আর জয় সায়েন্স সিটিতে মান্না দে এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান শুনতে গিয়েছি। তখন উনি বাইরে শো করা কমিয়ে দিয়েছেন। আমাকে দেখে বলছেন, ‘কী শুনতে এসেছ, দিদি পারবেন কি না!’’ খুব নার্ভাস ছিলেন সে দিন। ওই অনুষ্ঠানের ছবিও আমার কাছে আছে। সন্ধ্যাদি, আমি, জয় আর সস্ত্রীক শ্রীকান্ত আচার্য।

বছর আষ্টেক আগে শেষ গিয়েছিলাম সন্ধ্যাদির বাড়িতে। দেখছি হারমোনিয়াম বার করা রয়েছে। ওই বয়সেও উনি প্রত্যেক দিন রেওয়াজ করতেন। আমি নিশ্চিত হাসপাতালে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত হয়তো উনি রেওয়াজ করে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন