লেদার মানে শুধু ব্যাগ, জুতো, জ্যাকেট নয়।
সারা বিশ্বেই এখান লেদারের তৈরি জামাকাপড় খুব জনপ্রিয়। ডিজাইনারেরা লেদারের স্কার্ট, প্যান্ট, ড্রেস এমনকী শাড়িও বানাচ্ছেন আজকাল। প্রিমিয়ার হোক বা রেড কার্পেট বা পার্টি, সর্বত্রই চলতে পারে লেদারের সাজ। কোনও দিন লেদার আউট অফ ফ্যাশন ছিল না। এখনও নয়। বেশি দামের লেদারের সাজে যাবার মতো রেস্তো নেই যাঁদের তাঁরা কিনতে পারেন নকল লেদারের ফ্যাশনওয়্যার। ‘‘লেদার সব সময়ই ফ্যাশনেবল। এটি এমন একটা উপকরণ যা দিয়ে জুতো, জামা, অ্যাকসেসারি সবই তৈরি হতে পারে। আমার তৈরি লেদারের শাড়ি আর ব্রাকাট ব্লাউজ খুব জনপ্রিয়। লেদারের সুইমস্যুটও বানিয়েছি,’’ বলছেন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত। অভিষেক তাঁর ডিজাইনের পোশাকে বহু দিন ধরেই লেদার ব্যবহার করেন। প্যাচওয়ার্ক থেকে বোতাম— সবেতেই লেদার ব্যবহার করেন অভিষেক। তাঁর ডিজাইনের পোশাক বলিউডেও অনেকের পছন্দ।
শুধু কালো, ট্যান বা বেজ রঙে নয়, লেদারের জামাকাপড় লাল, হলুদ, সবুজ সব রঙেই হয়। লেদারের সাজপোশাকে আত্মবিশ্বাসী দেখায়। ঠিক মতো যত্ন করে রাখতে পারলে লেদারের জিনিস বহু বছর টিকে যায়। এ দিয়ে তৈরি ফ্যাশনওয়্যার সম্ভ্রান্ত সংগ্রহ হয়ে থাকে আপনার ওয়ার্ড্রোবে দীর্ঘকাল। শুধু তাই নয় লেদার ‘মেনটেন’ করা খুব সহজ। নোংরা হলে ভেজা টিস্যু পেপারের মতো স্পেশাল হোয়াইপস পাওয়া যায়, যা দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা যায়। জিনসের মতো লেদারের জামাকাপড়ও রাফ ইউজ করা যায়। তরল পদার্থের মতোই নরম এই লেদার। খুব সুন্দর ‘মুভমেন্ট’ আছে এর।
প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি জামাকাপড় যাঁরা পরতে চান না, তাঁরা পিলেদারের জামাকাপড় পরতে পারেন। অনেক ডিজাইনারই এখন পিলেদার ব্যবহার করছেন। ডিজাইনার অনিতা ডোগরে বলছেন, ‘‘লেদার চিরকালই অভিজাত সমাজের ফ্যাশন ছিল। কিন্তু এখন প্রাণীহত্যা না করেও বিকল্প চামড়া দিয়ে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করা যায়। নন অ্যানিমেল সিন্থেটিক লেদার এখন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সাপের চামড়া, কুমিরের চামড়ার ফ্যাশনওয়্যার খুবই বিলাসবহুল ব্যাপার। এখন এসবেরও নকল পাওয়া যায়। আমি নিজে এই ধরনের ভেগান লেদার ব্যবহার করি আমার ডিজাইনে। প্রাণীহত্যা না করেই তার চামড়ার সৌন্দর্য তুলে ধরা হচ্ছে এই ভাবে।’’
বলিউড সেলিব্রিটিরাও আজকাল ভেগান লেদারের প্রচারে নেমেছেন। হলিউডের তারকারাও কম যান না। কলকাতার আবহাওয়া এমন যে, সব সময় চামড়ার পোশাক পরা যায় না। কিন্তু ঠিক ভাবে স্টাইলিং করলে, বুঝেসুঝে ব্যবহার করলে লেদারওয়্যার সারা বছরই পরা যায়। অফিস ওয়্যার থেকে পার্টি ওয়্যার সব অনুষ্ঠানেই লেদার চলনসই। হাল্কা লেদারের স্কার্ট আর সাদা শার্ট পরে অফিসে যেমন যেতে পারেন, তেমনি তার সঙ্গে একটা আকর্ষণীয় নেক পিস পরে বা জুতো বদলে সেটাকেই গ্ল্যামারাস ইভনিং ওয়্যার করে তুলতে পারেন। ডিজাইনারেরা বলছেন, কলকাতার মতো আবহাওয়ায় ব্যবহার করতে পারেন হাল্কা লেদার দিয়ে তৈরি জামাকাপড়। লেদারের স্কার্ট বা লেগিংস পরলে সঙ্গে পরুন সুতির মতো হাল্কা কাপড়ের শার্ট বা টপ।
লেদারের পোশাক এমন এক সাজ যা পুরনো হোক বা নতুন, আপনি যখন তখন আলমারি থেকে বের করে পরতে পরেন। এ হল ঐতিহ্যের সংগ্রহ। কখনই পুরনো হওয়ার নয়।
লেদার স্কার্ট বা লেগিংসয়ের সঙ্গে কী পরবেন
সব রকম কাপড়ের পোশাকই চলতে পারে লেদারের সঙ্গে। প্রিন্ট এখন খুব চলেছে। লেপার্ড প্রিন্ট, স্ট্রাইপ, স্পট, পোলকা ডট —আপনার যা পছন্দ পরতে পারেন। লেদারের পোশাকের সঙ্গে যে সব রঙ খুব মানায়, তার মধ্যে রয়েছে কালো আর সাদা, প্যাস্টেল কালার, আর খুব গাঢ় রং। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের বুননকে ব্যবহার করতে পারেন লেদারের সাজে আলাদা আলাদা লুক দেওয়ার জন্য। তা ছাড়া শিফন, সিল্ক আর লেসের কাপড়ও লেদারের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যায়।
লেদারের পেন্সিল স্কার্ট সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবে ইচ্ছে করলে স্কার্টের অন্যান্য ধরনের স্টাইলও লেদারের সাজে ব্যবহার করতে পারেন। স্কার্টের সঙ্গে পরুন শিফনের ব্লাউজ। আর পাম শ্যু। লেদারের স্কার্টের সঙ্গে ক্রপ টপও পরা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে স্কার্ট হবে হাই ওয়েস্টেড।
পাম শ্যু ছাড়া বুট, স্টিলেটো এই সবও লেদারের লুকে গ্ল্যামার ছড়ায়। লেদারের লুকে স্পোর্টস জুতোও ভাল মানায়। তবে তখন সঙ্গে পরতে হবে টি শার্ট।
দিনের বেলায় লেদার সাজ
দিনের বেলায় লেদারের পোশাক পরতে হলে ছিমছাম সাজুন। বেশি স্টাইলিংয়ের দরকার নেই। একটা উজ্জ্বল রঙের হ্যান্ডব্যাগই যথেষ্ট।
বিকেলের সাজে
লেদারের স্কার্ট বা লেগিংসের সঙ্গে পরুন সেক্সি একটা টপ। সঙ্গে একটা লেপার্ড প্রিন্ট হিলের জুতো। গলায় স্টেটমেন্ট নেকলেস। হাতে একটা ছিমছাম কালো ক্লাচ।
পরামর্শ: অভিষেক দত্ত, অনিতা ডোগরে
লেদারের পোশাকের যত্ন করবেন কী ভাবে
সব সময় পরিষ্কার মসলিনের কাপড় দিয়ে লেদারের পোশাক ঢেকে রাখুন।
লেদার পোশাকে কোনও দাগ ধরলে পরিষ্কার ভেজা কাপ়ড় দিয়ে মুছে শুকোতে দিন স্বাভাবিক বাতাসে। চড়া রোদে নয়।
লেদারের পোশাকে জল লাগাবেন না। যদি জল লাগে তা হলে স্বাভাবিক আলো বাতাসে শুকোতে দিন। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকোবেন না।
বাজারে লেদার পরিষ্কার করার এক ধরনের তরল পাওয়া যায়। পরিষ্কার কাপড় ওই তরলে ভিজিয়ে যেখানে দাগ লেগেছে সেই জায়গায় হাল্কা ভাবে বুলিয়ে দিন। খুব বেশি ঘষবেন না। তাতে লেদারের রং উঠে যাবে।
লেদার ক্রিম পাওয়া যায়। এই ক্রিম ব্যবহার করলে লেদার নরম থাকে। মাঝে মাঝে লেদারের পোশাকে এই ক্রিম বুলিয়ে দিন। পোশাক টিকবেও অনেক দিন।
লেবুর রস খুব ভাল ঘরোয়া টোটকা। লেবুর রস দিয়ে লেদারের পোশাক মুছে নিলে ঔজ্জ্বল্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে।
সব সময় লেদারের পোশাক ঠান্ডা আর শুকনো জায়গায় রাখুন। যাতে ফাঙ্গাস না ধরে।
পরামর্শ সৌজন্য: ব্যান্ড বক্স