মুক্তির আগেই কলকাতায় হাউজফুল অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম

সুপারহিরোদের নিয়ে এত উন্মাদনা কেন? কারণ খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ প্লাস

Advertisement

সুপারহিরোদের নিয়ে এত উন্মাদনা কেন? কারণ খোঁজার চেষ্টা করল আনন্দ প্লাস

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
Share:

ইনফিনিটি ওয়ার

সূত্রপাত

Advertisement

সুপারহিরোদের স্বর্ণযুগ চলছে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। বিশেষ করে হলিউডের কারখানা থেকে তৈরি হওয়া সুপারহিরো। বলতে দ্বিধা নেই, ভারতের বুকেও সেই মার্কিনি সুপারহিরোরাই খ্যাতিমান। দেশীয় সুপারম্যানরা (শক্তিমান, কৃষ) সেই তুলনায় বরং অনলাইন মিমেরই খোরাক! একটা সময়ে যেখানে এক-আধটা সুপারম্যান (‘লয়েস অ্যান্ড ক্লার্ক’ ভার্সন) আর দু’-চারটে ব্যাটম্যান (ক্রিস্টোফার নোলানের নয়) ছাড়া কিছু পাওয়াই যেত না, সেখানে দর্শক ইদানীং বছর বছর অধীর অপেক্ষায় থাকেন, কবে আবার একটা বিগ স্কেল সুপারহিরোকে বড় পর্দায় দেখবেন। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ মুক্তি পাওয়ার আগে শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই সব মাল্টিপ্লেক্স সপ্তাহান্তের জন্য হাউসফুল। অ্যাডভান্সড বুকিংয়ের দরজা খুলে দিতে এক রকম বাধ্যই হয়েছেন ডিস্ট্রিবিউটররা। এই সময়ে বাংলা এমনকি, হিন্দি ছবিও রিলিজ় করার আগে দু’বার ভাবেন নির্মাতারা। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভিঞ্চিদা’ হাউসফুল হওয়া সত্ত্বেও শো কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই দিনে মুক্তি পেতে চলা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ প্রাইমটাইমে যথেষ্ট শো পাচ্ছে না।

অবশ্য এখন হলিউডের হিট সুপারহিরো বলতে শুধুমাত্র মার্ভেলের ঘরের হিরোরাই— স্পাইডারম্যান, আয়রনম্যান, থর, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, হাল্ক, ব্ল্যাক প্যান্থার ও বাকিরা। ডিসি, অর্থাৎ যাদের জিম্মায় সুপারম্যান-ব্যাটম্যানেরা ছিল, তারা এখন মার্ভেলের বিস্তীর্ণ ব্যবসার চাপে বেশ কিছুটা ঘায়েল। ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ অবশ্য হাল ধরার চেষ্টা করেছিল। তবে ডিসি-মার্ভেল দ্বন্দ্ব একেবারেই আলাদা তর্ক। বাস্তবধর্মী ছবির রমরমায় সুপারহিরোরা এত জনপ্রিয় কেন, প্রশ্ন সেটাই। শুধুই কি দুর্দান্ত গ্রাফিক্স এবং স্টোরিটেলিংয়ের চমক? নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?

Advertisement

আগ্রাসী দখল

সুপারহিরো ফ্যান হওয়ার কতগুলো স্টেপ রয়েছে আসলে। যার শুরুটা হয় কমিক্স বই দিয়ে। তার পরে আসে টিভিতে কার্টুন-অ্যানিমেশন। স্পাইডারম্যান, ফ্যান্টাস্টিক ফোর, এক্স-মেনের কার্টুন নব্বইয়ের দশক থেকেই টেলিভিশনে প্রবল জনপ্রিয় ছিল। সমানতালে তখন মার্ভেল থেকে প্রকাশ হতো কমিক্স-সমূহ। অর্থাৎ টিভিতে কার্টুন দেখে আর অবসরে কমিক্স পড়ে তখন থেকেই কচিকাঁচারা স্ট্যান লির তৈরি করা মার্ভেল ইউনিভার্সে মগ্ন। যে স্ট্যান লি মারা যাওয়ার পরে মার্ভেল তার লোগোও বদলে দেয় (‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’ ছবিতে)। তার পর থেকে যখন মার্ভেল একের পর এক ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি বানানো শুরু করল, তখন তার ফ্যানবেস কার্টুন-কমিক্সের দৌলতে ইতিমধ্যেই তৈরি! ফলে লক্ষ লক্ষ সুপারহিরো প্রেমীদের বিনোদনের আয়োজন করতে বছর বছর একটা করে নতুন ছবি বানানো কোনও বড় ব্যাপার ছিল না। তার উপরে সুপারহিরোর তো কমতি নেই। বেশির ভাগেরই এক একটা আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি রয়েছে— যেমন হাল্ক, আয়রনম্যান, স্পাইডারম্যান বা নতুন শুরু হওয়া ক্যাপ্টেন মার্ভেল। এবং এদের একত্রে নিয়ে যে অ্যাভেঞ্জারের টিম, তাদের নিয়ে আলাদা উত্তেজনা থাকবেই। অনেকটা সে রকমই ‘গার্ডিয়ান্স অব দ্য গ্যালাক্সি’ও। প্রসঙ্গটা নিয়ে পরিচালক মৈনাক ভৌমিক বললেন, ‘‘প্রতিটা সুপারহিরোর আলাদা সুপারপাওয়ার থাকে। তার উপরে নির্ভর করে, ভক্তরা কাকে নিজের ফেভারিট বানাবেন। কারও হয়তো ব্ল্যাক প্যান্থার পছন্দ। কেউ পছন্দ করেন আয়রনম্যানকে। তার সঙ্গে চোখ ধাঁধানো ভিস্যুয়াল এফেক্ট, ব্রিলিয়ান্ট সেট ডিজ়াইন তো আছেই।’’

এই আগ্রাসী বাজারনীতির পিছনে স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনীতি একটা প্রাসঙ্গিক বিষয়। স্টুডিয়োগুলোর ৭০ শতাংশ লাভ কিন্তু আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকেই আসে। সেখানে ভারতের মতো জনবহুল দেশ তো রয়েছেই। তার সঙ্গে জাপান, রাশিয়া, হাঙ্গেরিও আছে। ডিসি-র সুপারহিরো ব্যাটম্যানকে নিয়ে ক্রিস্টোফার নোলানের ডার্ক নাইট ট্রিলজির শেষ দুটো ছবি গোটা দুনিয়ায় ব্যবসা করেছিল এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু শুধু কি ছবি? এখন ডিজিটাল দুনিয়ার রমরমা। নেটফ্লিক্স আর অনলাইনে গ্রাফিক নভেলের যে পরিমাণ বিক্রি, তা অকল্পনীয়। দেখা গিয়েছে, অনলাইন ডাউনলোডিংয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয়রাই সর্বাধিক এগিয়ে।

কেন জনপ্রিয়?

এই প্রজন্মের অভিনেতা উজান গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শুধু যদি কলকাতার কথা ভাবি, তা হলে এখানে যে সবাই শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তা নয়। ইংলিশ স্পিকিং পপুলেশন কিন্তু যথেষ্ট এখানে। তা ছাড়া জনসংখ্যার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই ভিউয়ারশিপ অনেকটা বেশি এ দেশে। আর গ্লোবাল মার্কেটে ভারতীয় দর্শকের প্রেজ়েন্স কিন্তু সাংঘাতিক।’’ উজান আরও বললেন, আন্তর্জাতিক মানের যেমন গ্রাফিক্স হয় এ সব ছবির, তার চেয়ে দেশজ গ্রাফিক্স যোজন যোজন পিছিয়ে— ‘‘কনভিন্সিং না হলে কিন্তু এ যুগের দর্শক দেখবেন না। তা ছাড়া এখনকার সুপারহিরো চরিত্রগুলোও এমন যে, দর্শক তাদের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারেন।’’

আর একটি প্রসঙ্গও রয়েছে। গোটা দুনিয়া জুড়ে নাশকতা, সন্ত্রাস, হিংসা, মৃত্যু প্রতিনিয়ত সীমা ছাড়াচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু দুর্ধর্ষ ক্ষমতাসম্পন্ন অতিমানব যদি নশ্বর মানুষকে অন্তত কল্পনাতেও রক্ষা করতে দলবদ্ধ হয়, তাদের কি একেবারে অগ্রাহ্য করা যায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন