tollywood

প্রম্পটার থেকে অভিনেতা, ‘মছলিবাবা’ মনুর আসল নামটাই অনেকের অজানা

মনু মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই গোত্রের চরিত্রাভিনেতা, যাঁরা পর্দায় থাকলে নায়ক-নায়িকাদের থেকে নজর চলে যেত তাঁদের দিকেই। মূল স্রোতের বাণিজ্যিক ছবি হোক বা সমান্তরাল ধারার কাজ, সমকালীন সেরা পরিচালকদের পছন্দ ছিলেন তিনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:২১
Share:
০১ ২২

অভিনয়জীবন শুরু নারীচরিত্রে রূপদান করে। পেশাদারি থিয়েটার মঞ্চে প্রবেশ প্রম্পটার হিসেবে। তারকার গ্ল্যামার নয়। আজীবন দায়বদ্ধ ছিলেন অভিনয়ের প্রতি। পর্দায় মনু মুখোপাধ্যায়ের সহজ সাবলীল অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রের সম্পদ।

০২ ২২

সাবেক কলকাতার থিয়েটার অভিনেতা অমরেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে সৌরেন্দ্রমোহনের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ মার্চ।

Advertisement
০৩ ২২

পরে রঙ্গমঞ্চের জগতে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁর পোশাকি নাম। তিনি পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায় পরিচয়েই।

০৪ ২২

বাবার থেকেই পেয়েছিলেন অভিনয়ের ধারা। পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছেন প্রমীলা চরিত্রে। অভিনয়ের প্রাথমিক দিনগুলি কাটিয়ে ১৯৫৭ সালে মনু যোগ দেন ‘শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে’, প্রম্পটার হিসেবে। পরে ‘শ্রীরঙ্গম থিয়েটার’ নাম পরিবর্তন করে পরিচিত হয় ‘বিশ্বরূপা’ হিসাবে।

০৫ ২২

রাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজ থেকে আই এ পাশ করার পরে অভিনয়ই হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান। ছয়ের দশকের শেষ দিক থেকে কলকাতার থিয়েটার মহলে প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন হয়ে ওঠেন মনু।

০৬ ২২

‘সারকারিনা’, ‘সুজাতা সদন’, ‘মিনার্ভা’, ‘বিশ্বনাথ মঞ্চ’, ‘রংমহল’, ‘স্টার থিয়েটার-সহ অতীত কলকাতার নামী মঞ্চগুলি সরগরম ছিল তাঁর অভিনয়ে। পরে অবশ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা পরিচয়ের আড়ালে কিছুটা হলেও ঢাকা পড়েছিল তাঁর মঞ্চাভিনেতার জীবন।

০৭ ২২

বাংলা নাটকের মঞ্চে অসংখ্য চরিত্রে প্রাণসঞ্চার করেছে তাঁর অভিনয়। তবে মঞ্চে আত্মপ্রকাশ কিন্তু পরিবর্ত হিসেবে। ‘ক্ষুধা’ নাটকে কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়।

০৮ ২২

বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হয়েছিল অবশ্য কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহশিল্পী হিসেবেই। ১৯৫৮ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবিতে।

০৯ ২২

এর পর ‘উত্তরায়ণ’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘নায়িকার ভূমিকায়’, ‘মর্জিনা আবদুল্লাহ’, ‘সোনার খাঁচা’-সহ বিভিন্ন ছবির অন্যতম অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় প্রথম অভিনয় ১৯৭১ সালে, ‘অশনি সঙ্কেত’ ছবিতে।

১০ ২২

মনু মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেই গোত্রের চরিত্রাভিনেতা, যাঁরা পর্দায় থাকলে নায়ক-নায়িকাদের থেকে নজর চলে যেত তাঁদের দিকেই। মূল স্রোতের বাণিজ্যিক ছবি হোক বা সমান্তরাল ধারার কাজ, সমকালীন সেরা পরিচালকদের পছন্দ ছিলেন তিনি।

১১ ২২

তাঁর সহজাত সাবলীল অভিনয় মূলধন হয়ে রয়েছে ‘ফুলেশ্বরী’, ‘মৃগয়া’, ‘গণদেবতা’, ‘দাদার কীর্তি’-সহ মনু মুখোপাধ্যায় অভিনীত বাকি ছবিগুলিতেও।

১২ ২২

তবে কয়েক দশক ধরে তাঁর দীর্ঘ অভিনয়জীবন বিস্তৃত হলেও দর্শকদের কাছে তিনি হয়ে রয়েছেন ‘মছলিবাবা’। ১৯৭৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ ভণ্ড সাধু মছলিবাবারূপী মনুর মুখে সংলাপ বিশেষ ছিল না। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি যেন মিলেমিশে গিয়েছিল কাশীর ঘাটের আবহে।

১৩ ২২

মছলিবাবার ছদ্মবেশ ছেড়ে হাতে এরোপ্লেনের উল্কি-সমেত গঙ্গার ঘাট থেকে স্নান করে নিজের ডেরায় একমনে তাঁর প্রাতরাশ সারা এবং আবর্জনার আড়ালে ফেলুদার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা—‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ এই সিকোয়েন্স ফেলুভক্তদের কাছে চিরনতুন।

১৪ ২২

তাঁর বাকি ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম ‘সাহেব’, ‘মেঘমুক্তি’, ‘খেলার পুতুল’, ‘ইমন কল্যাণ’, ‘গণশত্রু’, ‘দামু’ এবং ‘কাচের পৃথিবী’।

১৫ ২২

জয় বাবা ফেলুনাথ-এর ‘মছলিবাবা’ এবং ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর ‘ড্রিলস্যর’-এর চরিত্র ছাপিয়ে আর যে চরিত্র একাত্ম হয়ে যায় মনু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে, তা হল ‘পাতালঘর’-এর ‘অপয়া গোবিন্দ বিশ্বাস’।

১৬ ২২

অভিজিৎ চৌধুরীর পরিচালনায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অনুসারে ‘পাতালঘর’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। ছবিতে মনু মুখোপাধ্যায়ের উপর চিত্রায়িত স্বপন বসুর কণ্ঠে ‘তুমি কাশী যেতে পারো/ যেতে পারো গয়া/ পাবে না এমন দ্বিতীয় অপয়া’ গানটি মন কেড়েছিল দর্শক-শ্রোতাদের।

১৭ ২২

পরের প্রজন্মের অভিনেতাদের সঙ্গেও সমান তালে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছরে ‘হলুদ পাখির ডানা’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘গয়নার বাক্স’, ‘আলিগরের গোলকধাঁধাঁ’ ছবিতে বাজিমাত করেছে তাঁর অভিনয়।

১৮ ২২

২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সায়ন্তন ঘোষালের ছবি ‘আলিনগরের গোলকধাঁধাঁ’-য় তাঁর অভিনয় দর্শকদের কাছে ফিরিয়ে এনেছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর নস্টালজিয়া। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজেও।

১৯ ২২

দূরদর্শনের ধারাবাহিকেও তাঁর অভিনয় ছিল সম্পদ। গত কয়েক বছরে তিনি অভিনয় করেছেন ‘বয়েই গেল’ এবং ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’ সিরিয়ালে।

২০ ২২

তবে ছোট পর্দায় মনু মুখোপাধ্যায়ের সেরা অভিনয় ফ্রেমবন্দি হয়েছিল কলকাতা দূরদর্শনের সিরিয়াল ‘পৌষ ফাগুনের পালা’-য়। পাশাপাশি, দর্শকদের মনের মণিকোঠায় এখনও উজ্জ্বল ‘নোনা স্বাদ’ টেলিফিল্মে তাঁর অভিনয়।

২১ ২২

অনুরাগী এবং চলচ্চিত্র সমালোচকরা মনে করেন, টালিগঞ্জের বহু শিল্পীর প্রতিভার যথাযথ ব্যবহার ও কদর হয়নি। তাঁরা রয়ে গিয়েছেন অনাদৃত হয়েই। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মনু মুখোপাধ্যায়।

২২ ২২

দীর্ঘ অসুস্থতার পরে গত ৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন নবতিপর মনু মুখোপাধ্যায়। বাংলা অভিনয় জগতকে আরও একটু জীর্ণ করে বিদায় নিলেন জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে। রেখে গেলেন তাঁর অমলিন অভিনয়। ‘পাতালঘর’ ছবিরই আর একটি জনপ্রিয় গান ধার করে তাঁর সম্বন্ধে বলতে হয় ‘যে কোনও ভূমিকায় সমানে লড়ে যাই/ আপনি যা চান, আমি ঠিক তাই।’ (ছবি : আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement