‘বিজয়া’তে শুরু থেকেই গণেশ মণ্ডল যেন বড্ড বেশী ম্যাড়ম্যাড়ে, নেতিয়ে পড়া সরলরৈখিক একটি মানুষ।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, যতদূর জানি এটিই আপনার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিক্যুয়েল ছবি। সিক্যুয়েলের ঝুঁকি বিষয়ে আপনি নিশ্চিত অবগত। দর্শকের স্বাভাবিক প্রবণতা বলে, ভালোমন্দ যাই হোক “আগেরটির মত নয়”। সেই কারণে সিক্যুয়েলের বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে একটা দোলাচল থেকেই যায়। যদিও গোটা পৃথিবী জুড়ে সফল ফ্রাঞ্চাইজি ছবির উদাহরণও ভুরিভুরি। এই সমস্তটা জেনেবুঝেও আপনি যে ‘বিসর্জনে’র মত একটি বাণিজ্য সফল ছবির সিক্যুয়েল বানানোর ঝুঁকি নিলেন সে জন্য প্রথমেই আপনাকে সাধুবাদ।
‘বিসর্জনে’ পর্যাপ্ত পরিমাণ মেলোড্রামা ছিল। তবে আমার কাছে সে ছবি থেকে এক এবং চরমতম প্রাপ্তি গণেশ মণ্ডল। তার চারিত্রিক গঠন, তার উপস্থিতি, মনোদ্বন্দ্ব এবং সর্বোপরি আপনার অনবদ্য অভিনয় গণেশ মণ্ডলের প্রেমে ফেলেছিল। তাই ‘বিজয়া’তেও আমার যাবতীয় আকর্ষণ, উদ্বেগ, চিন্তা— যাই বলুন না কেন সবটাই ছিল গণেশ মণ্ডলকে ঘিরে।
কিন্তু ‘বিজয়া’তে শুরু থেকেই গণেশ মণ্ডল যেন বড্ড বেশী ম্যাড়ম্যাড়ে, নেতিয়ে পড়া সরলরৈখিক একটি মানুষ। কোথায় গেল তার চরিত্রের সেই ধার? কোথায় তার সেই চূড়ান্ত অননুমানযোগ্যতা ? তবে কি বিয়ের পর গণেশ মণ্ডল আর পাঁচ জনের মত সাদামাটা হয়ে গেল? ভয় হচ্ছিল! বিশ্বাস করুন খুব ভয় হচ্ছিল! শেষের চমকটাই বাজি মেরে দিলো! মুহূর্তে খুঁজে পেলাম সেই মানুষটাকে। সেই এক চাহনি! সেই এক ঠোঁটের গোড়ায় লেগে থাকা বাঁকা হাসি। ভরসা ফিরলো আপনার প্রতি। একটাই রিকোয়েস্ট, প্লিজ গণেশ মণ্ডলকে মারবেন না!
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ জোজো’: রাজ চক্রবর্তী নিরাশ করেননি
আমি চিরকাল আপনার অভিনয়ের গুণমুগ্ধ। ‘বিজয়াতে’ও সেই মুগ্ধতার রেশ অব্যাহত। ওই যেখানে কলকাতায় এসে সদ্য লজে উঠেছে আপনার গণেশ মন্ডল। লাউ পদ্মাকে সামান্য উল্টোসিধে কি একটা বলায় গণেশ মণ্ডল তেড়েফুঁড়ে উঠলেন। ছুড়ে ফেললেন খাবারসমেত বাটি! উফ! কি অনবদ্য অভিনয়। কিংবা যেখানে শারীরিক অবনতির কথা জেনে অক্সিজেন মাস্ক পরে নির্লিপ্তভাবে শয্যা নেয় গণেশ মণ্ডল! মন ছুঁয়ে যায়। কৌশিক গাঙ্গুলি আপনি অভিনয়টা চালিয়ে যান। আরও বেশি মাত্রায়। না এটা কোন উপদেশ নয়! আপনি একজন আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা। আপনি অভিনয়ে মন দিলে আমাদের আরও প্রাপ্তিযোগ ঘটবে।
গণেশ মণ্ডলকে মেরে ফেলবেন না!
তবে কি বলুন তো, ওই ‘কালীঘাটের মা’ সবার! সব ধর্মের টাইপ প্যাচপ্যাচ বহু ব্যবহারে জীর্ণ বিষয়পত্তর বোধহয় না রাখলেই পারতেন! ওসব তেমন পছন্দ হল না!
পদ্মার পারে ক্যামেরা বসাতে আপনি যে ওস্তাদ তা আর বলতে! জয়া’য় ব্যক্তিত্বময় সৌন্দর্য ‘বিজয়া’তেও আপনার ক্যামেরার লেন্স থেকে ঠিকরে বেরিয়েছি। তবে হ্যাঁ আবির চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি আপনার বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন বলেই বোধকরি। ছবির গান মন ভরিয়েছে।
দেখুন গোটা চিঠিতে আমি কিন্তু কোথাও ‘বিজয়া’র কাহিনি এতটুকু ফাঁস করিনি! জানবেন ও অভ্যেস আমার নেই!
আরও পড়ুন, ‘সিম্বা’-র হাত ধরে বিয়ের পর দর্শকদেরই পাল্টা উপহার রণবীরের
নতুন বছর আপনার ভাল কাটুক। আরও ভাল ছবি বানান। শুভেচ্ছা থাকল।
আর ওই যে বললাম। মনে থাকে যেন। গণেশ মণ্ডলকে মেরে ফেলবেন না!
প্লিজ!
(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)