Entertainment news

দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বর্ণপরিচয়

চরিত্রের প্রতি তাঁর আরও একটু মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল বোধহয়।

Advertisement

বুবুন চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ১১:১৬
Share:

ছবির একটি দৃশ্য।

ইদানীং সিনেমা এবং সাহিত্যে ক্রাইম থ্রিলারের প্রবল একটি ঝোঁক এসেছে। মৈনাক ভৌমিকের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বর্ণপরিচয়’ ও সেই জঁনারের ছবি। এই ছবিতে তুখোড় পুলিশ অফিসার ধনঞ্জয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত এবং অপরাধী অর্ক ভট্টাচার্যের ভূমিকায় অভিনয় করেছন আবীর। ছবির প্রতিটি দৃশ্যে যিশু এবং আবীর নিজেদের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। তবু যিশু সেনগুপ্তর অভিনয় দিনকে দিন যেন গভীর আলো ছড়াচ্ছে দর্শকের মধ্যে। যিশু ওরফে ধনঞ্জয়ের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রিয়ঙ্কা সরকার। ছোট্ট গোগোলের মা মালিনীর চরিত্রে অনেক সুক্ষ্মদর্শীতার সুযোগ থাকলেও প্রিয়ঙ্কা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেননি। চরিত্রের প্রতি তাঁর আরও একটু মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল বোধহয়।

Advertisement

একটি বিমা কোম্পানিতে কাজ করতেন অর্কর স্ত্রী স্নেহা। সেই মালিকের বীভৎস ষড়যন্ত্রে কোম্পানির সমস্ত কর্মী আগুনে পুড়ে মারা যান। গর্ভবতী স্নেহার এই অমানবিক মৃত্যুতে অর্ক ওরফে আবীরের মধ্যে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। এই চরম গণহত্যার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, প্রত্যেককে অভিনব পদ্ধতিতে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন অর্ক ভট্টাচার্য। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অর্কর জীবিকা এবং পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে দর্শককে আগে জানাননি পরিচালক, তা হলে সাসপেন্সটি মাঠে মারা যেত। অর্ক কার্যত দুঁদে পুলিশ অফিসার ধনঞ্জয়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তাঁকে ধরবার জন্য। এমনকি ফোন করে তাঁর পরবর্তী শিকারের সম্পর্কে ক্লু-ও দেন। কিন্তু মদ্যপ ধনঞ্জয় বারবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার অছিলায় তা ধরতে পারেন না। এর ফলে মদ্যপান এবং ডিপ্রেশন দুই-ই তাকে কার্যত গৃহবন্দি করে ফেলে। এই সময় জীবনের কোনও ম্যাজিকে একমাত্র সন্তান গোগোলের জন্য আবার জীবনের দিকে ফিরে তাকান ধনঞ্জয়। ছোট্ট গোগোলের ভূমিকায় দীপ্র সেন চমৎকার। একটি শিশুর চরিত্রে যতটুকু সারল্য দরকার, পরিচালক সেটি তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন। গোগোলের দিদুনের ভূমিকায় মিঠু চক্রবর্তীও অনায়াস, স্বচ্ছন্দ অভিনয় করেছেন। তবে মদ্যপ ধনঞ্জয়ের ভূমিকায় যিশু এবং তাঁর প্রেক্ষিত কয়েক বছর আগে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘২২শে শ্রাবণ’ ছবির নায়ক পুলিশ অফিসার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ে। দু’টি চরিত্রের মধ্যে অনেক আলো- অন্ধকারই এক রকম লাগে।

ধনঞ্জয়ের বস কর্মকারকে পুলিশ অফিসার হিসেবে খুব মানিয়েছে। কিন্তু অভিনয়টা কেমন বিজ্ঞাপনের মতো মনে হল। এতো স্টাইলাইজড অভিনয়ে প্রাণ থাকে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: কেউ ৫ লক্ষ তো কেউ ১৮ কোটি! স্রেফ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে এই ভারতীয় সেলেবরা কত আয় করেন জানেন?

শেষ দৃশ্যে বহুতলের ছাঁদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আবীরের হাত নাড়াটা বেশ হাস্যকর, যতই জয়ের আনন্দ হোক। আর লাং ক্যানসারের রোগী অর্কর কথা বলতে বলতে কাশি এবং রক্তপাত সত্ত্বেও তাঁর চেহারায় অসুস্থতার কোনও ছাপ নেই। দর্শক কোনও আঁচও পান না।

আরও পড়ুন: থ্রিলারে পরিচালকের পরিচয় নেই

এই ছবিতে কে খুনী, দর্শককে প্রথম থেকেই বলে দেওয়া হয়। কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধর ধনঞ্জয় ওরফে যিশু সেনগুপ্ত এবং তাঁর তামাম পুলিশ দফতর জানে না কে অপরাধী। এখানে পরিচালক মৈনাক ভৌমিক অপরাধীকে ধরতে না পারার কৌশলটির মধ্যেই সাসপেন্স রেখেছেন। ক্রাইম থ্রিলারের ক্ষেত্রে এই সমীকরণটর মধ্যে নতুনত্ব আছে।

অনুপম রায়ের সুর ভাল। সিনেমাট্রোগ্রাফি ও কাহিনির প্রয়োজনে যথাযথ। ঘণ্টা দু’য়েকের বিনোদন হিসেবে খারাপ নয়। তবে আর একটু স্বল্পদৈর্ঘ্যর হলে ভাল হত।

বর্ণপরিচয়: অভিনয়ে আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, প্রিয়ঙ্কা সরকার।

পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন