Nirantar

আজও ইন্ডাস্ট্রির চর্চার কেন্দ্রে কেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জানিয়ে দিল ‘নিরন্তর’

প্রথম ছবির ভুল-ত্রুটিও রয়েছে অবশ্যই। তবে সব কিছুকে ছায়া দিয়েছেন যেন প্রসেনজিৎ। বিপ্লব সেনের ভূমিকায় পরিণত, প্রাপ্তমনস্ক এই অভিনেতা সূক্ষ্ম ভাবনাকে সূক্ষ্মতর যত্নের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১৫:৫৯
Share:

প্রসেনজিৎ বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলা হয়।

ছবি: নিরন্তর

Advertisement

অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সত্যম ভট্টাচার্য, অঙ্কিতা মাঝি প্রমুখ

পরিচালনা: চন্দ্রাশিস রায়

Advertisement

তিনিই তো ইন্ডাস্ট্রি! এ নিয়ে রসিকতা, মিম নতুন নয়। অতি পরিচিত মশকরা ধীরে ধীরে নিয়েছে অভিযোগের আকারও। টলিপাড়ায় চলেছে হইচই। রাগ, ক্ষোভ, অভিমানের তপ্ত আদানপ্রদানের মাঝেই এসেছে ‘নিরন্তর’। মুখ্য ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নিজেই।তবে এক-এক জন অভিনেতা কেন তারকা হয়ে ওঠেন? এবং একগুচ্ছ তারকার মাঝে কেন এক জনকেই ইন্ডাস্ট্রির তকমা দেওয়া হয়? কেন দিনের পর দিন এক জনই থেকে যান অলোচনার কেন্দ্রে? নতুন করে ভাবতে বাধ্য করল তাঁর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলা ছবি ‘নিরন্তর’।

ছোটবেলায় পাওয়া শিক্ষা বলেছিল, নিজের কাজের জায়গাটি মন দিয়ে বুঝতে। তাতে প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। কখনও কোনও কাজের একাংশও যেন কম গুরুত্ব না পায়। ভুলতে বসা সব ক’টি উপদেশ মনে করাবে ‘নিরন্তর’। বারবার কাজের প্রতি যত্ন ভেসে উঠবে ‘ইন্ডাস্ট্রি’র চেষ্টায়। এক জন তারকা যখন নিজেকে ভেঙেচুরে ভিতরের অভিনেতাকে সমাজের ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা হাজার ব্যক্তির এক জন করে তোলেন, তা অবশ্যই দেখার। উপভোগ করার। তবে কেন তিনি এতটা পরিশ্রম করেনএখনও, তা ভাববারও! এমনি কেউ কেন্দ্রে থাকতে পারেন না। এ সমাজ এত সময় দেয় না অহেতুক।

আরও পড়ুন: মেন্টর মহেশ ভট্টের সঙ্গে অশান্তি, এক সময় ১০ কোটি পারিশ্রমিক পেতেন পরিচালক হতে চাওয়া ‘সিরিয়াল কিসার’

নিরন্তর’-এর বিষয়টি নতুন নয়। পাওয়া-না পাওয়া, ভাললাগা-মন্দ লাগা সব নিয়ে বয়ে চলা মানুষের গল্প। মানসিক রোগে দুর্বল হয়ে পড়ার পাশে থাকার লড়াইয়ের গল্প। রোজের বোঝাপড়ার গল্প। শুনলে মনে হবে এ আর এমন কী? এ তো রোজ দেখা যায় রুপোলি পর্দায়। কিন্তু যা নিত্য, তাইতো বেশি কঠিন। সেই দৈনন্দিনকে নিজের করে ধরে রাখতেই তো প্রয়োজন নেতৃত্বের। এই দুর্যোগের সময়ে যেমন সকল সন্তানকে নিজের সব ক্ষমতা দিয়ে আগলে রাখছেন বাড়ির বড়রা। ‘নিরন্তর’ যেন তেমনই। অনেক কম চেনা মুখের মধ্যে একা, এক জন ধরে রাখেন ঘটনাপ্রবাহ। চোখ আটকে রাখেন নিজের দিকে।সেই একজন! পরিচালক চন্দ্রাশিস রায়ের এটি প্রথম ছবি। চলচ্চিত্র জগতে সহকারী পরিচালকের অভিজ্ঞতা যতই থাক না কেন, সময় তো লাগবেই নতুন পিচে নিজের জায়গা তৈরি করতে।

প্রথম ছবির ভুল-ত্রুটিও রয়েছে অবশ্যই। তবে সব কিছুকে ছায়া দিয়েছেন যেন প্রসেনজিৎ। বিপ্লব সেনের ভূমিকায় পরিণত, প্রাপ্তমনস্ক এই অভিনেতা সূক্ষ্ম ভাবনাকে সূক্ষ্মতর যত্নের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া ‘নিরন্তর’-এ আর কি তবে কিছুই দেখার নেই?এ কথা বললে অন্যায় হবে। প্রসেনজিতের সামনে টানা অভিনয় করে যাওয়া সহজ নয় কোনও নবাগতর পক্ষে। ভাস্করের ভূমিকায় সত্যম ভট্টাচার্য সেই সাহস দেখিয়েছেন। নিজের দিকে সময়ে সময়ে চোখ টেনে নিয়েছেন। এমন সিনিয়র অভিনেতার উল্টো দিকে প্রেমিকা বা স্ত্রীর ভূমিকায় কোনও অভিনেত্রীর কাজের সঙ্গে সত্যমের দায়িত্বের তুলনা চলে না। নারী চরিত্র নিজ নিয়মে নায়কের কাছ থেকে গুরুত্বআদায় করে থাকে। সে দাবি স্ক্রিপ্টেরও থাকে। ভাস্করের চরিত্র স্ক্রিপ্টেও গুরুত্ব অর্জন করার দায়িত্ব পেয়েছিল। ফলে সত্যমের কাজটা নেহাত সহজ ছিল না। এরই পাশাপাশি অঙ্কিতা মাঝির অভিনয়ও চোখ টানে।

আরও পড়ুন: চিনা অ্যাপ টিকটককে বিদায় দিয়ে দুই তারকা সাংসদ মিমি-নুসরত কী বললেন?

তা ছাড়া, এ ছবি অতি ধীর গতির। তাতে মন আটকে না থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অনেকেই হয়তো বিরক্ত হতেন এই চলনে। তবে হতে দেননি সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার। বরং গতির সুবিধে নিয়ে প্রাণ ভরে সবুজ পাহাড় দেখিয়েছেন তিনি গৃহবন্দি দর্শকদের।‘নিরন্তর’ সে দিক থেকে এক দমকা খোলা হাওয়া যেন।পূর্ব হিমালয় অনেক দিন পরে আবার এ ভাবে ধরা পড়ল বাংলা ছবিতে। তবু কিছু প্রশ্ন নাকরে উপায় নেই। ছবির শেষে জানতে ইচ্ছে করে, এ গল্প বলার কারণ। ইচ্ছে করে কিছু কিছু চরিত্র অপ্রয়োজনীয় জেনেও, নিয়ে আসার উদ্দেশ্য।আর একটু কম সময়ে, কয়েকটি কম চরিত্র দেখিয়ে এ গল্প শেষ করলেকি অন্য রকম হত? প্রশ্নগুলো রাখা রইল দর্শকের জন্য। পরিচালক এবং প্রযোজকের ম‌নে নিশ্চয়ই এর কোনও ব্যাখ্যা আছে। তা জেনে নেওয়ার ইচ্ছেটাও রয়ে গেল। আর রইল চন্দ্রাশিসের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। প্রথম ছবির এমন বিষয় ভাবা সহজ কাজ নয়। এ কথা তো তাঁর অজানা ছিল না যে, ‘নিরন্তর’ সব ধরনের দর্শকের মন টানবে না। সঙ্গে তিনি সাহস করেছেন টেলিভিশনে প্রথম ছবির প্রিমিয়ার করতেও। এই সাহস তাঁকে বহু দূর নিয়ে যাক। আরও পরিণত কাজের অপেক্ষায় থাকার আশ্বাস ‘নিরন্তর’ দিতে সফল হয়েছে বইকি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন