Entertainment News

কোন কারণে ‘ব্রাত্য’ সহজ পাঠের গপ্পো?

অগত্যা! প্রকৃতির কোলে, নরম ঘাসে, বনে-বাদাড়ে— ঠিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখণীর মতো দুই বন্ধুর গল্প অজানাই থেকে গেল বহু বাংলা ছবিপ্রেমীর কাছে। ‘সহজ পাঠের গপ্পো’টা কেমন করে যেন বড্ড কঠিন হয়ে গেল...

Advertisement

রাইমা চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৪:৫৭
Share:

‘সহজ পাঠের গপ্পো’র দুই খুদে তারকা। বাঁদিকে নুর ইসলাম এবং ডানদিকে সামিউল আলম। ছবি: মানস মুকুল পালের সৌজন্যে।

শৈশবের গল্প। গ্রামবাংলার গল্প। ভালবাসার গল্প। পার্বণের গল্প। প্রতীক্ষার গল্প। বেঁচে থাকার গল্প। জীবনের গল্প। এ সব নিয়েই ‘সহজ পাঠের গপ্পো’।

Advertisement

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী’ গল্প নিয়ে প্রথম সিনেমা তৈরি করেছেন বারাসতের মানস মুকুল পাল। প্রযোজক তাঁরই বন্ধু অভিজিৎ সাহা। গত ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে বাংলা এই ছবি। ছবিটি জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ভেঙে দিয়েছে সব রেকর্ড। বিশ্ব দরবারে আরও এক বার উজ্জ্বল করেছে বাংলার মুখ। ছবির দুই শিশু অভিনেতা নুর ইসলাম আর সামিউল আলম বাংলাকে একসঙ্গে এনে দিয়েছে জোড়া পদক।

ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপে ছবিটি নিয়ে বেশ চর্চা চলছে। বার বার একটা কথাই ঘুরেফিরে আসছে, ‘ছবিটা ভাল হয়েছে’! পুজোর মরসুমে গ্রাম বাংলার গন্ধমাখা এমন ছবি বাংলা ছবির দর্শকরা হাতছাড়া করতে চাইবেন না এমনটাই স্বাভাবিক। আর তাই সোশ্যাল দুনিয়ায় প্রশ্ন ঘুরছে, ‘ছবিটি আপনি দেখেছেন?’, ‘কোন কোন হলে চলছে বলতে পারবেন?’ কিন্তু, জবাব কোথায়? আসলে শহর এবং শহরতলি জুড়ে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি স্ক্রিনেই শো চলছে ‘সহজ পাঠের গপ্পো’র। তা-ও আপনার সময়ের সঙ্গে যে খুব একটা মিলবে, এমন নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন, কপিল যুগের অবসান? নতুন শো নিয়ে আসছেন সুনীল গ্রোভার?

বাঙালির যে অংশ ‘নন্দনে এলেই দেখতে যাব’ মার্কা ভাবনায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা জাস্ট বোকা বনে গিয়েছেন। আসলে নন্দনে ছবিটি আসেইনি। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি ওই হলে তো আপামর মানুষকে কম পয়সায় ভাল ছবি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার কথা, সেখানে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া একটি ছবি দেখানো হল না কেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে বোঝা গেল, কোথাও একটা বড় গোল বেধে রয়েছে! কেউ বলছেন, ‘চেনা দাদাগিরি’। কেউ আবার দিচ্ছেন ‘নিয়তি’র দোহাই।

পরিচালক মানস মুকুল পালের সোজা কথা, ‘‘ছবি মুক্তির এক মাস আগে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। নন্দনের অধিকর্তা যাদব মণ্ডলের সঙ্গে কথাও হয়েছিল। পরে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, স্ক্রিনিং কমিটির মতে ছবির মান অতটা উন্নত নয়, স্লটও খালি নেই।’’ পরিচালকের আরও অভিযোগ, জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ছবি কেন দেখানো হবে না জানতে চাওয়ায়, নন্দনের অধিকর্তা বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।’’ মানস বলছেন, ‘‘শেষে নন্দন অধিকর্তা আমাকে বলেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে নন্দন টু-তে ছবিটি দেখানো যেতে পারে। কিন্তু সেটাকে কেমন যেন অনুগ্রহ মনে হল!’’ নন্দন টু-তে ছবি দেখাতে যে তিনি রাজি নন, সে কথা নন্দন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক।

‘সহজ পাঠের গপ্পো’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

পরিচালকের এ সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন নন্দনের অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছবি দেখে স্ক্রিনিং কমিটি নন্দন টু সাজেস্ট করেছিল। পরিচালক ওখানে ছবি দেখাতে রাজি হননি। ছবির মান নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।’’

কোন পক্ষ ঠিক, আর কোন পক্ষই বা ভুল, জানা সম্ভব নয়! তবে, এ সবের চক্করে পড়ে একটা ভাল ছবি নন্দনের মতো হলে দেখার সুযোগ পেলেন না দর্শকরা। এ প্রসঙ্গে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘শুধু নতুন প্রযোজক কেন, অনেক বিখ্যাত প্রযোজকের ছবিও স্লটের অভাবে নন্দনে দেখানো সম্ভব হয় না। কয়েক দিন আগে ‘মাছের ঝোল’ও তো নন্দন টু-তেই দেখানো হল। আসলে কোনও কিছু না পেলে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়।’’

বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মত অবশ্য ভিন্ন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘আমার ছবি ‘নাটকের মতো’র সময়েও এমনটা হয়েছিল। আসলে নন্দন এখন আর চলচ্চিত্র উৎকর্ষ কেন্দ্র নেই। সরকারের অবিলম্বে এটা দেখা প্রয়োজন। নতুন পরিচালকদের কথা কে ভাববে?’’

আরও পড়ুন, এমিজ-এর মঞ্চে প্রিয়ঙ্কার পদবীর ভুল উচ্চারণ, সঞ্চালককে হোমওয়ার্ক করালেন নেটিজেনরা

নুর ইসলাম এবং সামিউল আলম কি এ সব বুঝবে? তাদে‌র অভিনয় জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফিল্মোৎসবেও নজর কেড়েছে। নিউ ইয়র্ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস-এর মতো নামী ফেস্টিভ্যালে তাদের সহজ পাঠ হয়েছে সমাদৃত হয়েছে। ছবির সাফল্য এক কথায় আকাশছোঁয়া। কিন্তু, ঘরের মানুষের কাছে তারা অদেখা থেকে গেল!

সব মিলিয়ে পুজোর মাসে এমন একটি ছবি হাতের কাছে এসেও, কেমন যেন হাত ফসকে বেরিয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে বাঙালি দর্শকের। অগত্যা! প্রকৃতির কোলে, নরম ঘাসে, বনে-বাদাড়ে— ঠিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখণীর মতো দুই বন্ধুর গল্প অজানাই থেকে গেল বহু বাংলা ছবিপ্রেমীর কাছে।

‘সহজ পাঠের গপ্পো’টা কেমন করে যেন বড্ড কঠিন হয়ে গেল...

দেখুন ভিডিও...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন