গোটা দুনিয়াই এখন প্রযুক্তির মুঠোয়। অ্যাপের মাধ্যমে কত কী হচ্ছে! সিনেমার টিকিট বুকিং, খাবার অর্ডার দেওয়া, শপিং, সবেতেই অ্যাপ। এবার অ্যাপ দিয়েই নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করে ফেলুন। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বদলে ফেলুন পোশাকের রং, শেপ। তৈরি করুন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট। হলিউড মুভি ‘ট্রন’-এর কথা মনে আছে? ভাবছেন ফ্যাশনের কথা বলতে গিয়ে শুরুতেই কেন হলিউডে চলে গেলাম। আসলে হলি নায়িকাদের ওই ফ্যাশন (অপটিক্যাল ফাইবার টেক্সটাইল) ভারতে আসতে আর খুব বেশি দেরি নেই।
• অপটিক্যাল ফাইবার টেক্সটাইল
এতদিন শুধু গর্জাস ড্রেস পরেছেন। বা তার সঙ্গে হেভি জুয়েলারি। ভিন্টেজ বা সেক্সি লুকে আপনি হয়ে উঠছেন রাত পার্টির মধ্যমণি। এবার ফ্যাশনে ইন অপটিক্যাল ফাইবার টেক্সটাইল। খুব সহজ করে বললে পোশাক থেকে এবার আলো ঠিকরে বেরোবে। বা ধরুন গোটা পোশাকজুড়েই থাকবে হালকা আলোর আভা। অ্যাপের মাধ্যমে ড্রেসে আলোর এফেক্ট দিতে পারবেন। ইচ্ছেমতো আলোর রং বদলে, আপনার লুক বদলে ফেলতে পারবেন মুহূর্তে। আসলে এ ধরনের ড্রেসে খুব সরু তামার তার থাকে। যার ওপর ফসফরাস দেওয়া থাকে। বিদ্যুৎ গেলে সেটা জ্বলে ওঠে। পোশাকে নিওনের মতো এফেক্ট চাইলে এই ইলেকট্রো লুমিনিসেন্স ওয়্যার দেওয়া পোশাক পরতে পারেন। এই লুমিনিসেন্স ওয়্যার দিয়ে এমব্রয়ডারি বা ফুলের মোটিফ করা যায়। আবার ড্রেসের নীচে হেমলাইনের মধ্যে ফিট করে দেওয়া যেতে পারে। পার্টিতে ঢোকার আগে সেটা অন করে নিন। গোটা পার্টি জ্বালিয়ে রাখার দরকার না পড়লে অফ করে দিতে পারেন। তবে টানা পাঁচ-ছয় ঘণ্টা জ্বলা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। প্রুযুক্তি এতটাই উন্নত হয়ে উঠছে, যে কিছুদিন পরেই ই এল অন করার জন্য আর সুইচের দরকার পড়বে না। মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে অপারেট করা যাবে। এ ধরনের অ্যাপ তৈরির কাজও চলছে। ওই অ্যাপ ব্লু টুথের মাধ্যমে সিগনাল পাঠাবে। ই এলের ছোট্ট ইউনিটে সিগনাল পৌঁছনো মাত্রই জলজল করে উঠবে আপনার পোশাক। এই আলোর আবার নানা ধরনের এফেক্ট হয়। ঠিক কালীপুজোয় যেমন বিভিন্ন ধরনের লাইটিং হয় তেমনই। ব্লিঙ্ক করতে পারে। আবার ধীরে ধীরে জ্বলে, নিভে যেতে পারে। আবার গোটা সময়টা ধরে জ্বলে থাকবে তেমনও হতে পারে।
• রিচার্জেবল ইউনিট
যেভাবে মোবাইল চার্জ করেন, ঠিক সে ভাবেই পোশাক থেকে ইউনিটটি আলাদা করে নিয়ে চার্জে বসান। পার্টিতে বেরোনোর আগে সেটি সেট করে নিন। আবার কাচার সময় ইউনিটটি খুলে নিতে হবে। তবে নিওন এফেক্ট কতদিন পাবেন, তা নির্ভর করছে দুটি বিষয়ে ওপর। আপনি কোন মানের ‘ইলেকট্রো লুমিনিসেন্স ওয়্যার’ কিনছেন অর্থাৎ পাওয়ার ক্যাপাসিটি কতটা? প্রযুক্তি যে গতিতে দৌড়চ্ছে তাতে ওয়ারলেস চার্জার বাজারে এল বলে। ওয়ারলেস চার্জার থাকলে আলাদা করে সকেটে লাগিয়ে চার্জ দিতে হবে না। পার্টি থেকে ফিরে এসে গাউনটি বা ম্যাক্সি ড্রেসটি ওয়াড্রোবে রাখলেন। বা ঘাম শুকোনোর জন্য হ্যাঙারে টাঙালেন। ওই সময় পাশে রাখুন ওয়ারলেস চার্জারের প্লেট। তা হলে এক কাজে দু’কাজ হবে।
• বিপদের ঝুঁকি?
এই ধরনের ইলেকট্রো ইউনিট লাগানো পোশাক পরে পার্টি করলে বিপদের ঝুঁকি আছে কী না, অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে বলতে পারি বিপদের কোনও আশঙ্কা নেই। কারণ এগুলো চলে তিন ভোল্টের ডিসি পাওয়ারে। ফলে শক খাওয়ার কোনও চান্স নেই। আমরা তো আজকাল হামেশাই পোর্টেবল চার্জারে মোবাইল গুঁজে, হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। সেক্ষেত্রে যতটা নিশ্চিন্ত বোধ করেন এ ক্ষেত্রেও ততটা। আজকাল তো আমরা স্মার্ট ওয়াচ পরি। সে গুলোর থেকে কম পাওয়ার কনজিউম করে ই এল।
• নিওন ড্রেসে কেমন মেকআপ
নিওনের সঙ্গে কালার ম্যাচ করে আই শ্যাডো পরুন। অর্থাৎ য়ে কালারের নিওন পোশাক সেই একই রঙের আই শ্যাডো পরুন। ভাল লাগবে। আজকাল ফসফরাস দেওয়া মেক আপ পাওয়া যায়। সেগুলো পার্টির ইউ ই আলোয় দারুণ এফেক্ট আনে। লুকটাই পুরো বদলে যায়।
• ড্রেসের রং বদল
এই ধরনের পোশাক অপটিকাল ফাইবার দিয়ে বিফ বা এমব্রয়ডারি করা হয়। অপটিকাল ফাইবারের ডগায় যদি আলো লাগানো থাকে তা হলে ড্রেস জুড়ে একটা হালকা আভা চলে আসে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের পোশাকের বৈশিষ্ট্য হল, আপনার মুড ও বডি টেম্পারেচর অনুযায়ী রং বদল করতে পারে। ধরুন, আপনি পার্টিতে নাচছেন। ওইসময় হৃৎস্পন্দন, দেহের তাপমাত্রা দুই বেশি থাকে, তখন পোশাকের রং লাল হয়ে গেল। আবার যখন আপনি ‘কুল’ হয়ে যাচ্ছেন তখন পোশাকের রং আপনা থেকেই পাল্টে নীল হয়ে গেল।
এ ধরনের পোশাকে এখন মাইক্রো ক্যামেরা বসানো থাকছে । তার একটা সেন্সর থাকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই সেন্সর কাজ করে। আপনি বাড়ি থেকে বেরোলেন রিল্যাক্স মুডে। লুজ ফিটিং পোশাক পরে। অথচ পার্টি ওয়্যারে লুজ ফিটিং বেমানান। পার্টিতে ঢোকার মুখে যেই কেউ আপনার দিকে তাকাবে, মোশন সেন্সর কাজ করতে শুরু করবে। ড্রেসটার হেম লাইন বা শেপ বদলে যাবে। লং লেনথ ড্রেস, হয়ে যাবে শর্ট ড্রেস। লুজ ফিটিংয়ের বদলে আপনি পাবেন টাইট ফিটিং ড্রেস। পোশাকে সেন্সর লাগানো না থাকলে, মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমেও ড্রেসের শেপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
• কোন ধরনের ফ্র্যাবিক
সিল্ক, সুতি, লিনেন, স্যাটিন চলবে সবেতেই। শুধু পোশাকেই নয়, লুমিসেন্স ওয়্যার লাগানো যেতে পারে গয়না, ব্যাগ, ফুট ওয়্যারেও।
তবে হ্যাঁ, নিয়ন এফেক্টে পোশাক পরতে গেলে খরচ একটু বাড়বে। ভারতে যেহেতু এ ধরনের পোশাক এখনও আসেনি তাই দাম নির্ভুলভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে বিদেশের দাম আন্দাজ করে বলা যেতে পারে আনুমানিক কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার টাকা পড়বে।