সব আপেল কি মাটিতেই পড়ে?

ছত্তীসগঢ়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে নূতন কুমার ওরফে নিউটন। সরকারি চাকুরে। আদর্শবাদী, একরঙা একবগ্গা চরিত্রের। এক সিনিয়রের কথায় তার উপলব্ধি হয়, এ পৃথিবীর সবার জন্যই একই নিয়ম খাটে। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব।

Advertisement

মহুয়া গিরি

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

নিউটন

Advertisement

পরিচালনা: অমিত মাসুরকর

অভিনয়: রাজকুমার রাও, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, রঘুবীর যাদব

Advertisement

৭/১০

নাচ নেই। গান নেই। প্রেম নেই। নেই লড়াই, শত্রুতা, প্রতিশোধের খেলা। এমনকী দম আটকে রাখার মতো জমাটি গল্পও নেই। তা হলে সিনেমায় আছেটা কী? এত ছবি থাকতে ‘নিউটন’ই বা কেন এগিয়ে রইল ২০১৮-র অস্কারে ভারতের পাঠানো সেরা বিদেশি ছবির দৌড়ে?

আছে। এই ছবিতে শুধু একটা গল্প নয়, বরং ওই একটা গল্পের অনেকগুলো ডাইমেনশন রয়েছে। ঠিক যেন একটা ক্যালাইডোস্কোপ। যত ঘুরিয়ে দেখবেন নতুন নতুন দৃশ্য খুঁজে পাবেন। নতুন ব্যাখ্যা পাবেন।

ছত্তীসগঢ়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে নূতন কুমার ওরফে নিউটন। সরকারি চাকুরে। আদর্শবাদী, একরঙা একবগ্গা চরিত্রের। এক সিনিয়রের কথায় তার উপলব্ধি হয়, এ পৃথিবীর সবার জন্যই একই নিয়ম খাটে। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব।

ভোটের সময়ে ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এক প্রত্যন্ত এলাকায় প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে কাজে যোগ দেন নিউটন। ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের সিনেমার বাকি অংশটা দর্শকেরা ওই পোলিং বুথেই কাটাবেন। দেখতে পাবেন, ভোট নামক জাতীয় প্রহসনের আদর্শ, বাস্তব আর অজানা দিকগুলো।

লালমাটি ওড়ানো প্রত্যন্ত গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে নেমে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন আধুনিক ভারত গড়ার। যেখানে প্রত্যেকের হাতে মোবাইল, ল্যাপটপ থাকবে। আদর্শবাদী প্রিসাইডিং অফিসার নিউটনের কাছে ভোট মানে অক্ষরে অক্ষরে দায়িত্ব পালন। নিউটনের সঙ্গী মাঝবয়সি, সাহিত্যানুরাগী লোকনাথের কাছে ভোট প্রতি বছরের মতো প্রহসন মাত্র। তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা অফিসার আত্মা সিংহের কাছে অবশ্য ভোটের অর্থ ফালতু প্রাণের ঝুঁকি। যেখানে কথায় কথায় ল্যান্ডমাইন ফাটে, মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তরতাজা জওয়ানেরা, সেখানে একজন সেনা অফিসারের কাছে ভোটের মানে আর কী হতে পারে? তবে বাইরের দুনিয়া কি সে খবর পায়? বিদেশি সাংবাদিক আর মিডিয়ার সামনে সে এক অন্য ছবি। লাইন করে ভোট দিচ্ছে সচেতন আদিবাসীরা। আদপে এটাই জানেন না, কাকে বা কেন ভোট দেবেন। মিডিয়া দেখে তাঁদের যে জবরদস্তি ধরে আনা হয়েছে, সে খবর জঙ্গলের বাইরে কাকপক্ষীও টের পায় না।

আর ভোটার? তাদের কী মত? এলাকায় ভোটার সাকুল্যে ৭৬ জন। মাওবাদীদের ফতোয়া আর সরকারি বাহিনী দুইয়ের হাত থেকেই মুক্তি চায় তারা। তারা জানে ভোটে কিছুই বদলাবে না। ল্যাপটপ, ফোনের উন্নতি নয়, আগামী সরকারের কাছে যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তো তা একটাই, বিড়িপাতার সঠিক দাম পাইয়ে দেবে কে?

আরও পড়ুন: এ কি ডামাডোল রে বাবা! দুগ্গার চক্ষু কপালে

সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে একটা পথ বাতলে দেওয়ার মতো অভিভাবকসুলভ প্রচেষ্টা এ ছবিতে নেই। বরং এ ছবি আয়নার মতো। যেখানে মুখ দেখা যায় সকলের— পণের লোভে ছেলের বিয়ে, সরকারি চাকরি আর ইংরেজি ভাষার প্রতি এ দেশের মানুষের হ্যাংলাপনা, এমনকী আদর্শবাদী নিউটনের সততার অহঙ্কারটুকুও।

অমিত মসুরকর পরিচালিত এ ছবির বড় পাওনা অভিনেতারা। নিউটনের ভূমিকায় রাজকুমার রাও অনবদ্য। তবে ছবির মধ্যভাগে গতি ঢিমে। পোলিং বুথের ভেতর দীর্ঘ অপেক্ষার মাঝে একমাত্র ভাল লাগে রাজকুমার আর আত্মা সিংহের ভূমিকায় পঙ্কজ ত্রিপাঠীর ডুয়েল। আদিবাসী মেয়ে মালকো হিসেবে অঞ্জলি পাতিল সাবলীল। রঘুবীর যাদবের মুনশিয়ানায় লোকনাথ বিশ্বাসযোগ্য।

এ ছবি অস্কারে সেরার শিরোপা আনবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে ছবিটা নিঃসন্দেহে পরিচালকের সাহসী পদক্ষেপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন