চুমু বা আলিঙ্গন নয়, চোখের ইশারায় প্রেমের দৃশ্যে প্রস্তুত হচ্ছে টলিপাড়া

হাত ধরা, বা রোম্যান্টিক দৃশ্য না-হয় বাদই দেওয়া গেল, কিন্তু রগরগে ফ্যামিলি ড্রামায় বউমা শাশুড়ির পা ধরে কাঁদছে, অথবা দজ্জাল ননদকে ঠাস করে চড় কষিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবাদী বড় বউ...সে সবেও তো ছুঁতে হবে একে অন্যকে!

Advertisement

বিহঙ্গী বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ২১:৫৬
Share:

এ রকম অন্তরঙ্গতায় পড়তে চলেছে কাঁচি।

রানি রাসমণি তাঁর সন্তানদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন। রোহিতের অব্যক্ত প্রেম হঠাৎ করেই সকলের অগোচরে ধরে নিচ্ছে শ্রীময়ীর হাত। আম্রপালি আর নিখিল আরও কাছাকাছি আসছে ক্রমশ...না! আর হবে না এ সব। ১০ জুন থেকে আবার শুরু হওয়া শুটিংয়ে কলাকুশলীদের বজায় রাখতে হবে ৬ ফুট দূরত্ব, সিদ্ধান্ত এমনটাই।

Advertisement

কিন্তু শুটের মাঝে সবসময় ছ’ফুট মেনে চলা কি আদপে সম্ভব? 'রাসমণি' দিতিপ্রিয়া রায়ের কথায়, ‘‘অভিনয়টা আমাদের কাছে ইমোশন। করোনা-উত্তরকালের শুটিং পর্বে সেই আবেগে পড়বে বাধানিষেধ। এ ভাবেই অভ্যেস করে নিতে হবে, কারণ, নিজের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তো আর কিছু হতে পারেনা।’’

হাত ধরা, বা রোম্যান্টিক দৃশ্য না-হয় বাদই দেওয়া গেল, কিন্তু রগরগে ফ্যামিলি ড্রামায় বউমা শাশুড়ির পা ধরে কাঁদছে, অথবা দজ্জাল ননদকে ঠাস করে চড় কষিয়ে দিচ্ছেন প্রতিবাদী বড় বউ...সে সবেও তো ছুঁতে হবে একে অন্যকে! ছ’ফুট দূরত্ব থেকে চড় কীভাবে লাগবে গিয়ে ননদের গালে? কীভাবেই বা সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াবেন মা? চিট শটের অপশন থাকলেও তা কতটা 'রিয়ালিস্টিক' দেখাবে? নাকি সেখানেও পরিস্থিতির প্রয়োজনে ঢুকবে করোনা-প্লট?

Advertisement

গোটা বিষয়টিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দিতিপ্রিয়া বললেন, ‘‘আমাদের দর্শকরা জানেন যে কী রিস্ক নিয়ে আমরা কাজ করতে চলেছি। তাই আমরা যদি দূরে দাঁড়িয়েও অভিনয় করি সে ক্ষেত্রে প্রথমে দর্শকের কাছে একটু অবাক মনে হলেও ধীরে ধীরে সেটার সঙ্গে তাঁরাও অভ্যস্থ হয়ে যাবেন। আর সুস্থ ভাবে কাজ করতে আমাদের এই ছাড়টুকু দর্শকরা দেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’

‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকে একদম ভিন্ন লুকে দর্শকের সামনে এসেছেন অভিনেত্রী তিয়াসা রায়। এখন আর তিনি ‘শ্যামা’ নন। মাম, আম্রপালি। নিখিলের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্টিক দিকেও কি কাঁটা বসাতে পারে এই করোনা সুরক্ষাবিধি? ‘‘শুট শুরু না হলে এখন থেকে এ ভাবে বলা কিছুটা মুশকিল। আর আমার মনে হয় নিজের অভিনয় ক্ষমতাকে শান দিয়ে নেওয়ার এটাই সময়। আগে যেমন আমরা কাছাকাছি গিয়ে বা ঝগড়ার দৃশ্যেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে মেকআপ করতাম। এ বার এ সব বাদ দিয়ে অভিনয়টাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে’’,বললেন তিয়াসা।

হাত ধরা! এখন 'নৈব নৈব চ'

সবেমাত্র কাছে এসেছিলেন রোহিত আর শ্রীময়ী। প্রেম হবে হবে করছে ঠিক এমন সময়েই করোনা... লকডাউন। শুটিং বন্ধ। করোনাত্তর শুটিং কালে তাঁদের অব্যক্ত প্রেমও কি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে? আর কাছাকাছি আসা হবে না তাঁদের?

রোহিত সেন ওরফে টোটা রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘শ্রীময়ী একটি অত্যন্ত রিয়েলিস্টিক ধারাবাহিক। তাই আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই চিত্রনাট্য লেখা হবে।’’ আর প্রেম? ‘‘রোহিত যদি মনে করে সে কাছে এলে শ্রীময়ীর করোনা হতে পারে তা হলে ছয় ফুট কেন, বারো ফুট দূরে থাকতেও রাজি সে’’, হাসতে হাসতে বললেন টোটা।

সুতরাং করোনা-উত্তর শুটিং পর্বে চিত্রনাট্যকারদের উপর যে চাপ বাড়বে সে কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই গোটা বিষয়টিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চান প্রযোজনা সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টস-এর অন্যতম কর্ণধার এবং লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। “এটা তো একটা নতুন চ্যালেঞ্জ আমাদের সকলের কাছে। এ ভাবেই লিখতে হবে চিত্রনাট্য। করোনা আবহ সম্পর্কে সাধারণ মানুষও ওয়াকিবহাল। আর গল্পের মধ্যেই যদি সেটা খানিক বলে দেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে অসুবিধে না হওয়ারই কথা।’’

ছ' ফুট দূরত্ব মানতেই হবে এ বার থেকে

শুধু চিত্রনাট্যকারই নন, চাপ বাড়ছে পরিচালকদেরও। ‘চারুলতা’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ইত্যাদি ধারাবাহিকের পরিচালক সৃজিত রায় বলছিলেন, ‘‘হিরোর ঘড়িতে আটকে যাচ্ছে হিরোইনের ওড়না...এ সবের দিন শেষ। অসুবিধে হবে। আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগেই অন্তরঙ্গ দৃশ্যের রমরমা ছিল না। এই উত্তমকুমার যুগের কথাই ধরুন। তিনি নায়িকার দিকে শুধু তাকিয়েছেন। ব্যস!ভুবন ভরিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র এক্সপ্রেশনের উপর নির্ভর করেও যে প্রেমের দৃশ্য করা যেতে পারে, তা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এই সময়ে আরও ভাল করে বুঝতে পারবেন। আমাদের পরিচালকদেরও বিভিন্ন শট ব্যবহার করে দৃশ্যগুলোকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।’’

দূরে দূরে থেকেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে, রিয়ালিস্টিক ফিল নিয়ে আসতে কী করা যেতে পারে? পরিচালক রাজ চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে কাটশটের ব্যবহার করা যেতে পারে। মানে ধরুন দু’জন মানুষের সিন। কিন্তু দু’জনের ডেট ম্যাচ করল না। এক জনের সিনটা আগে তুলে নিয়ে পরের জনেরটা অন্যদিনে তুলে দু’টিকে মিলিয়ে দেওয়া— এ ঘটনা তো আগেও হয়েছে। তাই কিছুটা কম্প্রোমাইজ করে চিট শটের মাধ্যমে ধারাবাহিকে কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে বলে আমার মনে হয়। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটাই বেশ অসুবিধের।”

অসুবিধে হাজারও, পাশাপাশি ভয় আছে সংক্রমণেরও। তবে এ সব কিছুকেই সঙ্গী করে আবার কাজে ফিরতে চাইছে টলিপাড়া। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে? বেশ, কুছ পরোয়া নেহি। খাঁটি চিত্রনাট্য আর সুদক্ষ অভিনয়কেই আপাতত ঢাল করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে টলিউড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন