রবীন্দ্রভারতী থেকে এম মিউজ করেছি। ধ্রুপদ নিয়ে শাস্ত্রীয় কণ্ঠ সঙ্গীত শিখেছি। গলা নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। চ়়ড়ায় গাইতে কষ্ট হয়। স্বচ্ছন্দে গাইতে পারি না। দম শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। যদিও ন্যাচারাল ‘সি শার্পে’ রেওয়াজ করি। গান গাওয়ার সময় ‘সি শার্পে’ ওপরের দিকে গাইতে পারি না।
অরিন্দম রায়
রূপঙ্কর: ‘সি শার্পে’ রেওয়াজ করতেই হবে তেমনটা নয়। যে স্কেলে আপনি স্বচ্ছন্দ সেই স্কেলে গলা নামিয়ে রেওয়াজ করুন। নীচের ‘পা’ এবং ওপরের ‘পা’ পর্যন্ত যে স্কেলে আপনার গলা যাবে, সেই স্কেলে রেওয়াজ করুন। দম বাড়ানোর জন্য স্ট্যান্ডিং নোট প্র্যাকটিস করতে হবে। যে স্কেলে গান গাইছেন সেই স্কেলের ‘সা’ ধরে প্রতিদিন রেওয়াজ করে যান দশ থেকে পনেরো মিনিট।
আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই। তার সপ্তকে গেলে গলা কেঁপে যায়। কী ভাবে রেওয়াজ করলে গলা সহজে ওঠানামা করবে়?
প্রদীপ্ত বিশ্বাস
রূপঙ্কর: গলা যদি কাঁপে, তা হলে ওই কাঁপাটাকে কী ভাবে গানে ব্যবহার করবেন ভাবুন। ওটাই আপনার প্লাস পয়েন্ট। তালাত মামুদ সাহেবের গলা কাঁপত। আমার গলাও ‘হায়ার অকটেভ’ বা খুব ‘লোয়ার অকটেভে’ গিয়ে কেঁপে যায়। কিন্তু আমি অনেক অভ্যাস করে সেটা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে শিখেছি। ‘আজ শ্রাবণের বাতাস বুকে’ গানে যখন লোয়ার অক্টেভে যাই তখন আমার গলা কাঁপে। ওই কম্পনকেই আমার স্পেশালিটি ধরে নিয়েছি।
‘গভীরে যাও’ গানের অন্তরার শেষ দিক-টায় আমার গায়কি ‘রকিশ’ হয়ে যাচ্ছিল,
কিন্তু সৃজিত আমায় বুঝিয়ে বলে, ‘মেলো’ লাগবে
আমার সুর ঠিক থাকলেও তাল আর লয়ের খুব সমস্যা। কী করব?
তমসা চক্রবর্তী
রূপঙ্কর: এখন নানা রকমের উপায় বেরিয়েছে। ইন্টারনেটে গিয়ে মেট্রোনাম অপশন ডাউনলোড করে নিয়ে প্র্যাকটিস করুন। বাড়িতে তবলার সঙ্গে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলেও এই সমস্যা চলে যাবে।
আনন্দplus-এ পড়লাম আপনি অভিনয় করছেন। অভিনন্দন। আচ্ছা, একজন শিল্পীকে আজকের দিনে গান ছাড়া অন্য কোনও পথ কি খোলা রাখতে হয়? শুধু গান জীবিকা করে কি সংসার চালানো যায়? আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন প্লিজ।
রুমা শীল, তেঘরিয়া
রূপঙ্কর: ছবিতে অভিনয় করছি প্যাশন থেকে। গানকে জীবিকা করে সংসার চালাতে পারছি না বলে নয়। ছোটবেলা থেকে থিয়েটার করতাম। এখনও থিয়েটার করি। ‘কৃষ্টি পটুয়া’ বলে আমার থিয়েটারের দল আছে। থিয়েটারের প্রতি আমি প্যাশনেট। হঠাৎ করে পরিচালক দেবালয় (ভট্টাচার্য) বলল, ছবিতে গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল।
তবে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলি এখন ইন্ডাস্ট্রির যা অবস্থা তাতে শুধু মিউজিককে পেশা করে বাঁচা বেশ কঠিন। মিউজিশিয়ান হোন, কিন্তু তার পাশাপাশি অন্য লাইন থাকাও দরকার। যদি মিউজিশিয়ান হিসেবে ক্লিক করে যান, তা হলে অন্য লাইনটা ছে়ড়ে দিতে পারবেন। কিন্তু যদি ক্লিক না করে তা হলে অন্য লাইনটা আপনাকে মিউজিক নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আমি অনেককেই দেখেছি মিউজিকের লাইনে এসে দেওয়ালে পিঠ ঠেকার পর হতাশ হয়ে মিউজিকটাই ছেড়ে দিয়েছেন। সেটা যেন না হয়।
শুনেছি গান রেকর্ডিং-এর সময় সৃজিত মুখোপাধ্যায় স্টুডিয়োয় থাকেন, এতটাই ইনভলড উনি। সিনেমায় গান গাওয়ার সময় উনি গানকে কীভাবে ব্যবহার করেন?
অর্পণা মজুমদার, যোধপুর পার্ক
রূপঙ্কর: সৃজিত বরাবরই গান নিয়ে খুব ইনভলভড। কোন গান, কী ভাবে সিনেমায় ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে ওর স্পষ্ট ধারণা থাকে। আমি সৃজিতের যে ক’টা ছবিতে গান গেয়েছি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ও নিজে রেকর্ডিংয়ে ছিল। ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে ‘গভীরে যাও’ গানের সুর করেছিলেন অনুপম রায়। ওই সময় সৃজিত উপস্থিত ছিল। একজন গায়কের কাছ থেকে ও কী চায় তা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়। যেমন ‘গভীরে যাও’ গানের অন্তরার শেষ দিক-টায় আমার গায়কি ‘রকিশ’ হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু সৃজিত আমায় বুঝিয়ে বলে, ‘মেলো’ লাগবে, যেটা আমার গলার টেক্সচার।
বয়স বাইশ। গানের ভিডিয়ো শেয়ার করলাম। জানতে চাই কী ভাবে রেওয়াজ করলে আমি গানের প্রতিযোগিতায় বা কোনও অডিশনে অংশ নিতে পারব। গানে কী কী উন্নতি করতে হবে?
সঙ্ঘমিত্রা হালদার, আসানসোল
শ্রাবণী: তোমার গান শুনলাম। তোমাকে আরও তৈরি হতে হবে। তোমার লক্ষ্য হওয়া উচিত গান শেখা। এখন থেকে প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার জন্য গান শিখব এ রকম ভেবো না। তা হলে গান শিখতে পারবে না।
দিদি, আপনি ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করেছেন। ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহারের সময় উনি কি খুব সচেতন থাকতেন? ‘চোখের বালি’র অভিজ্ঞতা যদি বলেন। গানে নাম করতে গেলে মিউজিকাল ফ্যামিলি হলে বাড়তি কী সুবিধে পাওয়া যায়? মুম্বইতে আগে বাঙালি গায়কদের রমরমা ছিল। আজকের বাঙালিরা কেউ মুম্বই যেতে চান না কেন?
সোমা সাহা, পূর্ব মেদিনীপুর
শ্রাবণী: ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’ ছবিতে আমার প্রথম গান রেকর্ডিং। বেশ ভয় করছে। হঠাৎ স্টুডিয়োয় ঋতুদা ঢুকলেন। আমাকে দেখে তুই-তোকারি করে এমন গল্প জুড়লেন যে আমার ভয় চলে গেল। রবীন্দ্রনাথের গানে কথার ওপর জোর দিতেন ঋতুদা। শট দেখিয়ে গল্প বলে তার পর গানের রেকর্ডিং করাতেন। ‘অমল ধবল পালে’ গাওয়ার সময় মনে আছে একটা ঢাক বাজানো হয়েছিল। গানটা গাওয়ার সময় যাতে ওই ঢাকের আওয়াজের জন্য আমার গানে একটা ডিস্টারবেন্স তৈরি হয়। দেবুদা (দেবজ্যোতি মিশ্র) খুব চমৎকার হ্যান্ডেল করেছিলেন বিষয়টা।
আজকের গায়করা কলকাতাতেই মনের মতো গান পেয়ে যান। পারিশ্রমিকও পান যথেষ্ট। তাই তাদের আর মুম্বই যেতে হয় না। তবে আগে বাংলা ছায়াছবিতে মুম্বইয়ের শিল্পীরা এসে প্লে ব্যাক করতেন, এটা আমার একদম ভাল লাগত না। আমাদের এখানে এত যোগ্য শিল্পী আছেন। ইদানীং অবশ্য নিউ এজ বাংলা ছবিতে কলকাতার শিল্পীরা গান গাইছেন। এটা দেখে খুব ভাল লাগছে।