অনলাইন-এ বেলাইন

কেনাকাটা বাড়ছে। ভুলভ্রান্তিও হচ্ছে বিস্তর। তবুও অনলাইনের বিকিকিনি থামছে কি? খোঁজ নিলেন অদিতি ভাদুড়িনিউজ চ্যানেলে কর্মরত অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নামজাদা অনলাইন সাইটে এক জনপ্রিয় লেখকের দু’টো বই অর্ডার করেছিলেন। দিন সাতেক বাদে বইয়ের ডেলিভারি আসার পর দেখলেন একটা বই মিললেও আর একটা বই অর্ডারের সঙ্গে মেলেইনি। অ্যাড এজেন্সির চাকুরে সুস্মিতা, পল্লবী অর্ডার দিয়েছিলেন খুব সুন্দর ডিজাইনার আয়নার সেট। হাতে আসার পর দেখলেন প্রতিটা আয়নাই সাইটে ডিসপ্লে হওয়া আয়নার চেয়ে সাইজে বেশ ছোট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:০২
Share:

নিউজ চ্যানেলে কর্মরত অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নামজাদা অনলাইন সাইটে এক জনপ্রিয় লেখকের দু’টো বই অর্ডার করেছিলেন। দিন সাতেক বাদে বইয়ের ডেলিভারি আসার পর দেখলেন একটা বই মিললেও আর একটা বই অর্ডারের সঙ্গে মেলেইনি।

Advertisement

অ্যাড এজেন্সির চাকুরে সুস্মিতা, পল্লবী অর্ডার দিয়েছিলেন খুব সুন্দর ডিজাইনার আয়নার সেট। হাতে আসার পর দেখলেন প্রতিটা আয়নাই সাইটে ডিসপ্লে হওয়া আয়নার চেয়ে সাইজে বেশ ছোট। শুধু তাই নয়, জিজাইনেই ঢেকে গিয়েছে আয়নার মুখ। তাতে মুখ দেখা আর সম্ভব নয়।

রাজারহাটের রুমি মুখোপাধ্যায় অর্ডার করেছিলেন ওয়ার্ড্রোব। ডেলিভারি হওয়ার পর সংস্থার লোকেরা যখন সেটি ফিট করতে আসেন, দেখা যায় কিছু অংশ ফাটা।

Advertisement

অনলাইন সাইটে কেনাকাটা আর নতুন কিছু নয়। কেউ কিনছেন হিড়িকে পরে। কেউ বা নিতান্তই সময়াভাবে। বিভিন্ন অনলাইন সাইট এত রকমের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে যে দেখলে না কেনা পর্যন্ত শপিংয়ের ভূতটা ঘাড় থেকে নামবেও না। আর এই কেনাকাটার সুযোগটাই নিচ্ছে অনলাইন বিক্রেতারা। মাস তিনেক আগের ঘটনা। আইটি সেক্টরে কর্মরত পৃথু লাহিড়ি ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটের জনপ্রিয় এক সাইটে অর্ডার করেছিলেন ডিএসএলআর ক্যামেরা। বললেন, ‘‘ক্যামেরাটা ডেলিভারি দেওয়ার পর আমি তো অবাক। ওটা দিল্লির এক লোকাল ব্র্যান্ডের ক্যামেরা। আমি কষ্ট করে পয়সা জমিয়ে যে ব্র্যান্ডটার অর্ডার করেছিলাম, সেটা বেমালুম হাওয়া।’’ পৃথু অভিযোগ জানান ওই অনলাইন সংস্থার ওয়েবসাইটে। কথা বলেন সংস্থার এক্সিকিউটিভের সঙ্গেও। ‘‘ওরা ক্ষমা চেয়েছিল। রিপ্লেস করে দেবে বলেছিল। আমি আর ভরসা পাইনি। টাকা ফেরত নিয়ে নিয়েছিলাম,’’ বলেন শখের ফোটোগ্রাফার পৃথু।

বেসরকারি সংস্থার অডিটর সমরজিৎ সরকার অনলাইনে কেনাকাটা করছেন বেশ অনেক দিন। কিছু দিন আগে নতুন বৌয়ের জন্য অর্ডার দিয়েছিলেন বেশ কিছু কুর্তি। ‘‘কুর্তিগুলো যখন এল, দেখলাম কুর্তিগুলো জর্জেট মেটিরিয়ালে। দেখতেও খুব চিপ। আমি কমপ্লেন করেছি। দেখি কবে রিপ্লেস হয়,’’ বললেন সমরজিৎ। অথচ তিনি কিন্তু অনলাইন সাইটগুলোয় নিয়মিত খদ্দের। বললেন, ‘‘আগে এ রকম অভিজ্ঞতা হয়নি। বাড়ি বসে ডেলিভারি পেয়ে যাই। এখন তো ভেবেচিন্তে অর্ডার দিতে হবে দেখছি।’’

এত কিছুর পরেও সিঁদুরে মেঘ দেখে মোটেই ঘাবড়াচ্ছেন না অনলাইন সাইটের কর্মকর্তারা।

ফ্লিপকার্ট সংস্থার দিল্লি অফিসের এক ম্যানেজিং সুপারভাইজার শ্বেতা পওয়ার বললেন তাঁরা এই ভুলভ্রান্তির বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। ‘‘দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করলেও তো অনেক সময় ভুল হয়। সেখানেও তো বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকে। আমাদেরও তাই। আমাদের ডেডিকেটেড টিম আছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য। কমপ্লেন পেলে আমরা কাস্টমারদের বলি আমাদের মেল করতে। এ ছাড়া আমাদের সব প্রডাক্টেই ৩০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টিও থাকে,’’ জানান শ্বেতা।

সমস্যা কি তাতে আদৌ মেটে?

আইইএস অফিসার বিশাখা চক্রবর্তী মাসআটেক আগে নিজের বিয়ে উপলক্ষে লঁজারি শপিং করেছিলেন এক নামী অনলাইন সংস্থায়। অনলাইনে নিয়মিত খদ্দের তিনি। কিন্তু জিনিসটা যখন তাঁর হাতে এসে পৌঁছয়, দেখেন খুব সস্তার মেটিরিয়ালে তৈরি। বললেন, ‘‘লঁজারি সেটগুলো দারুণ দেখতে ছিল। কিন্তু মেটিরিয়ালটা দেখি সিন্থেটিক মিক্সড। প্রডাক্ট ডেসক্রিপশনের সঙ্গে কোনও মিল নেই। অথচ দামও একগাদা।’’ বিশাখা যদিও এই নিয়ে ওই সংস্থার কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জানাননি।

বেলেঘাটার মন্টেসরি স্কুল প্রিন্সিপাল সিমরান সাহা কিন্তু গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অনলাইনে কেনা ফুড প্রসেসরের রিপ্লেসমেন্ট চেয়ে ফোন করেছিলেন সেই সংস্থার রিজিয়নাল সুপারভাইজারকে। ‘‘ফোন করার পর খুব ভাল ব্যবহার করেছিল এক্সিকিউটিভরা। কিন্তু জিনিসটা আর হাতে পাই না। বেশ কিছু দিন হওয়ার পর দেখি অনুরোধ করছে অন্য কোম্পানির জিনিস নিতে। আমি ফেরত দিয়ে দিই। কিন্তু পুরো টাকাটা রিফান্ড করেনি।’’ সিমরান আরও জানান, টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওরা বলে ডেলিভারি চার্জ আর ক্যুরিয়র-বাবদ টাকাটাই ওরা মাইনাস করেছিল।

এত কিছুর পরেও প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। ভুলটা তা হলে কার? অনলাইন সংস্থাগুলোর? না কি যাদের প্রডাক্ট নিয়ে তারা ব্যবসা করছে, তাদের?

ফ্লিপকার্ট সংস্থার বেঙ্গালুরু অফিসের এক এক্সিকিউটিভকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি এড়িয়ে যান। উত্তর মেলে না।

অন্য দিকে অনলাইন সংস্থা জাবং-এর তরফে প্রমিত শেট্টি গুড়গাঁও অফিস থেকে বললেন তাঁরা তাঁদের কাস্টমারদের এই ধরনের যে কোনও অভিযোগ মেল করে তাঁদের জানাতে বলেন। ‘‘এ রকম ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি তাড়াতাড়ি রিপ্লেস করতে। তবুও কখনও যদি সেই প্রডাক্ট অ্যাভেলেবল না থাকে, তা হলে একটু অপেক্ষা করার রিকোয়েস্ট জানাই কাস্টমারদের,’’ বলেন প্রমিত।

ভুক্তভোগীর সংখ্যা তাই নেহাত কম নয়।

আবার চার দেওয়ালের ভেতর কফির কাপে নিশ্চিন্ত চুমুক দিতে দিতে কারসর-টা এদিক ওদিক সরিয়ে কেনাকাটার আরামটাও জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায় না।

কেনাকাটা তাই চলবেই।

আর কখনও যদি এ রকম ঘটে!

ন্যাড়া বেলতলায় দু’বার গেলেই বা ক্ষতি কি...

অর্ডার দিয়েছিলেন ফিডিং বোতল। আসার পর খুলে দেখা গেল সে বোতলের ফাটা, করুণ অবস্থা। রিপ্লেসমেন্ট চাইলে বলা হয় সেই প্রডাক্ট অ্যাভেলেবল নেই। বলা হল পরের কেনাকাটার সময় দাম অ্যাডজাস্ট করে নিতে।

নামী সংস্থা থেকে কেনা ওয়াল র‌্যাক যখন কোম্পানির লোক ফিট করতে আসে, দেখা যায় সেটা অনেকটা অংশে ফাটা। বদলে দেওয়ার কথা বলতেই বলা হল সেই জিনিস আর পাওয়া যাবে না।

জিনিস পছন্দ না হলে বা বদলাতে হলে বিশদে জেনে রাখুন সেই সাইটের রিটার্ন পলিসি। একেক সাইটের রিটার্ন পলিসি কিন্তু এক-এক রকম।

শপিং করার আগে দেখে নেবেন সাইটটা ই-রিটেলার না কোনও ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম। বেশ কিছু সাইট আছে যারা অন্যের প্রডাক্ট বেচে। অভিযোগ জানাতে গেলে কিন্তু আপনাকে সরাসরি বিক্রেতার সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে।

অনেক সময় পারফিউম বা গয়না নন-রিফান্ডেবল আইটেম তালিকায় থাকে। সে ক্ষেত্রে যে সাইটে আপনি কেনাকাটা করছেন দেখে নিন তারা ‘ট্রাই আউট’ ফেসিলিটি দিচ্ছে কি না। যদি না দেয়, তা হলে দেখে নেবেন কোনও এক্সচেঞ্জ ফেসিলিটি আছে কিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন