Prasenjit Chatterjee

Biswajit Chatterjee: বাবা, তোমার জন্মদিনে জানাই, তোমার মতো সুপুরুষ খুঁজে পেলাম না, আর বিয়ে হল না: পল্লবী

এই বাবা কাজের সূত্রে মুম্বই থাকতে থাকতে ইরা আন্টিকে ভালবাসলেন। বিয়ে করে সংসারও পাতলেন। কলকাতা সহজে মেনে নেয়নি বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় বিয়ে।

Advertisement

পল্লবী চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৩
Share:

বিশ্বজিৎ-কে নিয়ে জন্মদিনে কলম ধরলেন পল্লবী

নায়ক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সে কি যেমন তেমন করে হয়?

Advertisement

আগের দিন বা পরের দিন বড়সড় উদ্‌যাপন। কলকাতায় থাকলে আমাদের দমদমের বাড়িতে উত্তমকুমার, তরুণকুমার, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ থেকে শুরু করে প্রায় গোটা টলিউড হাজির। কেক কাটা, খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে এলাহি কাণ্ড। কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকলে সেখানেও একই ঘটনা। রাজ কপূর, ধর্মেন্দ্র, মনোজ কুমার, মালা সিনহা, আশা পারেখ, ওয়াহিদা রেহমান মিলিয়ে হইহই কাণ্ড! আমি আর আমার দাদা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তখন খুবই ছোট। কিছুই বুঝতাম না। শুধু এটুকু বুঝতাম, বাবার জন্মদিন হচ্ছে!

জন্মদিনে কিন্তু বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এক্কেবারে ঘরোয়া। মাসি, পিসি, মামাবাড়ির সবাইকে নিয়ে পাত পেড়ে বসে খাওয়া চাই তাঁর। আমার বাবা বাড়ির রান্না ভীষণ ভালবাসতেন। মা রত্না চট্টোপাধ্যায়ের হাতের বিউলির ডাল, আলু পোস্ত, ঝাল ঝাল ডিমের কষা, পাঁঠার মাংস... জন্মদিনের প্রিয় পদ। বাবার দাবি ছিল, ‘‘সারা বছর যেমন তেমন। বছরের একটা দিন গুছিয়ে খাব।’’ ওই একটি দিন টলিউড আর বলিউডের নাম করা এই নায়কের চূড়ান্ত অনিয়মের দিন। মা ওই পদগুলোই রাঁধতেন। বাবা হাপুস-হুপুস করে খেতেন। বাকি দিন বাবার নিয়ম বাঁধা।

Advertisement

আমাদের বাবা তারকা। এটা ছোট থেকেই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম। তা বলে আমরা কিন্তু তারকা-সন্তান হতে পারিনি! কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আমরা ইচ্ছে হলেই বাবার সঙ্গে লেপ্টে থাকতে পারতাম না। বাবা আমাদের চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে পারতেন না। এক বার সবার সঙ্গে সম্ভবত ভিক্টোরিয়ার সামনে ফুচকা খেতে দাঁড়িয়েছিলেন। তাও টুপিতে মুখ ঢেকে, রোদচশমা পরে। তাতেও রেহাই পাননি! ছেঁকে ধরেছিল সবাই বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। আমরা শ্যুটিং দেখতে যাওয়ার অনুমতি পেতাম না। কদাচিৎ গেলেও বাবা নিজের সন্তান বলে কোনও বাড়তি আদিখ্যেতা দেখাতেন না। এমনকি যখন তখন বাবার থেকে উপহারও পেতাম না। মায়ের কড়া নির্দেশ, ‘‘মুঠো মুঠো উপহার দিয়ে ছেলে-মেয়েকে বিগড়ে দিও না। পুরস্কার পাওয়ার মতো কাজ করলে উপহার পাবে।’’ বাবা অবশ্য আমাদের উপহার দেওয়ার শখ মিটিয়েছিলেন অন্য ভাবে। কাজের জন্য দেশের নানা জায়গায় বা বিদেশে, যখন যেখানে যেতেন, আমাদের জন্য অনেক উপহার নিয়ে আসতেন। এ ভাবে দিলে তো মা আর বারণ করতে পারবে না!

স্ত্রী ইরা এবং মেয়ে সম্ভাবীর সঙ্গে বিশ্বজিৎ।

এই বাবা কাজের সূত্রে মুম্বই থাকতে থাকতে ইরা আন্টিকে ভালবাসলেন। বিয়ে করে সংসারও পাতলেন। কলকাতা সহজে মেনে নেয়নি বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় বিয়ে। সহজে ক্ষমাও করেনি। খুব যে মনখারাপ করত বাবার জন্য, সেটাও নয়। কারণ, ছোট থেকে বড় হয়েছি আমরা বাবার ব্যস্ততা দেখে। আমরা ঘুমোতাম, বাবা কাজে যেতেন। বাবা যখন ফিরতেন তখনও আমরা দিনের শেষে ঘুমের দেশে! অনেকে তাই বাবাকে নাকি মজা করে বলতেন, ‘‘তোর ছেলেমেয়েরা তো শুয়ে শুয়েই বড় হয়ে গেল!’’ কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর এলেই ভীষণ খাঁ খাঁ করত সব কিছু। মুম্বইয়ে যত দিন বাবার সংসার হয়নি আমরা তো সেখানে গিয়ে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করতাম! বাবাকে কাছে পেতাম। সেটাও বন্ধ! মনখারাপের চোটে শেষে বাবাকে পোস্ট কার্ডে ফুল এঁকে পাঠাতে শুরু করলাম। কতই বা তখন বয়স! কত কার্ড পোস্ট করেছি ঠিকানা ছাড়াই। কত কার্ডে থাকত ভুল ঠিকানা। কিন্তু কার্ড জুড়ে লাল গোলাপটা ঠিক আঁকা থাকত। আরও ছোট বেলায় বাবাকে নিজের হাতে গ্রিটিংস কার্ড বানিয়ে দিতাম। কিন্তু ভয়ে কোনও দিন বাবাকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি, ‘‘বাবা তুমি কার্ডগুলো পেয়েছিলে? কখনও খুলে দেখেছে?’’ যদি বাবা বলেন, ‘‘না তো পাইনি!’’ অথবা, ‘‘দেখেছি। কিন্তু উত্তর দেওয়া হয়নি’’.... এই উত্তরগুলো যে আমি নিতে পারব না।

বাবাকে নিয়ে কোনও অভিমান নেই। আফশোসও নেই। কোনও রাগ নেই ইরা আন্টিকে নিয়ে। বরং তাঁকে কুর্নিশ, তিনি ৮৫ বছরের বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়কেও আগের মতোই ভালবাসেন। চোখে হারান! ছোট বোন সম্ভাবীকে নিয়ে অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা মনে কোনও গোপন হিংসেও নেই। ওঁরা আমার বাবার ভালবাসা! ওঁদের হেয় করলে যে বাবাকে অসম্মান করা হবে।

তবে অবাক হই বাবাকে দেখে! ৮৫ বছরের টগবগে তরুণ! এখনও কী প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা! আগামী কালের কাজ আজই করে ফেলছেন। ছুটছেন, নিজের কাজ ছটফটিয়ে নিজেই সেরে ফেলছেন। যে কোনও কাজ বাবার যেন বাঁ হাতের খেলা। যে কোনও বিষয় নিয়ে এখনও অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন।

বাবা, তুমি বহু বার অনুযোগ করেছ, ‘‘মাকু আর কবে তুই ঘরে-বরে থিতু হবি?’’ আজ, জন্মদিনে তোমার সেই প্রশ্নের জবাব দিই? বিশ্বাস কর, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আকর্ষণে আমি পল্লবী চট্টোপাধ্যায় এখনও বুঁদ। তোমার মতো সুপুরুষ আর খুঁজেই পেলাম না! আমার কী করে বিয়ে হবে, বল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন