Music concert

রবীন্দ্রকাব্যে রাগসঙ্গীতের বন্ধন! মঞ্চে শ্রীকান্ত-তেজেন্দ্রকে দিশা দেখাবেন জয় গোস্বামী

জয় গোস্বামী জানান, এই অনুষ্ঠানে তিনি তেজেন্দ্রনারায়ণ এবং শ্রীকান্তের সঙ্গে কাজ করে গান সম্পর্কে নতুন বহু কিছু জানতে পেরেছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ১৫:৫৪
Share:

এক মঞ্চে জয় গোস্বামী, পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ, শ্রীকান্ত আচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

সুরের কোনও বেড়াজাল নেই। আবিশ্ব সুরের একটিই ভাষা। সেই সুর বিভিন্ন অঞ্চলে, দেশে বা স্রষ্টার ভান্ডারে আলাদা রূপ পেয়েছে। কিন্তু কোনও গানই সেই সাত সুরের ঊর্ধ্বে নয়। সেই সাতটি সুরের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সমস্ত গান। সেই সাত সুর দিয়ে তৈরি নানা রাগ-রাগিনীর উপর ভর করে নিজেও গান রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তাও তাঁর গান স্বতন্ত্র। রাগনির্ভর গান হলেও, এক বার শুনেই বলে দেওয়া যায় সেগুলি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তেমনই কিছু গান মিলিয়ে দিল সরোদবাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, কবি জয় গোস্বামী ও গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যকে।

Advertisement

অনুষ্ঠানের নাম ‘রবি রাগ পথে’। তেজেন্দ্রনারায়ণ জানান, এর আগে আলাদা করে জয় গোস্বামী ও শ্রীকান্তের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে এই প্রথম তিনজন একসঙ্গে। তিনি বলেন, “এই অনুষ্ঠানের মূল দিশা রবীন্দ্রনাথ। জয় রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ করবেন। সেই কবিতাগুলোই সুতো বাঁধার কাজ করবে এই অনুষ্ঠানে। রবীন্দ্রনাথ অনেকের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রয়োগেও তাঁর বুৎপত্তি বোঝা যায়।”

রাগরাগিনীর প্রভাব থাকলেও, গানে কাব্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই প্রয়োজনে একই গানে দু’টি রাগেরও সংযোগ ঘটেছে। যার ফলে গানের ব্যাপ্তি আরও বেড়েছে। তাই রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের রাগ নিজের কাব্যসৃষ্টিতে প্রয়োগ করেছিলেন, তা উঠে আসবে এই অনুষ্ঠানে, জানান তেজেন্দ্রনারায়ণ। মূলত উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠান।

Advertisement

অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে শ্রীকান্ত আচার্য জানান, এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে রাগসঙ্গীতের মেলবন্ধন সরাসরি নেই। এই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছেন জয় গোস্বামী। ভাবনাও তাঁরই। সেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে রাগসঙ্গীতের যে যোগাযোগটি ঘটবে, তা রবীন্দ্রনাথের গানের অর্থের দিক থেকে, সুরের দিক থেকে নয়। শ্রীকান্ত বলেন, “জয়দা রবীন্দ্রনাথের যে কাব্যটি পড়বেন, সেখান থেকেই তেজেন্দ্রর বাজনা ও আমার গান দিশা পাবে। অনুষ্ঠানের দিকনির্দেশ করবে জয়দার পাঠ।”

জয় গোস্বামী জানান, এই অনুষ্ঠানে তিনি তেজেন্দ্রনারায়ণ ও শ্রীকান্তের সঙ্গে কাজ করে গান সম্পর্কে নতুন বহু কিছু জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে ২০০২ সাল থেকে বহু বার অনুষ্ঠান করেছি। তিনিই বললেন, ২২ শ্রাবণ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করবেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে যে সব রাগ ব্যবহার করেছেন, সেগুলিকে কেন্দ্র করে। রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর একটি গানেই একাধিক রাগের ব্যবহার করেছেন। তেজেন্দ্র ও শ্রীকান্ত, দুই সঙ্গীতজ্ঞ রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে আলোচনা করেন। মহড়ায় ওঁদের মধ্যে থেকে সঙ্গীত বিষয়ে আমার প্রাপ্তি হয়েছে। যেমন বারো স্বরের ভৈরবী শুনতে পেরেছি। চারযোগী মল্লার সম্পর্কে জানতে পেরেছি, অর্থাৎ চার জন যোগী এই মল্লার তৈরি করেছেন।”

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে নানা পরীক্ষামূলক কাজ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে স্বরলিপিতে বদল এনেই কখনও সেই গানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের, কখনও বা পাশ্চাত্য সঙ্গীতের রূপ দেওয়া হয়েছে। গানের ভাব ও বার্তা বদলে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। এই প্রসঙ্গে তেজেন্দ্রনারায়ণ বলেন, “শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, যে কোনও গীতিকার বা সুরকারেরই নিজস্ব সৃষ্টি ও নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেই গিয়েছিলেন, ‘আমার কাজ যেন আমার মতোই থাকে।’ স্বরলিপি কখনওই গানের সম্পূর্ণ রূপ দেয় না। তার উপরে নানা প্রলেপ থাকে। স্বরলিপি হল একটা কাঠামোর মতো। সেটাকে সরিয়ে ফেললে গানটাই চিনতে পারা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ এমনই একজন সঙ্গীতস্রষ্টা, যাঁর প্রতিটি গান শুনলে বোঝা যায়, এটি তাঁরই গান।”

কোনও গানেরই মূল কাঠামো বা স্বরলিপি বদলানো যায় না। গায়কির বদল হতে পারে। কিন্তু গানের অর্থ বা স্বরলিপি বদলে দেওয়ার পক্ষে নন সরোদবাদক। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথের কোনও একটি গানে হয়তো নির্দিষ্ট একটি ছন্দ রয়েছে। তার নেপথ্যেও কারণ রয়েছে। সেটা বদলে দেওয়া যায় না। সেই অধিকার কারও নেই।”

উল্লেখ্য, আগামী ৯ অগস্ট জিডি বিড়লা সভাঘরে মঞ্চস্থ হবে এই ‘রবি রাগ পথে’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement