ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ফোন করলে একবারে সাড়া মেলা দুষ্কর! টেক্সটের জবাবও ঢিমেতালে। বলিউডের বিগ প্রজেক্ট কি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ‘স্নব’ করে দিল? উঁহু, এমন অভিযোগের খবর তো নেই। তা হলে? প্রশ্নটা পেড়ে ফেলা গেল। জবাব এল, ‘‘ভয়ঙ্কর ব্যস্ত! ইউরোপ থেকে ফিরেই সুজয় ঘোষের শর্ট ফিল্ম ‘অনুকূল’ করলাম। গোটা দিনটা চলে যেত ওখানে। তার পর অন্য একটা ছবির লুক টেস্ট। নিজের প্রযোজনায় ওয়েব সিরিজ। একেবারে ঘেঁটে ছিলাম।’’ আজ মুম্বই চলে যাচ্ছেন নতুন ছবির কাজে।
মুম্বইয়ে তাঁর আগামী ছবি যে অনুষ্কা শর্মার প্রযোজনায় সেটা আর চাপা নেই। শোনা যাচ্ছে, অনুষ্কার বিপরীতেই পরমব্রত। যদিও তিনি এ ব্যাপারে কিছু ভাঙতে রাজি হলেন না। ‘পরি’র জন্য ক্লিন শেভ্ন লুকে রয়েছেন। তাতে বয়সটা পঁচিশের কোঠায় দেখতে লাগছে। নিজেও জানেন সে কথা, ‘‘এটা আমার অ্যাডভান্টেজ। দাড়ি কাটলে এক ঝটকায় বয়স কমে যায়। আবার দাড়ি আর লুক সেট করে ভারিক্কি চেহারাও দেওয়া যায়। এই গল্পের জন্য একটা ইনোসেন্স দরকার ছিল।’’
ছবির প্রস্তাবটা পেলেন কী করে? জানালেন, ‘পরি’র পরিচালক প্রসিত রায় বাঙালি। তিনি পরমব্রতর কথা জানতেন। তার পর কাস্টিং এজেন্সি, চিত্রনাট্য, লুক টেস্টের ধাপ পেরিয়ে অবশেষে... পরমব্রত বলিউডে প্রথম পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘কহানি’ দিয়ে। তার পর গোটা দু’য়েক ছবি করলেও বড় প্রজেক্ট সে ভাবে হাতে আসেনি। নিজেও স্বীকার করলেন, ‘‘এটা আমার কাছে সত্যিই বড় প্রজেক্ট। অনেক প্রস্তাবই আসতে থাকে, কিন্তু সব তো করার মতো হয় না।’’
আরও পড়ুন: ছোট পরদা থেকে সরলেন
বাংলার অভিনেতারা বলিউডে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। কাস্টিং এজেন্সিতে যোগাযোগ, টুকটাক অডিশন চলতেই থাকে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করেন না প্রায় কেউই। মুম্বইয়ে কাজের জন্য গিয়ে ঘাঁটি গে়ড়ে বিফল হয়ে ফিরে আসার তালিকাটাও কম নয়। পরমব্রতকে অবশ্য এত কিছু করতে হয়নি। ‘কহানি’ প্রাথমিক জার্নিটা সহজ করে দিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আগে মুম্বইয়ে কাজ করা মানে ওখানে থেকে রীতিমতো তদবির করতে হতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ওরা নিজেরাই খোঁজ রাখছে আঞ্চলিক ছবিতে কারা ভাল কাজ করছে। খান-কুমারদের লিগটা একেবারে আলাদা। তার বাইরেও ভাল ছবি হচ্ছে। সেগুলোর জন্য ওরাও খোঁজ রাখে রিজিওনাল ছবিতে কারা ভাল কাজ করছে। এটা আমাদের পক্ষে খুব ভাল একটা দিক।’’
পরিচালক প্রসিতের সঙ্গে অনুষ্কা আর পরমব্রত
অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে সাক্ষাতের গল্পটা বলুন একটু। হেসে ফেললেন ‘পরি’র অভিনেতা। ‘‘খুবই ভাল অভিজ্ঞতা। কাজ নিয়ে ভীষণ পেশাদার। কী করছে, কী ভাবে করছে সবটা পরিষ্কার ওর কাছে। একদম চিল্ড আউট। মজা করছে, হাসছে। বলিউডের হিরোইন বলতে আমাদের কাছে যে ইমেজটা ভেসে আসে, সেটা একেবারেই নেই অনুষ্কার।’’
বলিউ়ড তো হল। এখানেও কম কাজ নেই তাঁর। ‘সমান্তরাল’, ‘যখের ধন’, ‘হোমল্যান্ড’, ‘সেনাপতি’, ঋক বসুর আগামী ছবিতেও তিনি... অক্টোবরে নিজের পরিচালনায় ছবি। জানুয়ারি পর্যন্ত প্যাক্ড শিডিউল। পাহাড়প্রমাণ কাজের এনার্জি পান কোথা থেকে! ওই যে, গরমের ছুটির ট্রিপ। গোটা বছরের অক্সিজেনের জোগান আসে ওই সময়টা থেকেই। অন্যান্য বার এক মাসের ট্রিপ হয়। এ বার মোটে ১১ দিন।
হল্যান্ড থেকে প্রাগ একা ড্রাইভ করেছেন! বান্ধবী ইকা যে একেবারেই ড্রাইভিং জানেন না। পরমব্রতের কথায়, ‘‘আমি ড্রাইভ করতে ভালবাসি। আর ইউরোপের রাস্তায় তো কথাই নেই। পুরো জার্মানির মধ্য দিয়ে প্রাগ পর্যন্ত দুর্দান্ত একটা রোড ট্রিপের অভিজ্ঞতা হল।’’
ইকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অনেক দিনের। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ট্র্যাক রেকর্ড অনুযায়ী এটা দীর্ঘস্থায়ী প্রেম। অনেকেই অবাক আপনাদের সম্পর্কটা নিয়ে। লং ডিসট্যান্স বলেই কি এটা সম্ভব হল? জোরে হেসে ফেললেন, ‘‘লং ডিসট্যান্স বলেই স্মুদ চলছে বলছেন তো! এখন বোধহয় একসঙ্গে থাকলেও সমস্যা হবে না। সমস্যাগুলো হয় সম্পর্কের প্রথম দু’বছরে। তার পর একে অপরকে ভাল ভাবে চিনে গেলে, মানুষটা যে রকম তাকে সেই ভাবেই যদি ভাল লাগে, তা হলে আর সমস্যা হয় না।’’
পরমব্রত-ইকার একটা কমন বন্ডিং অবশ্যই সিনেমা। ‘‘পুরনো বাংলা ছবি অনেক দেখেছে। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সব ছবি দেখা। এখনকার মধ্যে আমি রেকমেন্ড করলে দেখে। ওদের সিনেমার সেন্সিবিলিটিটা আলাদা। সিনেমা দেখাটা একটা সিরিয়াস এক্সারসাইজ।’’
পরমব্রত ফাঁস করলেন, সত্যজিতের বদলে ঋত্বিক ঘটকের ছবি ইকার বেশি পছন্দের। তবে ভাল লাগে সত্যজিতের ছোটগল্প। যদিও ফেলুদা খুব একটা পছন্দ নয়। তা হলে ‘অনুকূল’ নিশ্চয়ই ওঁর ভাল লাগবে। জবাব এল, ‘‘লাগার তো কথা।’’
নিজের সব ছবি দেখতে বলেন? ‘‘না না, বেছে বেছে।’’ কোনগুলো বাদ দেন, বলুন না? ‘‘পাগল নাকি,’’ ফিচেল হেসে জবাব দিলেন পরমব্রত!