ছবির পুরোটা জুড়েই খিলজি

সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতী (ছবির নাম যতই পাল্টে যাক, ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোন পদ্মাবতীই)। রাজপুত মহারাজা রাওয়াল রতন সিংহের (শাহিদ কপূর) মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সুন্দরী স্ত্রী।

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

পদ্মাবত ছবির পোস্টার।

পদ্মাবত

Advertisement

পরিচালনা: সঞ্জয় লীলা ভন্সালী

অভিনয়: দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিংহ, শাহিদ কপূর

Advertisement

৫.৫/১০

একটা ছবি গোটা দেশ জুড়ে সাইক্লোনের মতো ঝড়় তুলে দিল। একটা ছবি নিয়ে এত ভাঙচুর, তাণ্ডব, রাজনীতি, চাপানউতোর! কী এমন আছে সেই ছবিতে? রাজপুতদের সম্মানহানি হওয়ার মতো সত্যিই কি দায়জ্ঞানহীন কোনও উপাদান রয়েছে তাতে? খিলজির সঙ্গে রানি পদ্মাবতীর ‘অকল্পনীয়’ রোম্যান্স দেখানোর সাহসে ভর করেছিলেন নাকি সঞ্জয় লীলা ভন্সালী? সমস্ত প্রশ্নের অবসান হয়ে গেল বুধবারের সন্ধেয়, ছবির প্রিভিউ হওয়া মাত্র। মুম্বইয়ে অবশ্য তারও এক দিন আগে (স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ের সুবাদে)। ভন্সালী নিজস্ব নিয়মে তাঁর কাজটুকুই করেছেন। মূলধারার ভারতীয় ছবির মাপজোক অনুযায়ী ‘ম্যাগনাম ওপাস’ বানিয়েছেন তিনি। নিজের সিগনেচার স্টাইলে, যা বরাবরের মতোই জমকপূর্ণ।

সঞ্জয় কোথাও এতটুকু সীমা লঙ্ঘন করেননি, যাতে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগ আঘাত পায়। আবার অযৌক্তিক দাবির মুখে এমন আপসও করেননি, যাতে তাঁর নিজের শিল্পবোধও ক্ষুণ্ণ হয়। তবে মুশকিল একটাই। গল্পটা বড্ড চেনা! লোকগাথা হিসেবে কিংবা অবন ঠাকুরের ‘রাজকাহিনি’র একটা ছোট গল্প হিসেবে ‘পদ্মিনী’ খুবই পরিচিত। ছবির প্লটও বয়ে গিয়েছে সেই চেনা খাতে। বরং এ যুগের প্রেক্ষিতে জহর ব্রতের মতো বিষয়কে আত্মসম্মান রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে দেখাটা গন্ডগোলের। তবে নির্মাতারা ‘এপিক’-এর মান খাটো করেননি। ছবি শুরুর আগেই বলে দিয়েছেন, সতীদাহপ্রথা সমর্থন করেন না।

সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতী (ছবির নাম যতই পাল্টে যাক, ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোন পদ্মাবতীই)। রাজপুত মহারাজা রাওয়াল রতন সিংহের (শাহিদ কপূর) মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সুন্দরী স্ত্রী। জলে-জঙ্গলে পো়ড় খাওয়া শিকারিদের মতো বিচরণ তার। নৃত্যগীতেও পারদর্শিনী। তবে ‘বাজিরাও মস্তানি’র মস্তানিও মনে হতে পারে তাকে! মস্তানির মতো সেও ভাবনা, চাহিদা, অনুভূতি, প্রেম বা ব্যথা প্রকাশ করে মাথা উঁচু করে। তবে সে প্রকাশে তেমন ওঠাপড়া নেই। দীপিকার এক পরদায় বাঁধা অভিনয় বরং একটু চোখেই লাগে। তবে তাঁকে দেখিয়েছে স্বপ্নের মতো। আগের দুই ছবির মতোই যত্ন করে তাঁর চরিত্রটাকে সাজিয়েছেন পরিচালক।

সে ভাবে দেখতে গেলে প্রত্যেককেই মনে হবে কস্টিউম ড্রামার চরিত্র। এত নিখুঁত তাদের বহিরঙ্গের সাজ। তবে দীর্ঘদেহী রাজপুতদের যে গল্প ইতিহাসের পাতায় মেলে, তার সঙ্গে রাজা রতন সিংহের ভূমিকায় শাহিদ কপূরের চেহারার খুব একটা মিল পাওয়া গেল না। যদিও তাঁর মাপা অভিনয় নজর কাড়ে। শোনা গিয়েছিল, নিজের পরদা উপস্থিতির দৈর্ঘ্য নিয়ে ক্ষোভ ছিল শাহিদের। কিন্তু তিনি যথাযোগ্য স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন। ছবির আসল সম্পদ অবশ্য রণবীর সিংহ। ছবির নাম ‘পদ্মাবত’ হলেও তার আগাগোড়া জুড়ে খিলজিই! যে চরিত্রের সবটাই নেতিবাচক, হীনতায় ভরপুর। রণবীর যথাসাধ্য অভিনয় করেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চড়া মনে হতে পারে অবশ্য। জিম সর্ভের চরিত্রের মাধ্যমে খিলজির সমকামিতার একটা দিক পরিচালক রাখতে চেয়েছিলেন চিত্রনাট্যে। সে চেষ্টা হাস্যকরই! যথাযথ লেগেছে অদিতি রাও হায়দরিকেও।

সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমাটোগ্রাফির উপর নির্দেশক ভাগ্যিস ভরসা রেখেছিলেন! তিনি কখনওই ভন্সালীর এপিক ছবির সুন্দর সুন্দর ফ্রেমে নড়চড় ঘটান না। কিন্তু সেই তুলনায় ছবির আবহ কিংবা সংগীতে মৌলিকতা নেই। এ ছবি থ্রি ডি-তে দেখার বাড়তি কোনও সুবিধেও তেমন বোঝা গেল না। তবে ছবিতে আপত্তিকর যে কিছু নেই, সেটা কানায় কানায় ভর্তি হলে দর্শকদের ক্ষণে ক্ষণে হাততালিতেই দিব্যি মালুম পড়বে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন