পাক শিল্পীদের বলিউডি ছবিতে নেওয়া যাবে না, এমন কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক উগ্র জাতীয়তাবাদী চাপের কাছে নতি স্বীকার করে নিশ্চিন্তে ছবি মুক্তির জন্য কার্যত মুচলেকা দিতে হল ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ টিমকে। এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের আশ্বাসেও চূড়ান্ত ভরসা রাখা গেল না। আজ শনিবার ছবির প্রযোজকরা মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে পাক শিল্পীদের আর কখনও নেওয়া হবে না বলে কথা দিতে হয়েছে। তার পরই এমএনএসের তরফে জানানো হয়েছে, ছবি মুক্তি ঘিরে কোনও সমস্যা হবে না। ছবি মুক্তি ঘিরে যাবতীয় বিরোধিতাও বন্ধ করে দিচ্ছে তারা।
এ দিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ এবং এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরের সঙ্গে দেখা করেন পরিচালক কর্ণ জোহর এবং প্রোডিউসারস গিল্ডের প্রেসিডেন্ট মুকেশ ভট্ট। বৈঠক শেষে মুকেশ বলেন, ‘‘আমাদের খুব ভাল মিটিং হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির আবেগ নিয়েও কথা বলেছি আমরা। তবে দেশ আমাদের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আর আমি মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছি আর কখনও পাকিস্তানি অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করব না।’’ অন্য দিকে, বৈঠক শেষে রাজ ঠাকরে বলেন, “যে সব প্রযোজকরা পাক শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন সেনা কল্যাণ তহবিলে তাঁদের ৫ কোটি টাকা করে দিতে হবে।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরি সেনাশিবিরে জঙ্গি হামলার পরেই ফাওয়াদ খানকে ভারত ছাড়ার ফতোয়া দিয়েছিল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। ভারতের পাল্টা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং তার প্রেক্ষাপটে রাজ ঠাকরের এমএনএসের পাক শিল্পী বয়কটের ডাক একটু একটু করে বহুমুখী রোষের মুখে ঠেলে দিয়েছিল কর্ণের ছবিকে। কখনও হল-এ ভাঙচুরের হুমকি দিয়েছে এমএনএস, কখনও চার রাজ্যে ছবিটি না দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গল স্ক্রিন হলমালিকদের সংগঠন। এ সবের একমাত্র কারণ, এই ছবিতে রয়েছেন পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খান।
এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-কে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অ্যায় দিল...’-এর মুক্তিতে কোনও বিঘ্ন ঘটবে না। ওই সময় আইন-শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’ কিন্তু রাজনাথের আশ্বাসকে যে চূড়ান্ত ভরসা বলে ভেবে নিতে পারেনি টিম ‘মুশকিল’ তার প্রমাণ আজকের বৈঠক।
দিওয়ালির দু’দিন আগে, আগামী ২৮ অক্টোবর মুক্তি পাওয়ার কথা কর্ণ জোহর পরিচালিত ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে শুরু করে অনেকেই মনে করছেন, দেশে অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায়ে উঠেছে, তা এই ছবির পরিচালক-প্রযোজকদের প্রতিটি পদক্ষেপেই স্পষ্ট। অনেকে এ-ও বলছেন, সৃষ্টিশীল মানুষদেরও যে কোণঠাসা করে আপোষের রাস্তায় টেনে আনা যায়, নরেন্দ্র মোদী জমানা তার প্রমাণ। আর যাঁরা আপোষ না করে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের হয়রান হতে হয় নানা ভাবে।