রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। পূর্ণিমার মায়াবী রাত। খিচুড়ি প্রসাদ, নারকেল নাড়ুর আদর— না! এ বছর এর কোনওটার স্বাদই পাব না আমি। কারণ কলকাতা থেকে বহু দূরে কেরলের ইন্টিরিয়রের একটা গ্রামে বসে আমি লিখছি। ফিরব লক্ষ্মীপুজো পার করে। ফিরব মনকেমন নিয়ে। আসলে পুজো শেষ মানেই ছুটি শেষ। আবার কাজে ফেরার পালা। আর আমরা প্রত্যেকে যত বড়ই হই না কেন, ছুটি শেষ হয়ে গেলে সকলেরই মন খারাপ হয়। আমার তো ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মন কেমনের পারদ চড়ে।
আসলে ছোট থেকেই দুর্গাপুজোর নবমী কেটে গেলেই কোথাও যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করত। যতই আড্ডা, আনন্দ, হুল্লোড় হোক— কোথাও যেন একা হতে শুরু করতাম। দশমীর সকাল থেকেই বদলে যেত ঢাকের বোল। মিঠে হিমেল হাওয়ায় রোদ্দুরটাও বেশ আরামের মনে হত। এরপর একে একে সিঁদুরখেলা, মিষ্টিমুখ, ভাসানের নাচ— সবেতেই থাকতাম বটে তবে বয়ে বেড়তাম ওই মন কেমন। ঠাকুর জলে পড়লে তো কান্না পেয়ে যেত আমার।
ঠিক একই অনুভূতি হয় বেড়ানো থেকে ফেরার সময়। এই তো দেখুন, আর দু’টো দিন থাকব এখানে। কিন্তু এখন থেকেই মনে কোথাও বিসর্জনের সুর। এ বারের পুজোটা কেরলে কাটালাম। ছেলে, বর নিয়ে সপরিবারে। এখানে বসেই খবর পেলাম, নবমীর দিন কলকাতায় নাকি খুব বৃষ্টি হয়েছে। বন্ধুরা তো কেউ কেউ ফোনে বলল, তুই নেই, তাই এত বৃষ্টি। আবার কেউ বলল, ভালই করেছিস বেড়াতে গিয়ে।
ঝিনুক, মানে আমার ছেলে তো প্রায় রোজ জিজ্ঞেস করছে, মা কালীপুজো কবে? আমার মতোই স্বভাব হয়েছে ওর। পুজো শেষ হলেই যত না পরের পুজোর জন্য ওয়েট করতাম, অনেক বেশি কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যেত ঠিক পরের সেলিব্রেশনের। এই যেমন ধরুন, দুর্গাপুজোর প্রায় গায়ে গায়েই লক্ষ্মীপুজো। আবার কিছুটা গ্যাপ দিয়ে কালীপুজো। ফলে ঠিক পরের হুল্লোড়টা কবে সেটা হিসেব করতাম।
আমি বেহালায় যেখানে থাকি সেখানে খুব বড় করে কালীপুজো হয়। মেলা বসে। আমি তো বেরোতে পারি না। তবে ঝিনুক খুব এনজয় করে। এই যে পুজো শেষ, বেড়ানো শেষ, ছুটি শেষ বলে মন খারাপ হচ্ছে বটে তবে ওই যে মা আর ছেলের পরের হুল্লোড়ের হিসেব শুরু হয়ে গিয়েছে। আবার শুটিং ফ্লোরে ফেরা, ঝিনুকেরও স্কুল খুলে যাবে…। তবে মন কেমনটা ব্যাকফুটে রেখে হইচই তো চলবেই।
শুভ বিজয়া। ভাল থাকবেন সকলে।
আরও পড়ুন
ঘামের সঙ্গে খিচুড়ির কিন্তু একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে