খুদে সেলেবদের পুজোর প্ল্যান

কারও প্রথম মুম্বইপাড়ি, তো কারও চুটিয়ে তাসা বাজানো... পুজোর পরিকল্পনা নিয়ে আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি জনপ্রিয় কচিকাঁচারা।

Advertisement

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

ঈশান ও আর্শিয়া

​ভুতুর এ বার মুম্বইয়ে ঠাকুর দেখা

Advertisement

মুম্বইয়ে ‘ভুতু’র শ্যুটিং নিয়ে বেজায় ব্যস্ত বাংলার ভুতু ওরফে আর্শিয়া মুখোপাধ্যায়। পুজোয় তুমি কোথায় থাকবে, কলকাতা না মুম্বই? প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আগে আশির্য়া বলল, ‘‘জানো তো, আমি না একট চ্যানেলে বেস্ট ডেবিউ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি।’’ গলায় উচ্ছ্বাস ছোট্ট মেয়ের। ফিরে গেল প্রশ্নকর্তার উত্তরে, ‘‘আগে তো কখনও আমরা পুজোর সময় মুম্বই আসিনি, তাই এখানে প্যান্ডেলগুলোতে যাব ঠাকুর দেখতে। মা বলেছে, আমাদের তো মুম্বই ভাল করে ঘুরে দেখা হয়নি। তাই মুম্বইয়ের কাছাকাছি কোনও জায়গাতেও বেড়াতে যাতে পারি। তাই আমি খুব হ্যাপি! পুজোর সময় পাপা আসবে।’’ গলার স্বরেই মালুম হল আনন্দের পরিমাণ। রাত-দিন তো শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত, নতুন জামা কি কেনা হয়েছে? ‘‘অনেক...’’ অনেক মানে ক’টা? এ বার আর্শিয়া একদম চুপ। নতুন জামার হিসাব মেলাতে না পেরে করুণ গলায় বলল, ‘‘আমার না মনে পড়েছে না। দেখেছি, কিন্তু এখন মনে করতে পারছি না।’’ মুম্বইয়ে শ্যুটিংয়ে মেতে থাকলেও আর্শিয়া মিস করছে কলকাতার পুজো। কলকাতায় না থাকার একটু দুঃখ তো হয়েছে তার, কিন্তু দুঃখটা কিছুটা পুষিয়ে যাবে বাবা ও আরও একজন প্রিয় মানুষ পুজোর সময় তার কাছে আসার জন্য। কে তিনি? ‘‘শ্রীরাধা আন্টি।’’ আর্শিয়ার শ্রীরাধা আন্টি মানে সংগীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আর্শিয়াকে তাঁর মেয়ের মতো ভালবাসেন। বয়স পাঁচ হলেও আর্শিয়া তো এখন বড় সেলেব্রিটি। কলকাতা থেকে তার বাবা-মায়ের কাছে বিভিন্ন পুজো ওপেনিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ আসছে। মুম্বইয়ের দুই-একজন আত্মীয়ও তাঁদের আবাসনে আর্শিয়াকে নিয়ে গিয়ে অনুষ্ঠান করার জন্য নাছোড়বান্দা। কিন্তু মুখোপাধ্যায় দম্পতি চান, সেলেব্রিটি তকমা সরিয়ে এই চারটে দিন তাঁদের দুই মেয়ে ও বাবা-মাকে নিয়ে নিজেদের মতো করে কাটাতে।

নিতাইয়ের ঢাক বাজানো

Advertisement

পুজোয় ক’টা নতুন জামা হল? ‘‘বিশ্বজিৎ আঙ্কেলকে (সিরিয়ালের প্রোগ্রামার) ছুটি দিতে বলো। না হলে যাব কী করে?’’ স্বরে যেন একটু ঝাঁঝ পাওয়া যায় ‘মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য’ সিরিয়ালের নিতাই ওরফে ঈশানের। দোকানে গিয়ে শপিং করা না হলেও প্রায় প্রত্যেক দিনই একটা না একটা নতুন জামা হচ্ছে তার। কী করে? সেটে এই খুদে সকলের মন জয় করে নিয়েছে যে। তাই কো-আর্টিস্টরাই ঈশানের পছন্দ জেনে কিনে আনছে তার ফেভারিট কার্টুন ক্যারেক্টার আঁকা টি-শার্ট। শ্যুটিংয়ের সুবিধার জন্য আপাতত ঠাকুরপুকুরে থাকলেও আসলে তারা নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। পুজোর দিনগুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে সে চলে যাবে সেখানে। ‘খোকাবাবু’, ‘রাখি বন্ধন’, ‘পিতা’-র পর ‘মহাপ্রভু’তে অভিনয় করছে ঈশান, তাই পুজোর আগে যে কাজের সময় বেড়ে যায়, তা তার জানা। পুজোর দিনগুলো সে কী করবে? ‘‘ক্যাপগান ফাটাব। দাদু গান কিনে দেবে। আর অনেক ক্যাপ। বন্ধুদের সঙ্গে খুব খেলব, চিকেন পপকর্ন খাব।’’ আইসক্রিম-চকলেট? ‘‘আইসক্রিম-চকলেট খেলে ভুঁড়ি হয়ে যাবে। তাই শুধু ক্রিম কেক খাই। তা ছাড়া ঠান্ডা লেগেছে তো! তাই আইসক্রিম খাব না।’’ চার বছরের খুদের এই রকম ডায়েট সচেতনতা অবাক করে বইকী। অঞ্জলি দেবে না? ‘‘দেব তো।’’ মা দুগ্গার কাছে কী চাইবে? ‘‘কিছুই চাইব না।’’ এই রকম দার্শনিক উত্তরের পর ঈশান জানাল, ‘‘পুজোর সময় ঢাক বাজাব। আমাকে তো তো দাদু ঢাক কিনে দিয়েছে।’’ ব্যাপারটা ঠিক কী? জানা গেল ঈশানের মা মৌমিতার কাছ থেকে, ‘‘ঈশানের ছন্দের জ্ঞানটা আসলে ঈশ্বরপ্রদত্ত। কেউই ওকে শেখায়নি, সহজাত ভাবেই প্রায় দু’বছর বয়স থেকেই ও রীতিমতো ছন্দে ঢাক বাজাতে পারে। এই জন্য বাবা ওকে তাসা কিনে দিয়েছেন। পুজোর ক’টা দিন সকাল-সন্ধে আরতির সময় ঢাকিদের সঙ্গে ও তাসা বাজায়!’’


সম্ভাবী

ঝালমুড়ি নয়, ঝুমুরের চাই আইসক্রিম

একটা দুটো নয়, কুড়িখানা জামা হয়েছে ‘ঝুমুর’ সিরিয়ালের লিড ঝুমুরের। মানে গোবরডাঙা অক্সবো ইংলিশ স্কুলের ছাত্রী সম্ভাবীর! চারটে দিন পুজোয় কুড়ি খানা জামা কখন পরবে? ‘‘মহালয়া থেকে নতুন জামা পরতে শুরু করেছি।’’ নেতাজি নগরে থাকলেও পুজোর ছুটিতে সে চলে যাবে গোবরডাঙায় তাদের পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে আছে তার দিদা, দাদু, কাকা, দিদি, ভাই, বোন। পুজোর সময় এঁদের সঙ্গে হইচই করে সকাল-সন্ধে কাটে তার। ঝালমুড়ি নয়, ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে সম্ভাবীর আইসক্রিম চাই-ই চাই। ‘‘রোজ একটা করে চাই।’’ আর দুপুরে চিকেন না মাটন? ‘‘চিকেনের হাড্ডি!’’ যদিও সম্ভাবীর মা সায়রীর প্ল্যান, মেয়েকে কলকাতায় ঠাকুর দেখানো।

অস্মি

শাড়ি-গয়না পরে জুজু দেবে অঞ্জলি

সদ্য স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে অস্মি ঘোষের। এখন সে বেশ হলিডে মুডে আছে। এই হলিডে মুড কি পুজো পর্যন্ত চলবে? প্রশ্নটা শুনে হেসে ফেলল অস্মি অর্থাৎ ‘অন্দরমহল’-এর জুজু। ‘‘পুজোর সময় কলকাতার বাইরে কখনও যাইনি। ভাবতেও পারি না এই সময় কলকাতার বাইরে থাকার কথা।’’ জি ডি বিড়লা স্কুলের ক্লাস এইটের এই ছাত্রীর পুজো শপিং কমপ্লিট। এত সময় পেলে কী করে? মুচকি হেসে অস্মি বলল, ‘‘সময় বের করে নিতে হয়!’’ টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে অস্মি বরাবরই ওস্তাদ। ‘দুয়োরানি’ অস্মির ডেবিউ সিরিয়াল। তার পর ‘সতী’, ‘ইচ্ছেনদী’, ‘জলনূপুর’ ইত্যাদি সিরিয়াল, ‘ফোর্স’, ‘ষড়রিপু’-র মতো সিনেমা এবং বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছে সে। ‘‘আজ অবধি আমি শ্যুটিংয়ের জন্য স্কুল যাইনি, খুব কমই হয়েছে। খুব এমারজেন্সি না হলে স্কুল অ্যাবসেন্ট করি না,’’ গলায় গর্বের রেশ। এ বার পুজোয় কী প্ল্যান? ‘‘অন্যান্য বারের মতো এ বারও বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখব। মা তো এই ক’টা দিন দারুণ দারুণ সব পদ রান্না করে। সে সব প্রাণ ভরে খাব। আর প্রতি বছরের মতো এ বারও শাড়ি-গয়না পরে সেজেগুজে অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেব।’’ বন্ধুদের সঙ্গে একা ঠাকুর
দেখতে যাওয়া? প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেলল অস্মি, ‘‘এখনও মা-বাবা অনুমতি দেয়নি বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়ায়। হয়তো কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে মা দিয়ে আসবে। সেখানে বসেই আমরা আড্ডা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন