First Death Anniversary Of Bharat Dev Barman

শুনেছি বাবার সমর্থনেই আমাদের মা নাকি অভিনয়ে আসতে পেরেছিলেন, আমরাও অভিনয় দুনিয়ায় ওঁর জন্যই

“বাড়ির খুঁটিনাটি তো বটেই, কে কী খেতে ভালবাসে, সেটাও জানতেন বাবা। মা যে এত ব্যস্ত তা বুঝতেই দেননি উনি।”

Advertisement

রাইমা সেন

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ২০:২২
Share:

রাইমা সেন আর তাঁর বাবা ভরত দেববর্মণ। ছবি: ফেসবুক।

মুনমুন সেনকে নিয়ে সাধারণের কৌতূহল একরকম। আমাদের মা যে দিদা সুচিত্রা সেনের মেয়ে! তাঁর স্বামী ভরত দেববর্মনকে নিয়ে কৌতূহল সম্পূর্ণ বিপরীত। সেনবাড়ির জামাই কেন এত অন্তরালে?

Advertisement

আমরা জানি, বাবা নেপথ্যে থেকে একটা বড় ভূমিকা না নিলে সেন পরিবারের এই প্রজন্ম এত সমৃদ্ধ হত না। ছোট থেকেই দেখেছি, বাড়ির খুঁটিনাটি সব বাবার নখদর্পণে। শুধু তা-ই নয়, কে কী খেতে পছন্দ করে, সেটাও জানতেন বাবা। মায়ের ব্যস্ততা আমরা এক মুহূর্তের জন্যও বুঝতে পারিনি। ভীষণ ঘরোয়া একজন মানুষ নেপথ্যে থাকতেই পছন্দ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তার পরেও প্রয়াণের খবর ছড়াতেই সারা বিশ্বের কেউ না কেউ এসেছিলেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের ছেলেকে শেষ বিদায় জানাতে।

বাবার পছন্দ মেনেই ঘরোয়া ভাবে বাবাকে স্মরণের আয়োজন করা হয়। আমাদের খুব কাছের কিছু লোকজনকে এ দিন ডেকেছিলাম। যাঁরা বাবাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, জেনেছেন। পুজোর আয়োজন করেছিলাম ওঁর আত্মার শান্তিকামনায়। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল ছবি। সেই ছবি ঘিরে বসেছিলাম আমরা। বাবা থাকতে যে ভাবে বসতাম। নানা কথায় স্মরণ করেছি বাবাকে। যেমন এখন আনন্দবাজার ডট কম-এর মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে করছি।

Advertisement

রাজপরিবারের সন্তান যে এত মাটির কাছাকাছি থাকতে পারেন, বাবাকে না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যিই কষ্ট। অগাধ পাণ্ডিত্য, আভিজাত্যে মোড়া এক ব্যক্তিত্ব, যাঁকে কথা বলতে কম দেখা যেত। বললে কিন্তু গুছিয়েই আড্ডা দিতেন। রসিকতাও করতেন সুযোগ পেলে। এমনিতে মিশুকে, কেবল মিতভাষী। বাড়িতে অতিথি এলে সেই মিতভাষীই আবার বাক্যবাগীশ! যে কোনও বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা তাঁর। বলতে বাধা নেই, বাবার সমর্থন না থাকলে যেমন মা অভিনয়ে আসতে পারতেন না, তেমনই আমরাও। বিনোদন দুনিয়ার ভাল-মন্দ নিয়ে অনায়াসে আড্ডা দিতাম আমরা। বন্ধুর মতো শুনতেন বাবা। প্রয়োজনে পরামর্শ দিতেন।

শরীরে রাজবংশের রক্ত বইলেও ভরত দেববর্মণকে কেউ, কোনও দিন রাগতে দেখেননি। আমাদের সঙ্গে কখনও উঁচু গলায় কথা বলেননি। ছবি বা অভিনয়ের সমালোচনার সময় সেই বাবাই নিষ্ঠুর, কট্টর! আমাদের খারাপ লাগতে পারে— এ সব না ভেবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। সাময়িক সত্যিই খারাপ লেগেছে। পরে দেখেছি, এতে উপকারই হয়েছে। পরবর্তীকালে অভিনয়ে উন্নতি হয়েছে।

পিছন ফিরে দেখতে বসে বাবার কত কথাই মনে পড়ছে! শৌখিন মানুষটির সুগন্ধির প্রতি কী যে দুর্বলতা! নানা গন্ধের কোলন রাখা থাকত তাঁর জন্য। পোশাকেও পরিপাটি থাকতে ভালবাসতেন। কারও প্রতি কোনও অভিযোগ না জানিয়ে নীরবেই চলে গেলেন! চলে যাওয়ার পরে টের পাচ্ছি, কতটা জুড়ে ছিলেন তিনি। জানেন, এক এক সময় উপলব্ধি করতে পারি বাবার উপস্থিতি। কিছু অলৌকিক ঘটে। যেন বুঝিয়ে দেন, বাবা আছেন। দূরে চলে গিয়েও আগলাচ্ছেন। আমাদের প্রতি ওঁর দায়িত্ব আজও ফুরোয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement