ruma guhathakurta

‘মানুষ হিসেবে অনেক বড় মাপের ছিলেন রুমা’

১৯৬০-এ রুমা বিয়ে করেন অরূপ গুহঠাকুরতাকে। তাঁদের সন্তান অয়ন গুহঠাকুরতা ও গায়িকা শ্রমণা গুহঠাকুরতা। এর মধ্যে ১৯৫৮-য় রুমা প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ১৪:০৬
Share:

রুমা গুহঠাকুরতা (১৯৩৪-২০১৯)

দিদি, বড় বৌদি, বৌদি... অনেক নাম নিয়ে চেনা যেত ওঁকে। রুমা গুহঠাকুরতা। সমাজ-সংস্কৃতি-সংসারের এক বিচিত্র নক্ষত্র। “এক কথার লোক ছিলেন বড় বৌদি। মা ছিলেন সতী দেবী, বিখ্যাত গায়িকা। উদয়শঙ্করের কাছের লোক। মুম্বইতে তখন সলিল চৌধুরী কয়্যার করেছেন। বড় বৌদি গাইতে যেতেন। ওখানেই কিশোরকুমারের সঙ্গে প্রেম এবং বিবাহ”— বললেন সুদেব গুহঠাকুরতা।

Advertisement

এক ভিন্ন যাত্রাপথের সূচনা। এক দিকে যেমন বড় বৌদি। অন্য দিকে‘দক্ষিণী’র কর্ণধার সুদেব তাঁকে জানতেন 'রুমাদি' বলে। ১৯৫২-য় রুমা গুহঠাকুরতা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। ৬ বছর পর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাঁদের একমাত্র সন্তানগায়ক অমিত কুমার।

আরও পড়ুন: ‘মা কাউকে বিরক্ত না করে নিজের মতোই চলে গেল’

Advertisement

১৯৬০-এ রুমা বিয়ে করেন অরূপ গুহঠাকুরতাকে। তাঁদের সন্তান অয়ন গুহঠাকুরতা ও গায়িকা শ্রমণা গুহঠাকুরতা। এর মধ্যে ১৯৫৮-য় রুমা প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার। কয়্যার তৈরি করা রুমা গুহঠাকুরতার জীবনের অন্যতম বড় কাজ। দেশে-বিদেশে কয়্যার নিয়ে গাইতে গিয়েছেন তিনি। সুদেব জানালেন, “একটা ওয়ার্লড মিটে ডেনমার্কে নিজের কয়্যার নিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বড় বৌদি।”

একটা রাজনৈতিক পরিসরে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন এই ব্যক্তিত্বময়ী প্রতিভা। আইপিটিএ-র সদস্য, ইন্দিরা গাঁধীর ঘনিষ্ঠ। অন্য দিকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের পছন্দের মানুষ। “আসলে খুব পরোপকারী ছিলেন। যে কারও কাছে পৌঁছে যেতে পারতেন। এরকমও দেখেছি, পাড়ার রিকশাওয়ালার প্রয়োজনে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিপদে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন”—স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন সুদেব গুহঠাকুরতা।

আরও পড়ুন: প্রয়াত রুমা গুহঠাকুরতা (১৯৩৪-২০১৯)

গুহঠাকুরতা বাড়িতে বসে বারবার একটা কথাই বলছিলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অভিরূপ গুহঠাকুরতা, “বড় বৌদির মতো মনের মানুষ আজ বিরল! এমন পরোপকারী মানুষ আর দেখা যাবে না। আমাদের গুহঠাকুরতা বাড়িতে কারও বিয়ে হচ্ছে, বড় বৌদি সব দায়িত্ব নিয়ে নেবেন। গয়না থেকে শুরু করে সব দেখাশোনা ওর নজরে। ওর গুণের কথা তো সবাই জানে। গায়িকা থেকে অভিনেত্রী। কিন্তু মানুষ হিসেবেও অনেক বড় মাপের ছিলেন।”

‘দিদি’, তারপর ‘বড় বৌদি’এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘গণশত্রু’- তে একসঙ্গে অভিনয়—ভীষ্ম গুহঠাকুরতা বললেন,“খুব বর্ণময় জীবন ছিল আমার মামাতো দিদির। ওঁর বাবা মন্টি ঘোষ প্রখ্যাত লেখক ছিলেন। অরূপদাকে বিয়ে করার পর আমরা বড় বৌদি বলতে শুরু করি ওকে। পরে একসঙ্গে অভিনয় করলাম মানিকমামার ছবিতে। অন্য এক রুমা গুহঠাকুরতাকে দেখতে পেলাম ফ্লোরে।”

গুহঠাকুরতা পরিবারের প্রাণ ছিলেন তিনি। সবাইকে নিয়ে থাকতেন। আসলে ছোটবেলা থেকে অনেক বড় ক্ষেত্রের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। পৃথ্বীরাজ কপূরের সঙ্গে অভিনয় করতেন মা সতী দেবী। সেখানে নিয়মিত যেতেন ছোট্ট রুমা।

“মা সতী দেবীর মৃত্যুর পর আলমোড়ায় চলে গিয়েছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। সেখানে নিয়মিত উদয়শঙ্করের সঙ্গে গান নাচের শিক্ষা নিয়েছিলেন বড়বৌদি। একসময় বিয়ের পর কলকাতায় ত্যাগরাজ হলের উল্টোদিকের বাড়িতে থাকতেন কিশোরকুমার আর রুমা গুহঠাকুরতা। 'আমার মনে আছে, আমরা রাস্তায় ডাংগুলি খেলছি। কিশোরকুমার আমাদের লক্ষ্য করে মজা করে হাঁক দিতেন,‘এই হো...।’ অনেক ভাবে বড় বৌদিকে দেখেছি...”—আবেগের স্বরে কথা বললেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা।

আবেগের করুণ সুর আজ শহরের নরম রোদে। চলে গেল এক যুগের ঐতিহ্য আর ইতিহাস...

নিভৃতে বাজছে সিংহেন্দ্র মধ্যম, দক্ষিণী রাগ...তাঁর কণ্ঠে। কণ্ঠের মৃত্যু হয় না তো!

‘তেমনই চিত্ত উদাসী রে

নিদারুণ বিচ্ছেদের নিশীথে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন