‘পক্ষীরাজের ডিম’ ছবিতে মহাব্রত বসু ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
ছোটবেলায় পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প আমরা সবাই পড়েছি। ঠাকুমার ঝুলি খুললেই ছুটে আসত কল্পনার জগতের এই ঘোড়া আর চোখের সামনে ভেসে উঠত নানা ধরনের ছবি। পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের ছবি ‘পক্ষীরাজের ডিম’ বুঝি সেই স্মৃতিকেই নাড়া দিল। অবশ্য ছবির ট্রেলার দেখে যদি সিনেমাহলে ঢুকতাম, তা হলে এটুকু মনে মনে তৈরি হয়ে যেতাম যে এই গল্পে আছে শুধু ডিম। পক্ষীরাজ দেখার আশাটা নিতান্তই ব্যর্থ!
প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে নিছকই খুদে দর্শকদের জন্য। এটা মাথায় নিয়েই ঢুকতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। কারণ বড়দের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে অনেক ফাঁকফোকর ধরা পড়বে।
ছোটদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সবই রয়েছে এই ছবিতে— মজার গান, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, জাদু, এমনকি ছোটবেলার সেই মিষ্টি ভালবাসার গল্পও এতে খুঁজে পাওয়া যাবে। গল্পের পটভূমি আকাশগঞ্জ— মনে করিয়ে দেবে ঠাকুমার ঝুলির গল্পে পাওয়া সেই সব দূরান্তের গ্রামের কথা। এই আকাশগঞ্জের বাসিন্দা ঘোতন (মহাব্রত বসু)।
ছবিতে ঘোতন ও তার বন্ধু পপিন্সের চরিত্রে মহাব্রত বসু ও অনুমেঘা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ঘোতন মা-বাবাকে হারিয়েছে ছোটবেলাতেই। থাকে তার অ্যাডভোকেট দাদুর সঙ্গে। পড়াশোনায় সে মোটেই ভাল নয়, কিন্তু তার বাবা ছিলেন বিজ্ঞানী। রাতের বেলায় আকাশের অসংখ্য তারা গুনতে গুনতে সে-ও বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
কিন্তু অঙ্কে ফেল করলে কি আর বিজ্ঞানী হওয়া যায়? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় ঘোতনের মাথায়। যখন সে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি পরীক্ষায় অঙ্কে ফেল করে এবং শিক্ষক বটব্যাল স্যরকে (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) অনুরোধ করে আর এক বার পরীক্ষা নিতে।
কিন্তু বটব্যাল স্যর নিজেই নানা ঝামেলায় জর্জরিত। তিনি ফিজিক্স পড়াতে চান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে, আর সেই হল তার কাল। এমনই এক এক্সপেরিমেন্টের দৌলতে যখন স্কুল হেডমাস্টার পা পিছলে পড়ে যান, তখন বটব্যাল স্যরকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে আকাশগঞ্জে আবির্ভাব হয় ‘ভিলেন’ সাহেবের (আলেক্স ও’নিল)। তাকে ঠিক গল্পের খলনায়ক বলা যায় না, কিন্তু এটা ঠিকই যে তিনি এক মন্দিরের খোঁজে আকাশগঞ্জে না এসে পড়লে এই পক্ষীরাজের ডিম নিয়ে ঝামেলাটা শুরুই হত না।
ভিলেন সাহেব এসেছেন লিভিং স্টোনসের খোঁজে, এবং এ রকমই একটা লিভিং স্টোন লুকিয়ে রয়েছে আকাশগঞ্জের জঙ্গলের সেই মন্দিরে। কিন্তু এই মন্দির পাহারা দেয় এক সাপরাজ বাবা যে কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেয় না।
তা হলে সেই পাথরটি কী ভাবে এল ঘোতনের হাতে? কেনই বা সে আর তার বন্ধু পপিন্স (অনুমেঘা বন্দ্যোপাধ্যায়) নিয়ে গেল পাথরটা বটব্যাল স্যরের কাছে?
এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে দেখতে হবে ‘পক্ষীরাজের ডিম’। ছবির দৈর্ঘ্য ১৩৩ মিনিট। খানিকটা সংক্ষেপে বললে হয়তো গল্পটা আরও আকর্ষণীয় হত। যে ছবির নাম ‘পক্ষীরাজের ডিম’, সেখানে সেই ডিম দর্শকেরা দেখতে পান বিরতির কিছু ক্ষণ আগে। আজকের যুগে, যেখানে ছোটরা বেশি ক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, সেখানে ছবির পুরো প্রথমার্ধটা শুধু প্লট তৈরি করার জন্য বোধহয় দরকার ছিল না।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের উত্তেজনা টানটান। যে সব বাচ্চারা প্রথমার্ধে লাফালাফি করছিল, দ্বিতীয়ার্ধে তারা চুপচাপ বসে ছবির শেষ পর্যন্ত দেখল।
গল্পের শেষটা যদিও আমার ঠিক বোধগম্য হল না, সামগ্রিক ভাবনাটি বেশ অভিনব। বড়দের জন্য একটা টিপ্— ছবিটি উপভোগ করতে হলে যুক্তি আর ঘটনার ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রত্যাশা প্রেক্ষাগৃহের বাইরে রেখেই ঢুকতে হবে। আর আমার মতো আপনিও যদি পক্ষীরাজ ঘোড়া দেখার লোভে ছবি দেখতে যান, তা হলে আরও আশাহত হবেন বইকি!