সুরের বাঁধনে প্রেমের গল্প

লিখছেন সংযুক্তা বসুসুরের থাকে গতি। আর মানুষের থাকে আবেগ। এই দুই মিলে তৈরি হয় শিল্পীর মন, শিল্পীর মনন, শিল্পীর মায়াও। কথার যেখানে শেষ সেখান থেকেই তো শুরু গানের। সেই গান পরিচালক রাজা সেনের ‘মায়ামৃদঙ্গ’ ছবিতে জীবনের কঠিন-কঠোর বাস্তবকে উত্তীর্ণ হয়ে পৌঁছে যায় কোন এক মায়ালোকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৬
Share:

সুরের থাকে গতি। আর মানুষের থাকে আবেগ।

Advertisement

এই দুই মিলে তৈরি হয় শিল্পীর মন, শিল্পীর মনন, শিল্পীর মায়াও। কথার যেখানে শেষ সেখান থেকেই তো শুরু গানের। সেই গান পরিচালক রাজা সেনের ‘মায়ামৃদঙ্গ’ ছবিতে জীবনের কঠিন-কঠোর বাস্তবকে উত্তীর্ণ হয়ে পৌঁছে যায় কোন এক মায়ালোকে।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা এই কাহিনির নায়ক ঝাকসু এক গানের দলের ওস্তাদ। তাকে ঘিরেই নানা ধরনের সম্পর্কের জটিলতা দেখানো হয়েছে ছবিতে। এসেছে অসমবয়সী প্রেম, সমকাম। ঝাকসুর স্ত্রী ছুটকির চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-র অভিনয় অনবদ্য।

Advertisement

সাহিত্যের কাহিনিকে সিনেমায় আনতে গিয়ে সিনেমার ভাষা ব্যবহারের স্বাধীনতা অবশ্যই নিয়েছেন পরিচালক রাজা সেন। শুধু আলকাপ গান নয়, গ্রামীণ লোকগানের এক সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন এই ছবিতে। সেই সূত্রে বলা যায় শাক্যদেব চৌধুরী আর সুদীপ সেনগুপ্তের ক্যামেরা এ ছবিতে মায়ামৃদঙ্গের মতোই মায়াময়। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমানে আলকাপ লোকসঙ্গীতের খোঁজ পাওয়া যায়। এই সব শিল্পী বেশির ভাগই নিরক্ষর। কিন্তু তাঁরা মুখেমুখে গান তৈরি করেন, সুর বাঁধেন। এঁদের জীবন ভালই ধরেছেন পরিচালক ‘মায়ামৃদঙ্গ’তে। সারা জীবনে কীসের টানে ছুটে বেড়ান একজন শিল্পী? অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি নাকি প্রতিষ্ঠা? না, এর কোনওটাই নয়। আসলে একজন শিল্পীকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় মায়া। নতুন নতুন শিল্পসৃষ্টির মায়া। সেই শিল্প আর সুরের টানেই এই ছবিতে চার জন সঙ্গীত পরিচালক মিলে সুর দিয়েছেন বারোটা শ্রুতিমধুর গানে। মঞ্চে গানের লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো মনে পড়ায় অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির কথা। এক কথায় বলতে গেলে এ ছবি সততই মিউজিক্যাল।

এক দিকে শিল্পের অমোঘ টান, অন্য দিকে শিল্পীর নিজস্ব জীবন যন্ত্রণা—এই দুইয়ের টানাপড়েনে দীর্ণ ঝাকসুর জীবনকে খুব সংবেদনশীল ভাবে ফুটিয়েছেন দেবশঙ্কর হালদার। কখনও মঞ্চে বিহ্বল হয়ে গান গাওয়া আর কখনও বা প্রকৃতির কোলে আত্মভোলা হয়ে ঘুরে বেড়ানো ঝাকসুর মধ্যে প্রাণ পায় প্রকৃত শিল্পীর যন্ত্রণাবিদ্ধ সত্তা। ঝাকসুর শাগরেদের ভূমিকায় গৌতম হালদার প্রায় পুরোটা ছবি জুড়েই মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের। তাঁর শরীরী অভিনয় ভাল লাগবেই। গল্পের সূত্র ধরে পাওলি এসেছেন খুব অল্পক্ষণের জন্য। তাঁকে আর একটু পাওয়া গেলে ছবিতে তাঁর ভূমিকা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হত। তবে যতটুকু সময় তিনি ছিলেন ততটুকুই সুন্দর। অন্য এক গানের দলের ওস্তাদ সনাতন মাস্টারের চরিত্রে প্রিয়মের অভিনয় আলাদা করে ধরা দেয়। দুই ‘ছোকরা’ চরিত্রে পার্থ ও রঞ্জনের নাচের বিভঙ্গ আসর মাত করে।

‘দামু’ থেকে ‘আত্মীয়স্বজন’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ থেকে ‘দেবীপক্ষ’—রাজা সেনের প্রত্যেকটা ছবির গল্প বলার ধরন আলাদা। ‘মায়ামৃদঙ্গ’ সেই রকমই একটা প্রয়াস, যেখানে সুরের বাঁধনে প্রেমের গল্প বলেছেন

পরিচালক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন