Review of Bengali Web Series Dakghor

সুহোত্র-দিতিপ্রিয়ার ‘ডাকঘর’-এ কি পাওয়া গেল ‘পঞ্চায়েত’-এর স্বাদ? জানুন আনন্দবাজার অনলাইনে

রহস্য রোমাঞ্চ আর মার্ডার মিস্ট্রির ভিড়ে ‘ডাকঘর’ যেন একটি মিঠে হাওয়ার মতো। মন ভাল করা সিরিজ় দেখে কি মনে পড়বে ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজ়ের কথা?

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ২১:৩১
Share:

অভ্রজিৎ সেনের নতুন ওয়েব সিরিজ়ের মূল প্রেক্ষাপট অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’-এর গল্পের মতো। ছবি: সংগৃহীত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় নাটক ‘ডাকঘর’-এর গল্প হুবহু না বললেও অভ্রজিৎ সেনের নতুন ওয়েব সিরিজ়ের মূল প্রেক্ষাপট অনেকটা তেমনই। এক ঘন জঙ্গলের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম। আড়াই বছর ধরে তাদের গ্রামের ডাকঘর বন্ধ। সেখানে এখন নাকি ভূতের বাসা। সেই বাসাতেই এসে হাজির হয় স্বয়ং ‘ভূতের ছেলে’ ওরফে দামোদর দাস (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়)। শহরের ছেলে হঠাৎ গণ্ডগ্রামে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার জীবন ভরে যায় নানা রকম রঙিন গ্রামবাসীতে। কেউ খ্যাপাটে, কেউ অসহায়, কেউ আবার নিতান্তই সরল। তাদের সঙ্গে কী করে যেন মিশে যায় দামোদর। এবং জড়িয়ে পড়ে সকলের নিত্য জীবনের সঙ্গে। সাতটি পর্ব কেটে যাবে সারল্যে ভরা হাসি-কান্না-ইয়ার্কিতে মোড়া একটি অত্যন্ত সহজ গল্প দেখতে দেখতে। যে গল্পের সে ভাবে কোনও রহস্য নেই, এটি থ্রিলার নয়, নেই কোনও যৌনতার সুড়সুড়িও। রয়েছে শুধু সারল্য। এবং ধীর গতিতে চলতে থাকা মন ভাল করা মিষ্টি কিছু মুহূর্ত!

Advertisement

সারল্যে ভরা, হাসি-কান্না-ইয়ার্কিতে মোড়া একটি অত্যন্ত সহজ গল্প ‘ডাকঘর’। ছবি: সংগৃহীত।

এটুকু পড়েই অনেকের হয়তো জীতেন্দ্র কুমারের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ় ‘পঞ্চায়েত’-এর কথা মনে পড়ে যেতে পারে। ‘ডাকঘর’ দেখতে গিয়েও বহু দৃশ্য, বহু ঘটনা বারবার ‘পঞ্চায়েত’ এবং সচিবজি-র কথাই মনে করাবে। তবে এ গল্পের প্রেক্ষাপটে মিল থাকলেও, তার প্লটলাইনগুলি স্বতন্ত্র। এখানে রয়েছে দামোদরের ছেলেবেলা ঘিরে কিছুটা ধোঁয়াশা, রয়েছে একটি চুপিচুপি হয়ে যাওয়া প্রেমও। তবে চিত্রনাট্য নির্মেদ নয়। কিছু অংশ অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। দামোদরের জীবনে একটি ক্রাইসিস রয়েছে। কিন্তু সেই ক্রাইসিস বার বার যেন ফিরে আসে সংলাপের মাধ্যমে। তাই দর্শকেরও নতুন করে কোনও তথ্য জানা হয় না।

একঝাঁক নাম না জানা চরিত্রাভিনেতার জন্য দর্শকের মনের এত গভীরে যেতে পেরেছে ‘ডাকঘর’। ছবি: সংগৃহীত।

তবে সাদামাটা গল্প দিয়েও যে মন ছুঁয়ে ফেলা যায়, তার যোগ্য উদাহরণ অবশ্যই এই সিরিজ়। এবং তাঁর পিছনে সিংহভাগ কৃতিত্বই অভিনেতাদের। মুখ্য ভূমিকায় সুহোত্র মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন। মাপা অভিনয় কী ভাবে করতে হয়, তার মাস্টারক্লাস করাতে পারেন তিনি। দুঃখ-আনন্দ-বিস্ময়-রাগ— সবেতেই তিনি সমান দক্ষ। বাংলায়ও যে একজন জীতেন্দ্র কুমার রয়েছেন, তা নিয়ে এ বার গর্ব করতে পারবে টলিউড।

Advertisement

পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। কিন্তু যাঁদের জন্য ‘ডাকঘর’ দর্শকের মনের এত গভীরে যেতে পেরেছে, তাঁরা হলেন একঝাঁক নাম না জানা চরিত্রাভিনেতা (ইতিমধ্যেই তাঁদের কারও কারও নাম ক্রেডিটে না দেওয়া নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিস্তর লেখালিখি শুরু হয়েছে)। গোটা সিরিজ়ে অধিকাংশ চরিত্র একটি নির্দিষ্ট টানে কথা বলে। কিন্তু সেই কথা-বলার টানটা যেন বাকিদের মতো সমান দক্ষতার সঙ্গে রপ্ত করতে পারেননি দিতিপ্রিয়া। তাই তাঁর সংলাপগুলি একটু কানে লেগেছে বৈকি।

‘পঞ্চয়েত’-এর গল্প উত্তর প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রাম নিয়ে। গোটা সিরিজ়টি একটি গ্রামের গল্প বললেও সেখানে গল্পবলার ধরন আপাদমস্তক শহুরে। হয়তো তাই, সিরিজ়টি ওটিটি দর্শকের মনে দাগ কাটতে পেরেছে। কিন্তু ‘ডাকঘর’ তেমন নয়। ‘ডাকঘর’-এর গল্প শুধুই নির্মল আনন্দ দেয়। সেখানে কোনও গ্রাম-শহরের বিভাজন নেই। গল্প যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে থেকে নির্মাতারা চাইলে নতুন কোনও সিজ়ন না-ও বানাতে পারেন। কিন্তু দামোদর, মঞ্জুরী, মধুদের এইটুকু দেখে যেন আশ মেটে না। দ্বিতীয় সিজ়ন এলে মন্দ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন