Review of Khela Jawkhon

কেমন হল অরিন্দম শীলের নতুন থ্রিলার ‘খেলা যখন’, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

বাংলা সিনেমায় থ্রিলার যত জন বানান, তাঁর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিচালক বোধ হয় অরিন্দম শীলই। কিন্তু ব্যোমকেশ-শবরের মতো তাঁর নতুন ছবিও জমল কি?

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১৬
Share:

অরিন্দম শীলের নতুন ছবি ‘খেলা যখন’-এ অর্জুন আর মিমির রসায়ন কতটা জমল? ফাইল চিত্র।

বেশ কয়েক বছর ধরে থ্রিলার বা রহস্য ছাড়া বাংলা সিনেমায় নাকি আর কিছুই চলে না। বাঙালিরা অন্য কোনও ছবি দেখতে হলেও যান না বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ এখন এতটাই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে যে, সত্যিই একটি থ্রিলার ছবি মুক্তি পেলে দর্শকের মধ্যে উৎসাহ অনেক বেশি দেখা যায়। আর সেই থ্রিলার যদি হয় অরিন্দম শীলের, তা হলে একটু বাড়তি উৎসাহ থাকে বইকি। কারণ ‘ব্যোমকেশ’, ‘শবর’, ‘মিতিন মাসি’ করে করে তিনি হাত পাকিয়েছেন এই জঁরে। এখন আবার ফেলুদাও বানাচ্ছেন। তাই ‘খেলা যখন’ নিয়ে প্রত্যাশাও বেশি থাকাই স্বাভাবিক।

Advertisement

একটি ভাল থ্রিলারের দু’টি ভাগ হয়। রহস্যের জাল বিছানো আর জাল গুটোনো। দু’টিই সমান দক্ষ হাতে করতে পারলে তবেই দর্শকের মন ভরে। এই ছবির গল্প ঊর্মিকে (মিমি চক্রবর্তী) ঘিরে। একটি দুর্ঘটনার পর কোমায় চলে যায় সে। আট মাস থাকে হাসপাতালে। যখন চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দেয়, তখন জ্ঞান ফেরে ঊর্মির। কিন্তু স্মৃতি ফেরে না। চারপাশের মানুষদের তার অচেনা লাগে। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির (অর্জুন চক্রবর্তী, বরুণ চন্দ, অলকানন্দা রায়) মুখ তো মনে পড়েই না। এমনকি, দুর্ঘটনায় হারানো ছেলের মুখও যেন আবছা। অনেক স্মৃতি হঠাৎ হঠাৎ ফিরে আসে। কিন্তু আশপাশের লোকজনেরও হাবভাব এমনই গোলমেলে যে, তার মাথা আরও গুলিয়ে যায়। ঊর্মি মনে করতে পারে না, সে আসলে কে। যা মনে পড়ে, তা বাকিদের কথার সঙ্গে মেলাতে পারে না। এরই মাঝে এক অচেনা ব্যক্তি হঠাৎ এসে বলে তার ছেলে বেঁচে আছে। তা কি সত্যি, না কি সে কোমা থেকে ফিরে বাস্তব-কল্পনার ফারাক হারিয়ে ফেলছে? রহস্যের জাল ভালই বুনেছেন পরিচালক। তাই থ্রিলারের প্রথম ভাগের জন্য পুরো নম্বর দেওয়াই যায় এই ছবিকে।

ছবির গল্প ধরে রেখেছে মিমির অভিনয়। আবেগঘন দৃশ্য হোক কিংবা অ্যাকশন, সবেতেই তিনি সমান সাবলীল। ছবি: সংগৃহীত।

দ্বিতীয় ভাগ জাল গুটোনোর। ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত সেটা প্রায় শুরুই হয় না। নতুন নতুন প্রশ্ন ওঠে চিত্রনাট্যে। কিন্তু উত্তর মেলে না। ‘কী হবে কী হবে’ কৌতূহল যেমন তৈরি হয়, তেমনই আবার একটু অধৈর্যও লাগতে পারে। ক্লাইম্যাক্সে শুরু হয় রহস্য উন্মোচন। এই ফর্ম্যাট ‘হু ডান ইট’-এর ক্ষেত্রে বেশ ভালই মানায়। কিন্তু এই ছবির গল্প শুধু ‘হু ডান ইট’ নয়। অনেকগুলি দিক রয়েছে। কে, কী, কখন, কী ভাবে, কেন— যাবতীয় প্রশ্ন ওঠে। এবং সেগুলির উত্তর মেলে ক্লাইম্যাক্সে। হঠাৎই অনেক তথ্য দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়। বুঝে ওঠার আগেই ছবি শেষ হয়ে যায়। তাই মনে হয়, আরও একটু সময় ধরে উত্তরগুলি পেলে বোধ হয় ভাল হত। বিশেষ করে, গল্পে যখন এতগুলি চরিত্র। সকলের বিষয়েই ভাল করে জানতে ইচ্ছা হবে দর্শকের। তখন মনে হতে পারে, এই ছবি যদি নেটফ্লিক্স-হটস্টারের থ্রিলার সিরিজ়গুলির মতো বেশ কয়েকটি পর্বে দেখা যেত, তা হলে বেশ এক একটি চরিত্রকে আরও বেশি করে চেনা যেত।

Advertisement

পরিচালক ভালই জানেন, থ্রিলারে নাটক কী ভাবে তৈরি করতে হয়। কোন দৃশ্যে ঠিক কোন জায়গায় কাটলে টানটান চিত্রনাট্য পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়, তা তাঁর কাছে পরিষ্কার। তবে ভাল থ্রিলার বানাতে গিয়ে তিনি কিন্তু ছবির অন্যান্য দিকগুলি অবহেলা করেননি। কোমা থেকে ফিরে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে ঊর্মি। তাই এই গল্প তার নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার লড়াইও বটে। সেই পথটি যতটা সময় ধরে, সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখানো উচিত, তা-ই করেছেন পরিচালক। কিন্তু তাতে থ্রিলারের গতির সঙ্গে আপস করেননি। ছবির মেকিং যে কোনও আন্তর্জাতিক থ্রিলারের মতোই। ক্যামেরা, লাইট, আবহসঙ্গীত— সবই যত্ন নিয়ে করা। ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে শুট করা কিছু ফ্রেম এতটাই সুন্দর যে, দর্শক গল্প ভুলে তাকিয়ে থাকবেন। যে চিত্রনাট্যের পরতে পরতে এত সাসপেন্স, সেখানে এমন সিনেমাটোগ্রাফি আলাদা করে প্রশংসা দাবি করে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলিও যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে শুট করা হয়েছে।

ছবির গল্প ধরে রেখেছে মিমির অভিনয়। আবেগঘন দৃশ্য হোক কিংবা অ্যাকশন, সবেতেই তিনি সমান সাবলীল। প্রত্যেকটি স্টান্ট তিনি নিজেই করেছেন ছবিতে। তাই তাঁর পরিশ্রম পর্দায় স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। অর্জুন আর মিমির রসায়ন কতটা জমজমাট, তা ‘গানের ওপারে’ থেকেই দর্শকের জানা। তাই পর্দায় দু’জনকে আবার একসঙ্গে দেখতে ভালই লাগবে। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, হর্ষ ছায়া, বরুণ চন্দ বা অলকানন্দা রায়ের চরিত্র এখানে সীমিত। তাঁরা প্রত্যেকেই সেই মতো যোগ্য অভিনয়ও করেছেন। তবে সবের মাঝেও মনে থেকে যাবে মিমিকেই।

বাংলা ছবিতে নারীকেন্দ্রিক থ্রিলার বানানোর সাহস খুব বেশি পরিচালক দেখাননি। ‘দৃশ্যম টু’ দেখার পর যদি আরও বেশি থ্রিলার দেখার ইচ্ছা হয়, তাঁরা এই ছবিটি দেখতেই পারেন। বাংলা ছবি অন্তত এই জঁরে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন