Dhanush

Atrangi Re: শুধু ধনুষের জন্য...

প্লট হিসেবে ছবিতে নতুনত্ব রয়েছে। রিঙ্কুর সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘ফাদার কমপ্লেক্স’-এর মতো জটিল মানসিক বিষয়।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

অতরঙ্গি রে
পরিচালক: আনন্দ এল রাই
অভিনয়: ধনুষ, সারা, অক্ষয়, আশিস, সীমা
৫.৫/১০

Advertisement

নতুনত্ব রাখতে হবে প্রেমের গল্পেও। তা না হলে ওটিটিকেন্দ্রিক দর্শকের নজরে আসা যাবে না। ডিজ়নি প্লাস হটস্টারে মুক্তিপ্রাপ্ত আনন্দ এল রাই পরিচালিত ‘অতরঙ্গি রে’-এর দু’ঘণ্টা সতেরো মিনিটের সফরশেষে প্রথম এ কথাই মনে আসে। প্রথমার্ধের আপাত ত্রিকোণ প্রেমের সমীকরণ, দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় জটিল মনস্তাত্ত্বিক ধাঁধায়। কিন্তু আনন্দ বলতে চেয়েছেন নিখাদ প্রেমের গল্প। তাই মেন্টাল ডিজ়অর্ডার এখানে গুরুগম্ভীর ‘সমস্যা’ নয়! ছবির শেষে নায়কের কাছে ফিরে আসে নায়িকা। পরিচালক-চিত্রনাট্যকারের ‘চকা চক’ লক্ষ্যপূরণ!

‘রাঞ্ঝনা’, ‘তনু ওয়েডস মনু’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির মতো আনন্দের এই ছবিরও চিত্রনাট্য লিখেছেন হি‌মাংশু শর্মা। সিওয়ানের এক ডাকসাইটে পরিবারের মা-বাপ মরা মেয়ে রিঙ্কু (সারা আলি খান)। গত সাত বছরে সে বারবার প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করে। ধরা পড়ায় বাড়িতে জুটেছে মার, গঞ্জনা। কিন্তু তাকে বেঁধে রাখা যায়নি। অবশেষে পরিবারের কর্ত্রী (সীমা বিশ্বাস) সিদ্ধান্ত নেয়, জোর করে তার বিয়ে দেওয়া হবে। চেন্নাই থেকে সিওয়ানে মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে আসা ডাক্তার বিশুকে (ধনুষ) অপহরণ করে বিয়ে দেওয়া হয় রিঙ্কুর সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে দিল্লি যাওয়ার পথে ট্রেনে রিঙ্কু জানায়, তার প্রেমিকের নাম সজ্জাদ আলি খান (অক্ষয়কুমার)। পেশায় জাদুকর সজ্জাদ এসে নিয়ে যাবে রিঙ্কুকে। তখন দু’জনেই মুক্তি পাবে জবরদস্তির বিয়ে থেকে।

Advertisement

এতটুকু গল্প শুনে মনে হতে পারে, এটা আর একটি ‘মনমর্জ়িয়া’ বা ‘হম দিল দে চুকে সনম’। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দর্শক জেনে যান, রিঙ্কুর কল্পনায় রয়েছে সজ্জাদ, রক্ত-মাংসের মানুষ সে নয়। দু’দিনের বিয়ের বন্ধনে বিশু প্রেমে পড়ে যায় রিঙ্কুর। কিন্তু কেনই বা সজ্জাদকে হ্যালুসিনেট করে রিঙ্কু? কী ভাবেই বা রিঙ্কুকে সত্যি জানাবে বিশু? বাকি ছবিতে রয়েছে এর উত্তর।

‘অতরঙ্গি’ কথাটির অর্থ অদ্ভুত। তবে সাধারণত মজা করেই হিন্দিতে বলা হয় কথাটি। রিঙ্কুর জটিল মানসিক রোগ যে ভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে, তা কখনওই ‘অতরঙ্গি’ শব্দে ধরা যায় না। শুধু রোগ নয়, তার চিকিৎসাও যে পদ্ধতিতে এগিয়েছে, তাতে সমস্যাটি লঘু হয়েছে, রোগ নয়। প্রেমের গল্প বলেই কি এমন বিষয়কে হালকা চালে দেখানো যায়?

প্লট হিসেবে ছবিতে নতুনত্ব রয়েছে। রিঙ্কুর সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘ফাদার কমপ্লেক্স’-এর মতো জটিল মানসিক বিষয়। অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ছবি-সিরিজ়ে একাধিক পুরুষ চরিত্রকে আগে এই ঘটনার আদলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু অচেতন মনে বাবাকে ‘সারোগেট লাভার’ (প্রতিবর্ত প্রেমিক) হিসেবে ধরে নেওয়ার মতো সমস্যা সাধারণত মূল ধারার হিন্দি ছবিতে দেখা যায়নি আগে। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা তুলে ধরা পরিচালকের লক্ষ্য নয়। রিঙ্কু-বিশু-সজ্জাদের টানাপড়েনেই আটকে থাকে ছবি।

রাঞ্ঝনা হিসেবে আগেই ধনুষকে দেখিয়েছেন আনন্দ। আরও একবার প্যাশনেট প্রেমিকের চরিত্রে এই ছবিতে তিনি। তাঁর কারণেই ছবিটি দেখতে হয়, শেষ পর্যন্ত দেখা যায়। বিশুর চরিত্রে ধনুষের আকুতি, তাঁর প্রেম নিবেদন হোঁচট-খাওয়া গল্পকেও এগিয়ে দেয়। সারার উপরে গুরুদায়িত্ব চাপিয়েছেন পরিচালক। কঠিন চরিত্রে সারা উতরে গিয়েছেন বলা যায়। তবে অভিনয়ের দিক থেকে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি তাঁর। অতিথি শিল্পী হিসেবে অক্ষয়কুমার ছক ভেঙেছেন। পার্শ্বচরিত্রে আশিস বর্মা টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন। সীমার বিশেষ কিছু করণীয় ছিল না।

ধনুষ ছাড়াও দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে এ আর রহমানের সঙ্গীত। ‘চকা চক’ গানটি ছাড়াও একাধিক শ্রুতিমধুর গান রয়েছে ছবিতে। সে অর্থে ছবিকে খানিক মিউজ়িক্যালও বলা যায়। গানগুলির দৃশ্যায়নও সুন্দর।

২০২১-এর প্রেক্ষাপটে প্রেমের গল্প বলা সহজ নয়। কারণ আর পাঁচটি বিষয়ের মতো প্রেমও এখন বেশ জটিল। তবে লাভ জিহাদ (‘রাঞ্ঝনা’তেও ছিল), মানসিক সমস্যার মতো সংবেদনশীল বিষয়কে একসঙ্গে দেখানোর জন্য আরও একটু ভাবতে পারতেন চিত্রনাট্যকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন