Salaam Venky Movie Review

কেমন হল কাজলের নতুন ছবি ‘সালাম ভেঙ্কি’, জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

‘হেলিকপ্টার ইলা’র পর ফের একা মায়ের চরিত্রে কাজল। পরিচালনায় রেবতী। ইচ্ছামৃত্যুর লড়াই নিয়ে তৈরি ‘সালাম ভেঙ্কি’ কতটা দাগ কাটল দর্শকের মনে?

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪৭
Share:

সুজাতার চরিত্রে কাজলের অভিনয় মনে করিয়ে দেয় মাপা অভিনয়েও অত্যন্ত আবেগপ্রবণ মুহূর্ত কী ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ইচ্ছামৃত্যু নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বহু যুগ ধরে চলছে। ভারতে ইউথেনেশিয়া আইনত অপরাধ। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর ‘প্যাসিভ ইউথেনেশিয়া’ আইনি বৈধতা পায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে জটিলতা কমেনি। এক একটি কেস এক এক রকমের আলোচনা শুরু করে। তেমনই এক ‘কেস’ ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের কোলাভেনু ভেঙ্কটেশ। যিনি মৃত্যু পর্যন্ত লড়েছিলেন তাঁর ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার নিয়ে। হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ার দু’দিন পরই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ভেঙ্কটেশের জীবনকেই পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছেন রেবতী।

Advertisement

রেবতী শেষ বার হিন্দিতে ‘ফির মিলেঙ্গে’ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। সলমন খান, শিল্পা শেট্টি, অভিষেক বচ্চন অভিনীত সেই ছবি গল্প বলেছিল এক এড্‌স রোগীর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের। আর ‘সালাম ভেঙ্কি’ গল্প বলে মরতে চাওয়ার লড়াই নিয়ে। দুই গল্পের মিল একটাই— ইচ্ছা। গল্পে ভেঙ্কটেশ বা ভেঙ্কি (বিশাল জেঠুয়া) এক বিরল রোগে আক্রান্ত। ডুসান মাসকুলার ডিসট্রফি থাকায় তাঁর শরীরের সব পেশি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসকরা বলে দেন, সে ১৬-১৭ বছরের বেশি বাঁচবে না। কিন্তু অদম্য ভেঙ্কি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করে সেই লড়াই চালায় প্রায় ২৪ বছর পর্যন্ত। কিন্তু শেষ বার যখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তার চিকিৎসক (রাজীব খান্ডেলওয়াল) জানিয়ে দেয়, ভেঙ্কির কাছে আর বেশি সময় নেই। তখন সে মায়ের (কাজল) কাছে ইচ্ছামৃত্যুর জেদ ধরে। যাতে মৃত্যুর পর তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দান করা যায় এবং যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের অঙ্গ দান করে তাঁদের মাধ্যমে মৃত্যুর পরও সে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু মায়ের মন ছেলের মৃত্যু কী ভাবে মেনে নেয়। তার উপর দেশের আইনও এ কাজে সায় দেয় না। ফলে শুরু হয় নানা রকম দ্বন্দ্ব।

ছবির গল্প এমনই যে, দর্শককে একটি জটিল বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করা এবং আবেগপ্রবণ করে তোলাই চিত্রনাট্যের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দুঃখের বিষয়, রেবতীর ছবি তা করতে ব্যর্থ। ছবির প্রথম ভাগ বেশ দুর্বল। ছবি শুরু হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে দর্শককে বিরল রোগ নিয়ে পাঠ পড়ানো শুরু করে চিত্রনাট্য। প্রচুর ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্য আসে-যায়। সেগুলি দর্শককে অনেক তথ্য দেয় ঠিকই, কিন্তু চরিত্রগুলির সঙ্গে একাত্মবোধ তৈরি করে না। মা-ছেলের দ্বন্দ্বের মাঝেই চলতে থাকে কিছু বিখ্যাত ছবির সংলাপের সাহায্যে হাসানোর চেষ্টা। তৈরি হয় কিছু মেলোড্রামাটিক মুহূর্ত। কিন্তু পরিচালনার দুর্বলতায় কোনও মুহূর্তই ঠিক দর্শকের চোখ ভিজিয়ে দেবে না।

Advertisement

ছবি দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক ভাবে ভাল। আইনি লড়াই দেখতে মন্দ লাগে না। তবে মাঝেমাঝে মনে হবে, চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতা, সাংবাদিক, নার্স, আইনজীবী, সকলেই এত ভাল? এত সংবেদনশীল? বাস্তবে এমন কেন হয় না?

রেবতী অভিনয় করার সময় যে কোনও চরিত্র যতটা নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলেন, ততটা খুঁতখুঁতানি বোধ হয় পরিচালনায় এখনও আসেনি। তাঁর উদ্দেশ্য সৎ, কিন্তু ছবি হয়তো ততটাও মন ছুঁয়ে যাবে না দর্শকের। কিছু কিছু সংলাপ খাপছাড়া। ছবির সম্পাদক সে খামতি কোনও ভাবেই পূর্ণ করতে পারেননি। তবে রবি বর্মণের ক্যামেরা চরিত্রদের যথেষ্ট সংবেদনশীলতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর ওয়াইড অ্যাঙ্গল ফ্রেম যেমন সুন্দর, তেমনই এক্সট্রিম ক্লোজ আপে চরিত্রদের অভিব্যক্তি ধরার চেষ্টাও মনে থাকার মতো।

কাজলের অভিনয়ের জন্য ছবির মান যে অনেকটা বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির অন্যতম সম্পদ অবশ্যই অভিনয়। স্বামীর ঘর ছেড়ে আসা একা হাতে ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করে যাওয়া সুজাতার চরিত্রে কাজলের অভিনয় মনে করিয়ে দেয় মাপা অভিনয়েও অত্যন্ত আবেগপ্রবণ মুহূর্ত কী ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়। ছেলের মৃত্যুর জন্য লড়াই করতে গেলে যে কোনও মাকে যে মানসিক দ্বন্দ্ব এবং কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা কাজলের শরীরী ভাষায় ধরা পড়েছে। ভেঙ্কির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘মর্দানি ২’-এর খলনায়ক বিশাল। কিন্তু এ ছবিতে তাঁর অভিনয় আগের ছবির মতো জমে না। যে অংশে মুখে সংলাপ রয়েছে, সে অংশগুলি দর্শককে সে ভাবে নাড়া না-ও দিতে পারে। বরং শেষের দিকে যখন ভেঙ্কির মুখের পেশিগুলি অকেজো হয়ে যাওয়ার জন্য বিশালকে চোখ দিয়ে অভিনয় করতে হয়, সেগুলি অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে দর্শকের মনে।

আইনজীবীর চরিত্রে রাহুল বসু, সংবাদিকের চরিত্র অহনা কুমরা এবং গুরুজির চরিত্রে আনন্দ মহাদেবনকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি চিত্রনাট্য। তবে অল্প কিছু দৃশ্যেই নজর কাড়বেন বিচারকের চরিত্রে প্রকাশ রাজ এবং সরকারি আইনজীবীর চরিত্রে প্রিয়া মানি। রাজীব খান্ডেলওয়ালকে বহু দিন পর পর্দায় দেখে ভাল লাগবে। কাজলের মেয়ের চরিত্রে ঋদ্ধি কুমারও বেশ ঝকঝকে।

কিছু কিছু ছবিতে সব রকম জরুরি উপাদান থেকেও যেন কিছুতেই দর্শকের মন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। এই ছবিও অনেকটা তেমনই। জরুরি বিষয় পর্দায় তুলে ধরার চেষ্ট যতই থাক, গল্প বলায় ত্রুটি থাকার কারণে সেই চেষ্টা সফল হয় না। এ ছবি অনেকটা তেমনই। কাজলের অভিনয়ের জন্য ছবির মান যে অনেকটা বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বাড়তি পাওনা অবশ্যই কিছু দৃশ্যে আমির খান। তাঁর চরিত্র নিয়ে সবটা বলে দেওয়া অনৈতিক। তবে বলা যায়, ‘লাল সিংহ চড্ডা’-র ক্ষেত্রে গোটা ছবি জুড়ে তাঁকে দেখে দর্শক যতটা উপভোগ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ করবেন এই ছবিতে কয়েকটি দৃশ্যে তাঁর অভিনয় দেখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন