ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ‘গুডবাই মাউন্টেন’ ছবিতে। ছবি: সংগৃহীত।
একটি ফোন। ২২ বছর পর। ফোনে আবদার, ২২ বছরের ফেলে আসা, না হওয়া দাম্পত্য ২২ দিনে পূরণ! ছেলেটি ভেবেছিল, মেয়েটি ভাবতে পারেনি। ২২ বছর আগে ছেড়ে যাওয়া প্রেম আবারও ফিরতে পারে! পারবে কি সে আগামী ২২ দিন শুধু তার অতীতের প্রেমের জন্য রাখতে? পারবে কি, স্বামীকে ছেড়ে প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে পৌঁছে যেতে?
মেয়েটি পারে। প্রাক্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে সে সোজা ধরা দেয় পাকদণ্ডির পাহাড়ি রাস্তায়। এক ছাদের নীচে একসঙ্গে দিন এবং রাত। কতটা কাছাকাছি এসেছিল তারা? শরীর? যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর ইন্দ্রাশিস আচার্যের সদ্য মু্ক্তি পাওয়া ছবি ‘গুডবাই মাউন্টেন’-এ রয়েছে। ছবিতে এই গল্পের নায়ক-নায়িকা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
বাস্তবে ২২ বছর পরে প্রেম ফিরলে কি এ রকমই ঘটে? দীর্ঘ দূরত্ব কি নতুন করে সম্পর্ক তৈরির আগ্রহ জাগায়? ঋতুপর্ণা-ইন্দ্রনীল বা পরিচালক ইন্দ্রাশিস— কারও জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে? ঘটলে কী করেছেন তাঁরা?
এ রকমই কিছু কৌতূহল নিয়ে তিন খ্যাতনামীর মুখোমুখি আনন্দবাজার ডট কম। ইন্দ্রাশিসের জীবনে ঠিক এ রকমই না হলেও পুরনো প্রেম আছে। সেই প্রেয়সীর কথা পরিচালকের স্ত্রী জানেন। “‘গুডবাই মাউন্টেন’ কোনও ভাবেই আমার জীবনের গল্প নয়। এ রকম কখনও কিছু হয়নি।” ২২ বছর পরে পুরনো প্রেম ফিরলে কী হয়? তাঁর জীবনে যেহেতু এ রকম কিছু ঘটেনি তাই তিনি সঠিক জানেন না। কিন্তু তা নিয়ে ছবি তৈরি করতে পারেন। পরিচালকের উপলব্ধি, “হয়তো এটা ব্যক্তিবিশেষের উপরে নির্ভর করে। আর সিনেমার গল্প কিন্তু কী হয় নয়, কী হয়েছিল তার উপরে তৈরি। এক একজনের জীবনের এক একরকম মাপকাঠি। কেউ সুখে থাকতে চান। কেউ বেশি সুখে থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতে ভোগেন। কেউ সমস্ত অনুভূতির মিশ্রণে তৈরি। এ বার যিনি যে ভাবে জীবনকে দেখবেন।” তার পরেই উদাহরণ দিয়েছেন নিজের ছবির একটি দৃশ্যের। যেখানে নায়ক, নায়িকার গা থেকে গড়িয়ে নামা সাবানের ফেনার মধ্যে প্রেয়সীর শরীরের গন্ধ খোঁজে! দু’হাতে তুলে ফেনায় নাক ডোবায়। শারীরিক ভাবে কামনা করে তার ফেলে আসা প্রেমিকাকে।
অর্থাৎ, প্রেম নতুন করে ফিরলে উদ্দাম অনুভূতি নিয়ে ফেরে। পরিস্থিতি আগল ভেঙে দেয়।
‘গুডবাই মাউন্টেন’ ছবির শুটিংয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
এ বার হাল ধরলেন ঋতুপর্ণা, বড় পর্দার ‘আনন্দী’। তাঁর জীবনবোধ বলছে, “২২ বছর পরে প্রেমিক-প্রেমিকা মুখোমুখি হলে প্রেম ফেরে কিনা জানি না, তবে সেই প্রেম তো কোনও দিন হারিয়ে যায় না। জীবনের কোথাও না কোথাও, মনের কোনও ভাঁজে, হৃদয়ের পরতে পরতে হয়তো সেটা থেকে যায়।” তার পর জীবনের হয়তো পরিবর্তন হয়। অন্য পথে জীবন হয়তো ধাবিত হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের সংজ্ঞাও বদলায়, বক্তব্য তাঁর।
প্রেম কি কখনও মুছে যায়? কথা বলতে বলতে আনমনে নিজেকেই বুঝি শুধোলেন ঋতুপর্ণা। মনের গভীর থেকে উত্তর উঠে এল, “বোধহয় অবলুপ্ত হয় না। প্রেমের ব্যথার মধ্যেই প্রেম বেঁচে থাকে হয়তো। তার অনুভূতি একদম আলাদা।”
তাঁর কথা থেকেই নতুন প্রশ্নের জন্ম, তখন কি আর প্রেম থাকে? নাকি ভালবাসায় বন্ধুত্ব বাসা বাঁধে?
নায়িকা হেসে ফেলেছেন। সেই রেশ ধরে রেখে ভাবনায় ডুব দিয়েছেন। তাঁর ভাবনার ফসল, “এত বছর না দেখার পর প্রেম অবশ্যই কামগন্ধহীন হয়ে যায়।” তার পরেই অকপটে জানালেন, সামনাসামনি হলে কী হবে বলা মুশকিল! তাঁর মতে, এত বছর পরে প্রেমিকের মুখোমুখি হলে দুর্বল মুহূর্তে কিছু তো ঘটবেই, যদি উভয়ের মধ্যে পুরনো প্রেমের নির্যাস থেকে থাকে। যোগ করলেন অভিনেত্রী, “ওই পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন উভয়ের কাছেই খুব কঠিন। যাঁরা অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ, তাঁরা সে ভাবেই এত দিন যত্নে লালিত সেই বিশেষ অনুভূতিকে নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।”
ছবিতে ঋতুপর্ণা বিবাহিত। তাঁর পুরনো প্রেম বর্তমান। তাঁর কি অপরাধবোধ হচ্ছে?
উত্তর জানা নেই পরিচালক ইন্দ্রাশিসের। ঋতুপর্ণার মতে, “মেয়েটি তখন পূর্ণবয়স্ক এবং পরিণতমনস্ক। তাই অপরাধবোধে না ভুগে সাধারণত সে সংসারেই মন দেয়। ‘যা গেছে তা যাক’, এই অনুভূতি থেকে। পুরনো প্রেম তখন তার সুপ্ত বাসনা।” তার পরেই ঋতুপর্ণার দাবি, “এটা সম্পূর্ণ আমার ভাবনা। আমার মতে, হারানো ফিরলে তাকে নতুন ভাবে গ্রহণ করা শ্রেয়।”
এত ক্ষণ ধরে পরিচালক আর তাঁর পর্দার নায়িকার কথোপকথন মন দিয়ে শুনছিলেন ইন্দ্রনীল। একই প্রশ্ন তাঁর কাছে রাখতেই সহাস্য জবাব এল, “আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করব কেন?” বুঝিয়ে বললেন ইন্দ্রনীল, “পর্দার সব নায়কের জীবনে সব সময় প্রচুর প্রেম থাকে না। পুরনো প্রেম ফিরেও আসে না। আমার অন্তত আসেনি। ফলে, এই বিষয়ে সত্যিই কোনও অভিজ্ঞতা নেই।”