me too movement

‘আমার যৌনাঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন’, মহিলার অভিযোগে রাজনীতির গন্ধ পেলেন রুদ্রনীল

মহিলা তাঁর ‘মি টু’ অভিযোগে জানিয়েছেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক নিয়ে কুমন্তব্য করেছিলেন রুদ্রনীল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ২০:১৭
Share:

‘মি টু’ কাঁটায় বিদ্ধ রুদ্রনীল ঘোষ।

এ বারে ‘মি টু’ কাঁটায় বিদ্ধ বিজেপি-র তারকা সদস্য এবং টলিউডের অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার দু’দিনের মধ্যেই অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে। যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন এক মহিলা। নেটমাধ্যমে সরাসরি তোপ দাগলেন তিনি অভিনেতার বিরুদ্ধে।

Advertisement

একদা বামপন্থী, পরবর্তীতে মমতাপন্থী, শেষে মোদীপন্থী— তাঁর দল বদলের ইতিহাস নিয়ে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই রসিকতা শুরু হয়েছিল নেটমাধ্যমে। যার জের কাটেনি নির্বাচন পরবর্তী সময়েও। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরে পরাজিত রুদ্রনীলকে নিয়ে আরও মিম, ভিডিয়ো, কটাক্ষ চোখে পড়েছে নেটমাধ্যমে। শুধু তাই নয়, তাঁকে ট্রোল করেছেন টলিউডের কলাকুশলীরাও। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপা‌ধ্যায়, অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ও।

এ বারে হাসি, ঠাট্টাকে ছাপিয়ে গেল নতুন এই পোস্ট। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা এক নীলাঞ্জনা পাণ্ডে নামের এক মহিলা মুখ খুললেন রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগে উঠে এল পুরনো এক ঘটনা। প্রেক্ষাপট, রুদ্রনীল ঘোষের প্রযোজনা সংস্থা। নীলাঞ্জনা আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, তিনি অভিনেতার প্রযোজনা সংস্থায় চিত্রনাট্যের কাজ করতে গিয়েছিলেন ২০১২ সালে। তখন তাঁর বয়স ২৭। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং রুদ্রনীল ঘোষ তখন একসঙ্গে সেই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নীলাঞ্জনার অভিযোগ, মেসেজ করে বার বার রুদ্রনীল তাঁকে তাঁর বাড়িতে যেতে বলতেন। তিনি নানা ভাবে কথা ঘুরিয়ে দিতেন। নীলাঞ্জনা বললেন, ‘‘এক বার রুদ্রদা আমাকে আমার যৌনাঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। সে দিনও কিছু বলতে পারিনি।’’ শুধু তাই নয়, পরমব্রতর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কে জড়িয়ে রুদ্রনীল কুমন্তব্য করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি। নীলাঞ্জনার কথায়, ‘‘আমার প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। আর অনেকেই হয়তো বলবে, এই পোস্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু তা নয়।"

Advertisement

পোস্টেই তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আজ প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন সে দিন বিচার চাইনি? আসলে তখন ভয় পাইনি, কিন্তু বিচারের জন্য একজন নতুন মুখকে কী ভাবে এগোতে হবে জানতাম না।’’ তিনি জানান ওই মেসেজ এত কুরুচিকর ছিল যে মেসেজ মোবাইল থেকে মুছে দিয়েছিলেন তিনি। যদি বাবা-মা দেখে নেন? ফলে আজ তাঁর কাছে কোনও প্রমাণ নেই।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে রুদ্রনীলের বক্তব্য জানতে ফোন করা হয় আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে। অভিনেতা জানালেন, তাঁর অনেক দিনের বন্ধু, অভিনেত্রী জিনা তরফদার তাঁকে মঙ্গলবার রাতেই সেই পোস্টটি পাঠান। তিনি পড়ার পরেই নিজের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানতে চান, ‘‘আদৌ কি এই নামের কোনও মহিলা আমাদের এখানে কাজ করতেন? কারও কি টাকা বাকি রয়ে গিয়েছে? কারও সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়েছিল কোনও কর্মীর?’’ কিন্তু উত্তর পাননি। কেউ মনে করতে পারেনি এমন ঘটনা। তার পরেই রুদ্রনীল উপলব্ধি করেছেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখন যা-ই হচ্ছে, তার সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে।’’ বিশেষ করে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে তিনি মনে করেন, ‘‘এ ভাবে আর এক জনের নাম টেনে আনছে মানেই গোলমাল রয়েছে।’’ এ সমস্ত কথা তিনি বলতেই পারেন না বলে তাঁর দাবি।

রুদ্রনীল আরও জানান, এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, কেউ তো কখনও তাঁকে বা তাঁর প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধে এমন ভয়ানক অভিযোগ করেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আজকেই কেন? এখানেই সব স্পষ্ট হয়ে গেল। রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।’’

মেসেজ মুছে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রুদ্রনীলের বক্তব্য, তিনি আগে থেকেই বলে রাখলেন, যাতে সে প্রশ্নটা করার জায়গাই না থাকে।

নীলাঞ্জনা তাঁর পোস্টের শেষে লিখেছেন, এই পোস্ট পড়ে যদি রুদ্রনীল তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পথে যান, তাতেও তাঁর ভয় নেই। তিনি কেবল লিখেছেন, ‘তোমার পতন শুরু’।

তবে কি আইনি পদক্ষেপ নেবেন অভিনেতা? রুদ্রনীল বললেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তানের মা বলে দাবি করেছিলেন এক মহিলা। তিনি কি কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? রাজনৈতিক মানুষের বিরুদ্ধে ১০টা লোক ১০টা কথা বলে। দৌড়াদৌড়ি করে লাভ নেই। আর সেটা মহিলা খুব ভাল করেই জানেন যে আমি কোনও পদক্ষেপ করব না, তাই লিখেছেন।’’ শেষে তাঁর বক্তব্য, তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। এটা ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন রুদ্রনীল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন