সাহেব বিবি আর ঋত্বিক

হিরো নন। তাতে আক্ষেপ নেই কোনও। অন্যধারার অভিনেতা হিসেবেই যে জিতে নিয়েছেন টলিউড। তিনি ঋত্বিক চক্রবর্তী। আড্ডায় সায়ন আচার্য কেমন আছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী? কাজ এবং জীবন নিয়ে ভালই চলছে। ছেলে সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সুতরাং আমার জীবনটাও একটু বদলে গেছে (হাসি)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

কেমন আছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী?

Advertisement

কাজ এবং জীবন নিয়ে ভালই চলছে। ছেলে সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সুতরাং আমার জীবনটাও একটু বদলে গেছে (হাসি)।

Advertisement

ছেলেকে সামলানো, না এক টেকে শট ওকে করা। কোনটা সহজ মনে হচ্ছে আজকাল?

দুটোই সহজ, আবার দুটোই কঠিন। তবে, ছেলে উপমন্যুকে সামলানো বোধহয় বেশি সহজ।

শহর জুড়ে ‘সাহেব বিবি গোলাম’য়ের পোস্টার। এ বার তো আপনি রোম্যান্টিক ট্যাক্সিচালক...

হ্যাঁ। এ বার আমি ট্যাক্সিচালক জাভেদ। ও যতটা ভাল গাড়ি চালায়, আমি তো তা পারব না। তাই স্ক্রিপ্ট পাওয়ার পর প্ল্যানিং শুরু করেছিলাম, কী ভাবে চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা যায়। বিষয়টা কিন্তু বেশ চ্যালে়ঞ্জিং।

অনেকেই মনে করেন, মুম্বইতে ইরফান খানের একটা আলাদা ঘরানা আছে। আর টালিগঞ্জে আপনার...

(হাসি) ওরে বাবা! না, না তেমন কিছু নয়। তবে হ্যাঁ, কিছু চরিত্র আমি করেছি, যেগুলো লোকের পছন্দ হয়েছে। আমি যেমন বরাবর এ রকম ছবি করতে চেয়েছি, ডিরেক্টররাও তেমনই আমার কথা ভেবেছেন। এটা একটা লম্বা প্রসেস-এর মধ্যে হয়েছে। লোকে যখন বলে, ‘দাদা ছবিটা ভাল লাগল’, তখন কনফিডেন্স বাড়ে।

যে কোনও পরিচালকের কাছে আপনিও তো বড় ভরসার জায়গা...

আমি কিন্তু বাধ্য অভিনেতা। পরিচালকেরা কী বলছেন সেটা বুঝতে চেষ্টা করি। সে জন্য বেস্ট পারফরম্যান্সটা দেওয়া যায়। বহু ভাল পরিচালক, নামী-অনামী পরিচালক এখন আমাকে নিয়ে ভাবছেন। শুনেছি, আমার কথা মাথায় রেখে চরিত্র লেখা হচ্ছে। মনে হয়, দর্শকদের দেখার ধরনটাও পাল্টাচ্ছে। তবেই না আমার চাহিদা বাড়ছে!

এত ট্যালেন্টেড। কখনও মনে হয়, চেনা গণ্ডির বাইরে যাই?

না। আমাকে যে ভাবে দেখতে পাওয়ার কথা ছিল, সেই ভাবেই দেখা যাচ্ছে। এর থেকে অন্য রকম হলে বরং অবাক হতাম। প্রচুর ভাল কাজ করছি তো। আর একটা কথা...

কী?

কোনও অভিনেতাই সব ছবিতে ফিট করে না। যে চরিত্রে প্রচুর নাচতে হয়, সেটা আমার দ্বারা হবে না। তাই এড়িয়ে চলি। তবে হিরো হিসেবে ফিট না করলেও, ভিলেন হিসেবে কিন্তু ভালই ফিট করে যাব! (হাসি)

ইন্ডাস্ট্রির ধারণা, ঋত্বিকের উত্তরণের মূলে ‘শব্দ’র অবদান প্রচুর...

একদমই তাই। ‘শব্দ’-র পর লোকে আমায় সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু করে। অনেক পরিচালক আমায় আবিষ্কার করেন। ‘শব্দ’-র পরই তো আমি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ কিংবা ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ করেছি।

কিন্তু তার পর তো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিতে আপনাকে আর দেখা গেল না...

কৌশিকদার সঙ্গে একটা কাজের কথা হয়েছিল, তবে সেটা একটু পিছিয়ে গেল। বছরের শেষ দিকে শ্যুটিং শুরু হতে পারে।

কখনও স্টিরিওটাইপ হয়ে যাওয়ার ভয় হয়?

আমাদের দেশে অভিনেতারা বেশির ভাগই টাইপকাস্ট হয়ে যান। বড় অভিনেতাদেরও তাই হাল হয়। আমার অবশ্য এখনও সে রকম কিছু মনে হয়নি। তবে যদি টাইপকাস্ট হতে শুরু করি, আমার খুব বেশি কিছু করার থাকবে না। আমার কাছে কিছু ডিফিকাল্ট চরিত্র এসেছে, আপাতত এটুকু নিয়েই
আমি খুশি।

পর্দায় আপনি ভীষণ সিরিয়াস, কিন্তু সিনেমার বাইরে ঋত্বিক চক্রবর্তীর পৃথিবীটা কেমন?

(মুচকি হাসি) সেই পৃথিবীটা খুব ঝলমলে। সেখানে সব রকমের পাগলামো করার সুযোগ পাই।

তাই!

হ্যাঁ। এই পাগলামোটা হল দুমদাম বেড়াতে যাওয়ার হুজুগ। নেহাত ছুটি কাটানো, অ্যাডভেঞ্চার। সঙ্গী অবশ্যই স্ত্রী অপরাজিতা। এই পাগলামিটায় ওর সঙ্গত পাওয়া যায় বলে জমে যায় ব্যাপারটা। পাশে অপরাজিতার থাকাটা একটা বড় সাপোর্ট।

কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অভিযোগ, আপনি নাকি একেবারেই সোশ্যালাইজ করেন না!

এ রকম কিছু লোক থাকে যাদের পার্টিতে দেখা যায় না, তারা ডোডো পাখির মতো অবলুপ্তও নয় কিন্তু।

পার্টিও করেন না, পিআর-ও নয়...

(মাঝপথে থামিয়ে) পিআর ব্যাপারটায় বরাবরই আমি কাঁচা। আমার সঙ্গে লোকের সম্পর্ক ভাল, স্বাস্থ্যকর। তবে, ওই পিআর-টা ঠিক হয় না…

‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তী

ইন্ডাস্ট্রিতে এত দিন আছেন, চ্যালেঞ্জটা কার সঙ্গে?

আসলে দৌড়টা আমার একার। আশেপাশে কে আছে সে দিকে তাকাই না। কে কার চেয়ে এগিয়ে এ সব নিয়ে না ভেবে, নিজের দৌড়ে কনসেনট্রেট করি।

একজন পরিচালক, যাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান...

শিবুদার (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সব ছবিই মানুষ দেখেছে। এর আগে কথা হলেও, করা হয়ে ওঠেনি। ওর ছবি তো করতে চাই। যে এক-দু’জনের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়ে ওঠেনি, তাদের মধ্যে শিবুদা একজন।

আর সৃজিত মুখোপাধ্যায়?

‘নির্বাক’ করলাম তো। আরও ছবি করলে ভাল হত হয়তো। আমার জন্য স্ক্রিপ্ট ছিল না বোধহয়।

‘সাহেব বিবি গোলাম’য়ে ফিরছি। সেন্সর বোর্ডের এত কাঁচি। কখনও মনে হয়নি সিনেমাটার কী হবে?

সেন্সর বোর্ডের অভিভাবকত্বটা একজন পরিচালক বা অভিনেতার সহ্য করার কোনও কারণ নেই। বোর্ড তার এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে, আর তাতেই সমস্যা হচ্ছে।

এক দিকে অঞ্জন দত্ত, অন্য দিকে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। দুজনের মাঝে নিজের চরিত্রকে আলাদা ভাবে চেনানোটা কতটা কঠিন ছিল?

এক দিকে অঞ্জনদা থাকা মানেই পাওয়ার প্যাকড অভিনয় নিশ্চিত। অঞ্জনদা বা স্বস্তিকা, দু’জনেই পাওয়ারফুল। ওদের মতো অ্যাক্টররা থাকলে কাজটা তো কঠিন হয় বটেই।

চাপ বাড়ে বলছেন...

কিছুটা তো বটেই। অঞ্জনদা আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজন। ছোটবেলায় ওঁর অভিনয় দেখে বড় হয়েছি। একটু চাপ তো থাকেই। তবে অঞ্জনদার সঙ্গে ছবি করার ফলে ওর ব্যাপারে কিছুটা জানি। ছবির অনেকটাই নির্ভর করে পরিচালকের ওপর। প্রতীম ডি গুপ্ত-র সঙ্গে এটাই প্রথম কাজ। দেখলাম ছবির ব্যাপারে ও সর্টেড।

ছবি জুড়ে সাহসী দৃশ্য। কিন্তু ঋত্বিক কতটা কমফর্টেবল?

আমার কাছে বাঞ্জি জাম্পিং করাটাও সাহসী ব্যাপার (হাসি)। কিন্তু জামা-কাপড় খোলাটাকেই এখন সাহস হিসেবে গণ্য করা হয়, সেটা আমার নেই।

আর অন স্ক্রিন চুমু?

ওতেও আপত্তি আছে।

কিন্তু লোকে তো বলে, আপনি প্রচণ্ড সাহসী...

আমি এমনিতে অকুতোভয়। একমাত্র ভয় পাই নিজের লোভকে। তবে প্রফেশনালি আমি খুব খুশি।

আচ্ছা, আপনার প্রিয় অভিনেতা কে?

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

সে কী! বন্ধু আবীর, পরমব্রত বাদ?

(মুচকি হেসে) বন্ধুরা সবাই ভাল অভিনেতা, তবে কেউ প্রিয় নয়। আর একটা কথা...

বলুন...

আমি কারও ফ্যান নই। ছোটবেলায় একমাত্র কপিল দেবের ফ্যান ছিলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন