রাঁচীর অনুষ্ঠান মঞ্চে শর্মিলা ঠাকুর। —নিজস্ব চিত্র।
‘কাশ্মীর কি কলি’ এখনও ভুলতে পারেন না পলামুর জঙ্গলকে।
ডিসেম্বরের গোড়ায় রাঁচীতে এসে তাই শর্মিলা ঠাকুর বলেই ফেললেন, “এখানে এলেই আমার মনে পড়ে যায় পলামুর জঙ্গলকে। পলামুর জঙ্গল, রাঁচীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই ষাটের দশক থেকে। সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শ্যুটিংয়ের কথা কী ভোলা যায়?”
ষাটের দশকের শেষের দিকের কথা শর্মিলার স্মৃতিতে এখনও টাটকা। বললেন, “ওই শ্যুটিংয়ের সময় তো আর ঝাড়খণ্ড রাজ্য ছিল না। আমরা শ্যুটিং করেছিলাম পলামুর ছিপাদোহর বলে একটা জায়গায়। কোয়েল নদীর ধারে এত সুন্দর লোকেশন যে আমরা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু খুব গরম ছিল তখন। শুধু সকালে আর বিকেলে শ্যুটিং হতো। বাকি সময় কাটত কবিতা পড়ে। সৌমিত্রও খুব কবিতা ভালবাসে। রবি নানা ধরনের মজার কথা বলে সবসময়ে জমিয়ে রাখত।”
কবিতার প্রতি শর্মিলার ভালবাসা বজায় আছে পুরোমাত্রায়। রাঁচীতে তিনি এসেছেন মূলত কবিতা পাঠ করতেই। রাঁচী স্টেশন লাগোয়া একটি পাঁচতারা হোটেলে ছিল সেই অনুষ্ঠান। তাঁর পছন্দের কিছু ইংরেজি কবিতা পাঠ করা হয়েছে।
কলকাতার একটি গানের ব্যান্ড শুনিয়েছে শর্মিলার কিছু পছন্দের হিন্দি ছবির গান ও গজল। কবিতা ও গানের ফাঁকে চলেছে শর্মিলার টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ। কখনও পলামুর জঙ্গলকে নিয়ে। কখনও বা তাঁর স্বামী মনসুর আলি খান পটৌডিকে নিয়ে।
যেমন তিনি অকপটে স্বীকার করলেন পটৌডি যখন খেলতে বিদেশে চলে যেতেন তখন তাঁর খুব মন খারাপ হয়ে যেত। শর্মিলা বলেন, “তখন তো আর আজকের মতো হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। ল্যান্ডলাইনই ভরসা। ট্রাঙ্ককল বুক করতে হতো। ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য ট্রাঙ্ককল বুক করে বসে থাকতাম।’’ বললেন, ‘‘এক বার ও অস্ট্রেলিয়া চলে গেল তিন মাসের জন্য। খুব মন খারাপ। ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য ট্রাঙ্ককল বুক করে বসে রয়েছি। শেষে লাইন পেলাম। পেতে দেরি হচ্ছিল কারণ অস্ট্রেলিয়ায় সেই ট্রাঙ্ককল গেল ভায়া লন্ডন।”
শর্মিলার এই কথা শুনে তখন দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল উঠেছে। দর্শকেরা যে বেশিরভাগই বাঙালি তা বোধহয় বুঝে ফেলেছিলেন তিনি। কারণ কবিতা পাঠের মধ্যে বারবার বাংলায় কথা বলছিলেন। তাঁর একটি কবিতা পাঠের পরে ‘মেরা কুছ সামান/তুমহারে পাস পড়া হ্যায়’ শোনালেন ব্যান্ডের সৌম্যজিত দাস। শর্মিলা বললেন, “এই গানটা হলেই আমার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের চাবি কবিতাটা খুব মনে পড়ে। এই গানের লাইনের সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ওই কবিতাটার লাইনের খুব মিল পাই।”
গত কাল রাতে অনুষ্ঠানটি হয়েছে হোটেলের বাইরে একটি খোলা জায়গায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত জাঁকিয়ে পড়েছে। কিন্তু দর্শকেরা তখন শর্মিলায় মুগ্ধ। অনুষ্ঠানের শেষ গানটা ছিল ‘মেরে স্বপ্নো কি রানি কব আয়েগি তু।’ ‘আরাধনা’ ছবির এই বিখ্যাত গানটি শুরু হতেই শর্মিলার ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। রাঁচীর বাসিন্দারা তখন যেন সত্যিই জানতে চাইছেন, আবার কবে আসবেন তাঁদের স্বপ্নের রানি।