Singer Anindya Bose

মিথ্যাচারের জন্য আমি আর ‘পরশ পাথর’-এ নেই, চৌর্যবৃত্তি আমার আসে না: অনিন্দ্য বসু

নতুন সফর শুরু হচ্ছে ‘পরশ পাথর’ ব্যান্ডের। কেন নেই অনিন্দ্য বসু? এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ব্যান্ডের আর এক সদস্য অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর উত্তরের পাল্টা জবাব দিয়েছেন অনিন্দ্য নিজেও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৭
Share:

অনিন্দ্য বসু। ছবি: সংগৃহীত।

২০ বছর পরে ফের পথচলা শুরু বাংলা ব্যান্ড ‘পরশ পাথর’-এর। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রায় ফিরেছেন। কিন্তু নেই অনিন্দ্য বসু। কেন নেই? এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ব্যান্ডের আর এক সদস্য অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর উত্তরের পাল্টা জবাব দিয়েছেন অনিন্দ্য নিজেও।

Advertisement

ফের জোট বাঁধার পরে আগামী ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান করছে ‘পরশ পাথর’। অনুপস্থিত দলের একসময়ের অন্যতম সদস্য অনিন্দ্য। কারণ জানতে চাইলে অয়ন বলেন, “আসলে ‘ইচ্ছেডানা’ অনুষ্ঠানের সময়ে আমরা যাঁরা ছিলাম, তাঁরাই ফের ব্যান্ডটা শুরু করছি। আমরা বাংলাদেশ থেকে ‘প্রিয় বন্ধু’ অনুষ্ঠান করে ফেরার পরে ওঁর দাবি ছিল, ওঁকে ও আমাকে বেশি পারিশ্রমিক দিতে হবে। আমি রাজি হইনি। আমার মতে, বাদ্যযন্ত্র ছাড়া আমাদের গান ভাল শোনাবে না। তাই আমি থেকে যাই। অনিন্দ্যদা বেরিয়ে যান।”

অনিন্দ্য ১৯৯৮ সালে ‘পরশ পাথর’ ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে যান। তার পরে নিজের ব্যান্ড ‘শহর’ তৈরি করেন। ‘পরশ পাথর’-এর নতুন সফরের আগে ডাক এসেছে তাঁর কাছেও। জানান গায়ক। তিনি বলেন, “এই তো বছরখানেক আগে আমাকেও ডেকেছিল। কিন্তু ‘শহর’ ছেড়ে আমি সময় দিতে পারব না। কখনও কোনও অনুষ্ঠানে গাইতে হলে যাব।” কিন্তু অয়নের বক্তব্য শোনার পরেই তাঁর বক্তব্য “‘পরশ পাথর’-এর মিথ্যাচারের জন্যই আমি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।”

Advertisement

অনিন্দ্য বলেন, “প্রতিটি ব্যান্ডের নিজস্ব যাপন থাকে। শুধু বাদ্যি বাজিয়ে দিলেই ব্যান্ড হয়ে যায় না। সকলের সমপরিমাণ অবদান ও ভূমিকা থাকা দরকার। ‘পরশ পাথর’-এর প্রথম অ্যালবামের হিট গানগুলির লেখা, সুর ও গাওয়া আমারই। শুধু ‘ভালবাসা মানে আর্চিজ় গ্যালারি’ অয়ন গেয়েছিল।”

সেই সময়ে ক্যাসেট ও সিডির যুগ। অনিন্দ্য চেয়েছিলেন, গানগুলি কার লেখা ও কার সুর করা, সেগুলি যেন আলাদা করে উল্লেখ করা থাকে। তাঁর বক্তব্য, “গানের গীতিকার ও সুরকারের জায়গাতেও লেখা থাকত ‘পরশ পাথর’। এখানে আপত্তি জানিয়েছিলাম। তাই মানুষ এখনও বুঝতে পারে না, কোন গান কার লেখা। ‘সুজন আমার ঘরে কেন আইল না’ আমার লেখা ছিল। অথচ কিছু দিন আগেই সমাজমাধ্যমে দেখলাম, এই গান নাকি প্রচলিত। সেই সময়ে আলাদা করে ক্রেডিট উল্লেখ করা থাকলে আমি আর অয়ন দু’জনেই রয়্যালটি পেতে পারতাম।”

বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানের কথাও অনিন্দ্য জানান। বাংলাদেশে তাঁদের অনুষ্ঠানে উপচে পড়েছিল শ্রোতার ভিড়। তাঁদের কাছে প্রস্তাব আসে একটি ক্যাসেট রেকর্ড করার। ক্যাসেটের নাম ‘গানে গানে ভালবাসা’। এই ক্যাসেটে কার কোন ভূমিকা তা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠান করে ফিরে আসার পরেই ‘পরশ পাথর’-এর সঙ্গে অনিন্দ্যের পথ আলাদা হয়ে যায়।

অনিন্দ্যও বেশ কিছু গানে অন্যদের ক্রেডিট দেননি বলে পাল্টা দাবি করেছেন অয়ন। গায়ক বলেন, “‘যখন নীরবে দূরে’ এই গানটিও ওঁর নিজের লেখা নয়। মৃন্ময় বলে একটি ছেলে লিখেছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন। গানটির জন্য মৃন্ময়কে ঠিক ভাবে ক্রেডিটও দেন না অনিন্দ্যদা।”

অয়নের এই মন্তব্য শুনে অনিন্দ্য জানান, ‘যখন নীরবে দূরে’ গানটির নেপথ্যে একটি ঘটনা রয়েছে। স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, “মৃন্ময় আমার চেয়ে বয়সে বেশ কিছুটা ছোট ছিল। ও আসলে আমার অনুরাগী ছিল। সেই সূত্রে আমার বাড়িতে ওর যাতায়াত ছিল। আমার প্রাক্তন স্ত্রী রাইও পুরো ঘটনাটা জানেন। তাঁকেও যে কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন। একদিন মৃন্ময়ের মামাবাড়িতে আমি আর রাই গিয়েছিলাম। ও গিটার বানিয়ে দুটো পংক্তি শোনাল— ‘তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা, কে জানে কী আবেশ দিশাহারা’।”

শুনেই পছন্দ হয়ে যায় অনিন্দ্যের। মৃন্ময়ের সামনে বসেই বাকি গানটি বাঁধেন তিনি। তাঁর কথায়, “পরে গানটি রেকর্ড করা হলে সেখানে মৃন্ময়ের নাম উল্লেখ করি। পরে ‘অনিন্দ্য যখন ২৫’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। ইউটিউবে রয়েছে সেই অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো। সেখানেও মৃন্ময়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।”

এখানেই শেষ নয়। অয়নের দাবি, ‘পরশ পাথর’-এ থাকাকালীন তাঁরা কয়েকটি গান বেঁধেছিলেন। সেই গানগুলির মাধ্যমেই ‘শহর’ ব্যান্ডের সূচনা করেছিলেন অনিন্দ্য। গানগুলির মধ্যে ছ’টি গান নিজের লেখা বলেও দাবি করেন অয়ন। এই শুনে সুর চড়িয়ে অনিন্দ্য বলেন, “প্রত্যেকটা গান আমার লেখা বলেই সেগুলি আমি ‘শহর’ থেকে প্রকাশ করেছিলাম। আমি আর মিথ্যা সহ্য করতে পারছি না। ‘সাগরমেলা’, ‘আবদার’— এই গানগুলি ওর লেখা? আমি তা হলে কিছুই করিনি বোধহয়! জোর দিয়ে বলতে পারি, এগুলো আমার লেখা ও সুর করা। চৌর্যবৃত্তি আমার আসে না। এই অসভ্যতা ও মিথ্যাচারের কারণেই আমি ‘পরশ পাথর’-এ নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement