Durga Puja 2025

আজকাল শান্ত হয়ে গিয়েছি বলে সবাই সুযোগ নেয়, মা দুর্গার কাছে এ বার নিজের শক্তি ফেরত চাই

পুজোয় বিদেশে গান গাইতে যাই। অথচ এখান থেকে আমাকে ফোন করে খোঁজ নেওয়ার মানুষগুলো আর নেই।

Advertisement

লোপামুদ্রা মিত্র

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৩
Share:

দুর্গাপুজোয় মনখারাপ হয় লোপামুদ্রার! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দুর্গাপুজো বলতে এখন বুঝি শুধুই গানের অনুষ্ঠান। এখন দেশে থাকা হয় না। এ বারও আমেরিকা যাচ্ছি আমি আর জয়। তবে আজকাল পুজো এলেই কেন জানি না, খুব মনখারাপ করে। মহালয়ায় মহিষাসুরমর্দিনী শোনার পর থেকে সেই মনখারাপ বাড়তে থাকে।

Advertisement

আসলে, এখন পুজো এলেই বাবা-মা আর বাড়ির সকলের কথা খুব মনে পড়ে। পুজোয় বিদেশে গান গাইতে যাই। অথচ এখান থেকে আমাকে ফোন করে খোঁজ নেওয়ার মানুষগুলো আর নেই। আগের প্রজন্মের সবাই চলে যাচ্ছেন এক এক করে। সেই ভাবনাগুলো এই সময়ে যেন জাঁকিয়ে বসে।

পুজোর সময়ে নতুন জামাকাপড় দেওয়ার লোক কমে গিয়েছে। আগে যেমন জানতাম, আর কেউ কিছু দিক বা না দিক, মা একটা দেবেনই। সেইগুলো এখন খুব মনে পড়ে। এখন আমার শাশুড়িমা আর দিদি উপহার দেন।

Advertisement

পুজো এলে তো সকলের আনন্দ হয়! আর আমার মনখারাপ করে। হয়তো বয়স বাড়ছে, তাই! আগে বিজয়ার সময়ে প্রণাম করতে যাওয়া নিয়েও কত হইচই ছিল। এখন আমরা ফোনেই সবটা সেরে নিই। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যত কমে আসছে, তত আমারও মনখারাপ করছে। মানুষ ভালবাসতে ভুলে যাচ্ছে ক্রমশ। সবই যেন বাইরের চাকচিক্যের জন্য।

আমি নিজে কখনওই কোনও পুজোতেই অঞ্জলি দিই না। তবে এখন আমি চাইলে অঞ্জলি দিতেই পারি। তার কারণ, এখন আমি অঞ্জলিগুলোর অর্থ জানি। আমি রীতিনীতিতে বিশ্বাসী নই। কিন্তু আমি ঈশ্বরবাদী। অঞ্জলি না দিলেও, প্রতি বছরই মা দুর্গার কাছে কিছু চাই। এই বছর আমার চাওয়া— আমাকে আমার শক্তি ফিরিয়ে দাও। আজকাল মনে হয়, আমার সাহস কিছুটা কমে গিয়েছে। আমি একটু শান্ত হয়ে গিয়েছি। আজকাল আর রাগি না। কিন্তু এই শক্তিগুলো আবার ফিরে পেতে চাই। আমি দেখলাম, শান্ত থাকলে মানুষ বড় সুযোগ নেয়। এই সুযোগগুলো আর দিতে চাই না কাউকে। দুর্গাপুজো মানে তো শক্তিরই আরাধনা। নিজের শক্তিও তাই ফিরে পেতে চাই আমি!

এখন পুজো এলে আলাদা করে কিছু আর অনুভব করতে পারি না। কবে কোন দিন এল, চলে গেল — তা বুঝতেই পারি না। কাজের চাপ এমনই থাকে। এমনকি পুজোর সময়ে খাওয়াদাওয়াও ঠিক করে করা হয় না। তবে এই ব্যস্ততাটাই আমি উপভোগ করি। পুজোর সময়ে হইহই করে গান গাইতে যে কী ভাল লাগে! আর বিদেশে গিয়ে কোথাও একটু খিচুড়ি ভোগ পেয়ে গেলে, তা যেন উপরি প্রাপ্তি। তবে একটা সময়ে এই পুজোর অনুষ্ঠানেই জয়ের সঙ্গে বহু ভাল সময় কাটিয়েছি। বিয়ের আগেও আমরা অনুষ্ঠান করতে যেতাম পুজোয়। সেই সময়গুলো খুব স্মরণীয়। জয় তখন আমার গানের সঙ্গে বাজাত। ফলে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটত আমাদের।

গান আর মনখারাপ ছাড়া, পুজো মানে আমার কাছে নস্ট্যালজিয়া। বিজয়ার সময়ে কত মানুষ এক জায়গায় হত। সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া হত। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল। চার দিনের মধ্যে নবমীতে পাঁঠার মাংস থাকতই। আমরা যেহেতু এ দেশি, তাই অষ্টমীতে লুচি খেতাম। গোটা পরিবারের লুচি ভাজতে গিয়ে মা-জেঠিমাদের হাত ব্যথা হয়ে যেত। কিন্তু তার মধ্যেও অনাবিল আনন্দ ছিল। আর বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। তখন নানা রকমের খাবার খেতাম। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে নাগরদোলায় চড়তে পারা ছিল বিরাট ব্যাপার। এই আন্তরিক রীতিগুলো এখন খুব মনে পড়ে। এখন যেন কেমন সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

আমার মনে হয়, আগে সময়টা খুব সহজ ছিল। এখন পুজো নিয়ে তো নানা রকমের ছুতমার্গও উঠে আসে, শুনতে পাই। তবে আমি মনে করি, মানুষ যে যার মতো ইচ্ছে-আনন্দ করতেই পারেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সিঁদুর খেলতে বা দোলের সময় রং খেলতে পছন্দ করি না। কিন্তু সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যাঁদের পছন্দ, তাঁরা খেললে ক্ষতি কী! যে যার মতো আনন্দ করুক না! আনন্দ বলতেই আমার জীবনে গান আসে। আমার জীবনেও পুজোর জন্য একটা বিশেষ গান আছে। পুজো বলতেই আমার সেই গানের কথা মনে পড়ে— ‘ললিতা গো, ওকে আজ চলে যেতে বল না।’ তখন আমি অনেক ছোট। মণ্ডপে এই গানটা প্রতি বছর বাজত। এখনও আমার কানে ওই গানটাই বাজে আর সেই ছোটবেলার পাড়াটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement