ট্রোলিং গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে শিলাজিতের? ছবি: সংগৃহীত।
কটাক্ষ শুনতে শুনতে এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। সহজে কোনও কথাই আর সেই ভাবে ক্ষত তৈরি করতে পারে না। আনন্দবাজার ডট কমকে কথাপ্রসঙ্গে জানালেন শিলাজিৎ মজুমদার।
খুব শীঘ্রই এক নতুন রূপে দেখা যাবে শিলাজিৎকে। অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে থাকবেন তিনি। তাঁকে ঘিরে স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানরা নানা রকমের ব্যঙ্গ করবেন বা ‘রোস্ট’ করবেন। সামনে বসেই নিজের ব্যঙ্গ নিজে দেখবেন তিনি। নতুন প্রজন্মে ‘রোস্ট’ সংস্কৃতি রমরমিয়ে চলছে। দর্শকদেরও ‘রোস্ট’ করতে ছাড়েন না মঞ্চে উপস্থিত কৌতুকশিল্পীরা। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজের প্রতি ব্যঙ্গ কি সওয়া যায়?
এই প্রসঙ্গেই শিলাজিৎ বলেন, “আসলে বিনোদনের মোড়কে যদি ‘রোস্ট’ করা হয়ে থাকে, তা হলে তা অবশ্যই মজার। কিন্তু আমরা রোজ সমাজমাধ্যমে কিছু মানুষ দেখতে পাই, যারা নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে ট্রোল করে। আমার অবশ্য এগুলো গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।”
বর্তমানে মানুষ কথাবার্তা নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক ও সাবধানি। একসময় মানুষ ‘বডিশেমিং’, গায়ের রং নিয়ে খোঁচা দেওয়া— এগুলি নিয়ে সচেতন ছিলেন না। কিন্তু আজ সেই ভাবনায় বদল এসেছে। শিলাজিতের কথায়, “কেউ বেঁটে, লম্বা বা সরু পা— এই সব মন্তব্য আমার গায়ে লাগে না। আসলে আমরা বড়ই হয়েছি সেই ভাবে। ছোটবেলায় আমার একটু ভুঁড়ি ছিল। আমাকে তাই ভুঁড়ি বলে ডাকা হত। মনে পড়ছে না, আমার তাতে খারাপ লাগত কি না। কিন্তু বিরাট কোনও ক্ষোভ তৈরি হত না। তখন মোটা, টেকো এই সব বলাই যেত।”
সবটাই মজার ছলে। কিন্তু চেহারার গড়ন নিয়ে অপমান কখনওই মেনে নেওয়া উচিত নয় বলে জানান শিলাজিৎ। তাঁর কথায়, “আমি তো আমার বন্ধুকেও মোটু বলে ডাকি। তবে অপমান করা হচ্ছে কি না সেটা দেখা দরকার।”
‘রোস্ট’ ও ‘বুলি’ করার মাঝে যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। গায়ক স্বভাবে স্পষ্টবাদী। আবার রসিকতাও জানেন। কখনও কি নিজের করা মন্তব্যের জন্য অনুশোচনা হয়েছে শিলাজিতের? এই প্রসঙ্গে শিলাজিতের স্পষ্ট কথা, “বহু পরিচালককে দেখেছি, শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমানোর জন্য কথা বলেন। এঁরা কিন্তু প্রযোজক বা বিনিয়োগকারী নন। হয়তো তিনি স্বনামধন্য। তাই শিল্পীকে পারিশ্রমিক কমাতে বলা তাঁরা অধিকার বলে মনে করেন। আমার এ সব শুনে রাগ হয়। সেই রাগের চোটে হয়তো কিছু বলে ফেলি। পরে ভাবি, না বললেও হত। এঁদের বলে আসলে কোনও লাভ নেই।”
গানের মাধ্যমেও ব্যঙ্গ করা যায় বলে মনে করেন শিলাজিৎ। ‘হুলিগানইজ়ম’ কয়েক মাস আগে তিন রাজনীতিবিদ্কে খোঁচা দিয়েছিল। শিলাজিৎ বলেন, “ওরা একদম ঠিক করেছে। ওরা তো জনপ্রিয় হল। ওরা জানে, এই তিনটে নাম বিক্রিযোগ্য। সহজে জনপ্রিয়তা আসে। আজ আমি মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু বললে, আমি জনপ্রিয় হব। কারণ মুখ্যমন্ত্রীর নামটাই তেমন। নেতামন্ত্রীদের নাম ব্যবহার করে তো সত্যিই জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়।” সমাজমাধ্যমেও মানুষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নামী মানুষকে ট্রোল করেন বলে মনে করেন তিনি।
কিছু মানুষ অকারণে জনসমক্ষে কিছু মানুষকে হেয় করেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা জানান গায়ক। নাম না-করে এক গায়কের ব্যাপারে শিলাজিৎ বলেন, “কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের বিরাট বিজ্ঞ মনে করেন। মঞ্চ থেকে এক ব্যক্তির সঙ্গে যে ভাবে কথা বললেন, ওটাই অসভ্যতা। এক দর্শক প্রশ্ন করেছিলেন। সামান্য স্ট্যামার করেন তিনি। সেই নামী গায়ক শ্রোতাকে ভেঙিয়ে অপমান করলেন। এগুলো আমি নিতে পারি না।”
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আজ মানুষ সচেতন। নিজের ব্যঙ্গ নিজে শুনতে সবাই পারেন না। অতি সংবেদনশীল মানুষকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্যঙ্গ করতে হলে সম্মতি বা সেই পরিসর প্রয়োজন। গায়ক তথা অভিনেতার কথায়, “সম্মতি তো সত্যিই প্রয়োজন। এই অনুষ্ঠানে আমাকে ব্যঙ্গ করার জন্য আমি পারিশ্রমিক নিচ্ছি। কিন্তু সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বন্ধুবান্ধবের পরিসরে আমরা পরস্পরকে গালিগালাজও করেছি। কিন্তু গালাগালের আক্ষরিক অর্থ কখনওই প্রেরণ করতে চাইনি। অর্থহীন প্রতিক্রিয়া দিয়েছি মাত্র। বন্ধুদের মধ্যে সেই পরিসর রয়েছে বলে বলা যায়। কিন্তু যে কাউকে যা খুশি বলে দেওয়া যায় না।”
বাবা-মায়েরাও ছেলেমেয়েদের অপমান করেন। হাসতে হাসতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “আমার বাবা আমায় কত অপমান করেছেন। ভূগোল পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। সবাইকে সেটা বলতেন বাবা। এটাও তো অপমান।”