বধাই হো
ট্রেন্ডটা শুধু এই বছরের নয়। গত কয়েক বছর ধরেই বলিউডের বিরাট ময়দানে ছক্কা হাঁকাচ্ছে কম বাজেটের কনটেন্টভিত্তিক ছবি। আগে সমালোচকদের নজরে এমন ছবি থাকলেও বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ ছিল অধরা। সেই ধারা অবশ্য বদলে দিয়েছেন রাজকুমার রাও-আয়ুষ্মান খুরানারা। তাঁদের ২০-২৫ কোটির ছবি বক্স অফিসে ব্যবসা করছে একশো কোটিরও বেশি। বিগ বাজেট ছবির সঙ্গে টক্করেও জিতে যাচ্ছে এই ধরনের ছবিগুলি। তবে কি প্রাসাদসম অট্টালিকায় ফ্যাশনে কেতাদুরস্ত সুদর্শন নায়ক-নায়িকাদের দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন দর্শক? ছোট শহরের ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারেই তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি? এই বছরের কয়েকটি ছবির সাফল্য এমনটাই ভাবতে বাধ্য করছে।
রাজকুমার রাও-শ্রদ্ধা কপূর অভিনীত ‘স্ত্রী’-এর বক্স অফিস রেকর্ড তাক লাগিয়ে দিয়েছে ছবির প্রযোজকদের। ২০ কোটির এই ছবি ব্যবসা করেছে প্রায় ১২৫ কোটি। হরর কমেডির মতো নতুন জঁরে নিটোল একটা গল্প বলা সহজ কাজ ছিল না। তবে সেই কাজটাই সসম্মান উতরে দিয়েছেন পরিচালক অমর কৌশিক। ছবিতে যেমন রয়েছে ভরপুর বিনোদন, তেমনই সমকালীন সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বার্তাও। তবে নিন্দুকেরা বলতে পারেন, হরর জঁরের প্রতি দর্শকের আগ্রহ বরাবরের। তাই ছবির সাফল্যে ‘হরর’ কাজ করেছে অনুঘটকের মতো।
সেই যুক্তি মানলে ‘বধাই হো’র সাফল্যকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? কম বাজেটের এই ছবিও একশো কোটির ম্যাজিক অঙ্ক ছোঁয়ার পথে। এই ছবিতে না ছিল হরর, না দর্শককে হলে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো জমকালো স্টারকাস্ট। তবে বিষয়বস্তু ভারতীয়, চরিত্রগুলোও বড্ড চেনাজানা। ভাল কনটেন্ট, চিত্রনাট্য ও পারফরম্যান্সের জোরেই এই ছবি দর্শকের মনে আসন পাকা করে ফেলেছে।
সাফল্য যে শুধু মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি ড্রামার কুক্ষিগত, তেমনটা কিন্তু নয়। কম বাজেটের টানটান থ্রিলারও বাজিমাত করেছে বক্স অফিসে। শ্রীরাম রাঘবনের ‘অন্ধাধুন’-ও দর্শকের খুব পছন্দ হয়েছিল। মুখে মুখে প্রচার এই ছবির সাফল্যে সাহায্য করেছে। ক্যানভাসও খুব সাদামাটা, ঘরোয়া। তবে প্রতি পদে চমক ও গল্প বলার মুনশিয়ানায় ছবিটি জিতে গিয়েছে।
স্ত্রী
নামী পরিচালক, নামী অভিনেত্রী, নামী ব্যানারের সৌজন্যে আলিয়া ভট্ট ও ভিকি কৌশলের ‘রাজ়ি’ দর্শকের নজরেই ছিল। কিন্তু এই ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যও ছবির বাজেটের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ভারত-পাকিস্তান পারস্পরিক সম্পর্কের আঁচে জ্বলতে থাকা এক তরুণীর গার্হস্থ্য জীবন ও তার ট্র্যাজিক পরিণতির টানে দর্শক হলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।
একটা কথা মানতেই হবে, এই সফল ছবিগুলির ক্যানভাস এক ধাঁচের নয়। মিল নেই তাদের স্টারকাস্ট বা প্রচারের পরিসরে। মিল একটাই, ছবিগুলির বাজেট ৪০ কোটির মধ্যেই। তবে যে যেমন পরিসরে গল্প বলতে চেয়েছেন, তেমন ভাবেই বলেছেন। আর দর্শকও সেটা সাদর গ্রহণ করেছেন।
শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যের মাপকাঠিতে দেখলে ‘বাগি টু’ বা ‘সোনু কে টিটু কী সুইটি’র মতো ছবিও আশাতীত ফল করেছে বক্স অফিসে। তবে এই দু’টি ছবির ক্যানভাসে বলিউডের চেনাজানা গ্র্যাঞ্জার ছিল।
বলিউডে রাজকুমার-আয়ুষ্মানের উত্থানের নেপথ্যে এই ছোট বাজেটের ঘরোয়া ছবিগুলির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছবিগুলি যত ভাল চলেছে, মেনস্ট্রিম নায়ক হিসেবে রাজকুমার-আয়ুষ্মানের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে। ছবিগুলির ট্রিটমেন্ট, খুব পরিচিত গল্পকে নতুন কায়দায় বলা বা এমন গল্পকে দেখানো যা আগে দেখানোর কথা ভাবা হয়নি... মোটামুটি এই জাদুমন্ত্রেই হিট করছে এই ধরনের ছবিগুলি। তবে কোন শুক্রবার কোন ছবির ভাগ্য খুলবে, তা হলফ করে আগে থেকে কেউই ঠিক বলতে পারেন না।
ভরসা একটাই, কনটেন্টের জোর থাকলে ছোট বাজেটের ছবিও বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে, পরেও কাঁপাবে।