হাওয়া-হাওয়াই: ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে শ্রীদেবী।
বছরটা ১৯৮৯। পরপর ছবি আসছে দু’জনের। ‘চালবাজ’-এর পরে সানি দেওল বলেই দিলেন, শ্রীদেবীর সঙ্গে আর কাজ করবেন না। কারণ ছবিতে শ্রীদেবী থাকলে নায়কের কিছু করার থাকে না।
শ্রীদেবী নিজে আবার তখন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ছবির প্রস্তাব ফেরাচ্ছেন। কারণ, শোভাবর্ধক উপগ্রহ হয়ে থাকায় তাঁর উৎসাহ নেই। আটের দশকের সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীর তখনও পর্যন্ত একসঙ্গে মাত্র দু’টো ছবি, ‘ইনকিলাব’ আর ‘আখরি রাস্তা’।
দু’টো ঘটনাই বলে দেয়, শ্রীদেবীর বিপ্লবটা ঠিক কোথায়। ছবিপিছু টাকার অঙ্কে অমিতাভর পরেই তিনি। এমনিতে মুখচোরা— ক্যামেরা চালু হলেই বিদ্যুৎলতা! ফ্রেমে থাকলে চোখ ফেরানো অসম্ভব।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটে দারুণ আগ্রহ ছিল শ্রীদেবীর, বললেন সৌরভ
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’য় ‘কাটে নহী কাটতে ইয়ে দিন ইয়ে রাত’ গানটার শ্যুটিং আজও মনে রেখেছেন কলাকুশলীরা। শ্রী-র ধুম জ্বর। পরিচালক শেখর কপূর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসে আছেন! তার আগে ‘জানবাজ’-এ শ্রীদেবীর ‘হর কিসিকো নহী মিলতা’ গানের দৃশ্যে বাজার মাত করেছেন ফিরোজ খান। শেখরকে সেটা ছাপিয়ে যেতেই হবে। জ্বরে পুড়তে পুড়তে আর পর্দায় ভিজতে ভিজতে শ্রী যে আগুন জ্বাললেন, অগুন্তি দর্শক বলেছিলেন, ছবির নাম ‘মিস ইন্ডিয়া’ হওয়াই উচিত ছিল!
শোকার্ত: প্রিয় নায়িকার ছবি নিয়ে তাঁর লোখান্ডওয়ালার বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড়। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
শ্রীদেবী আসলে বরাবর চ্যালেঞ্জের মুখেই জ্বলে উঠেছেন সবচেয়ে বেশি। হিন্দি ছবি নায়িকা হিসেবে তাঁকে প্রথম পায় ‘সোলওয়া সাওন’-এ (১৯৭৯)। চলেনি সেটা। হিন্দি উচ্চারণ নিয়েও কথা ওঠে। শ্রী কিছু দিন সরে থাকলেন দক্ষিণে। চার বছর পরে যখন ফিরলেন, বলিউড শাসন করে তবে ছাড়লেন।
চার বছর বয়স থেকে ছবি করছেন। ক্যামেরার সামনেই বেশি স্বচ্ছন্দ যেন। প্রথম ছবি, ‘থুনাইভান’ (১৯৬৭) থেকেই ‘বেবি শ্রীদেবী’ হিট। সাতের দশকের মাঝামাঝি অবধি শিশু অভিনেত্রী হিসেবেই পরপর ছবি করে গিয়েছেন। হিন্দি ছবিও তাঁকে প্রথম বালিকা চেহারাতেই দেখে। ১৯৭৫ সালের ‘জুলি’ ছবিতে নায়িকা লক্ষ্মীর বোন সেজেছিলেন শ্রী। পরের বছর মাত্র ১৩ বছর বয়সে নায়িকা। বিখ্যাত তামিল পরিচালক কে বালচন্দ্রের ছবি ‘মুন্দ্রু মুদিচু’ (১৯৭৬)। সঙ্গে কমল হাসন আর রজনীকান্ত। গায়ত্রী, ১৬ ভায়াথিনিলে, সিগাপ্পু রোজাক্কাল— কখনও কমল, কখনও রজনীর সঙ্গে শুরু হল শ্রী-র পরপর হিটের পালা। দক্ষিণের অধিকাংশ বড় নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন। শ্রী-র ছবির সংখ্যা হিন্দিতে ৭২, তেলুগুতে ৮২, তামিল ৭২, কন্ন়ড় ৬, মালয়ালমে ২৬টি। বলিউডে প্রথম দিকে তাঁর সবচেয়ে পয়া নায়ক ছিলেন জিতেন্দ্র। পরপর দক্ষিণি ছবির রিমেক হচ্ছিল, জিতেন্দ্র-শ্রী জুটি কাজ করছিলেন চুটিয়ে। হিন্দি সংলাপ ডাব করে নিতেন গোড়ার দিকে, রেখাও মাঝে মাঝে গলায় দিয়েছেন শ্রী-র জন্য। পরে আর সেটা দরকার হয়নি। তবে হিম্মতওয়ালা, জাস্টিস চৌধুরি, মাওয়ালি, তোফা-র দর্শক শ্রী-কে মূলত লাস্যময়ী হিসেবেই চিনতেন। দক্ষিণের সিল্কস্মিতার মতো শ্রীদেবীকে বলিউডের ‘থান্ডার থাই’ বলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শ্রী যে কত বড় অভিনেত্রী, জানার সুযোগ ঘটল ‘সদমা’য় (১৯৮৩)। কমল এ দিনও লিখেছেন, ‘‘সদমা-র ঘুমপাড়ানি গানটা আজও ভুলতে পারি না!’’
১৯৮৬-’৮৭ থেকে শ্রীদেবী পুরোপুরি অভিনয়প্রধান চরিত্রে মন দেওয়া শুরু করলেন। ‘ঘর সংসার’, ‘সুহাগন’, ‘নাগিনা’র পরেই এল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। হিন্দি ছবি নৃত্যপটীয়সী অনেক দেখেছে। কিন্তু নাচের সঙ্গে কমেডিকে এ ভাবে মিশতে দেখেনি। শ্রীদেবীর তৈরি করা সেই রাস্তা ধরেই পরে মাধুরী দীক্ষিত হেঁটে যাবেন। চালবাজ, চাঁদনী, লমহে, খুদা গাওয়া শুধু শ্রী-র প্রতিভার দীপ্তি ছড়াবে না, বলিউডে নায়িকাদের কাজের পরিধিই বাড়িয়ে দিয়ে যাবে। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে সম্পর্কের ঝড়, বনি কপূরকে বিয়ে নিয়ে টানাপড়েন, জীবনে উথালপাথাল যতই থাক, ‘অ্যাকশন’ শব্দটা শুনলেই শ্রী অন্য মানুষ!
হালফিলে হিন্দি ছবির গড়ন অনেক পাল্টে গিয়েছে। সেখানেও ১৫ বছর পরে আবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জ্বলে ওঠা। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’। ‘মম’ও পছন্দ করেছিলেন দর্শক। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘জিরো’-র কাজ শেষ হয়েছিল। লম্বা ইনিংসের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন শ্রী। এক নিমেষে স্তব্ধ হয়ে গেল সব।