UMA

‘কী করে আর একটু স্বার্থপর হব, তারই পাল্লা দিয়ে চলেছি’

আমরা কি সিনেমাটা দেখে কাঁদলাম? না, আসলে আমরা কাঁদলাম নিজেদের দেখে। কী হতে পারতাম, কী হওয়া উচিত ছিল, সেটা দেখেই কাঁদলাম। হয়তো সৃজিত একটা আশ্বাস দিল, এখনও সময় আছে। সেই আশ্বাসে কাঁদলাম। ছবি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতেই হয়, এটা একটা রূপকথা।

Advertisement

‘উমা’ ছবিটি দেখে লিখলেন নচিকেতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ১৭:২৬
Share:

উমা ছবির পোস্টার

কথা দিলাম যাস না ছেড়ে, রাখব কথা রাখ বিশ্বাস, সূর্যের সোনা দিয়ে সাজাবই ঘর, শুধু আমাদের নয়, সব্বার। তার পর এক দিন হব ইতিহাস।

Advertisement

কেন এই লাইনগুলো লিখে ফেললাম জানি না। বোধহয় উমা ছবিটা দেখার পর এ রকম একটা আকাশের মতো বড় এবং বেয়াড়া ইচ্ছে প্রকট হল তাই।

আসলে, এখন আমাদের দেশ তথা পৃথিবীটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়ে গেছে। এখানে প্রত্যেকটা মানুষই এক একটা দ্বীপ। নিজেদের ছাড়া ভাবার অবকাশ নেই বললেই চলে। শুধু আমি। এখানে সব্বার শব্দটা ইউটোপিয়ান। এই গলে যাওয়া আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে সৃজিতের কী দরকার ছিল এমন একটা রূপকথাকে ক্যামেরায় ধরার, যেখানে শুরুতেই আমরা জানি, গল্পের পরিণতি কী। তবে কেন আমরা অনেক ক্ষণ ধরে ছবিটা দেখলাম? কেন কাঁদলাম?

Advertisement

আরও খবর
এই মেঘলা দিনে একলা ইশার কি মন খারাপ?

আমরা কি সিনেমাটা দেখে কাঁদলাম? না, আসলে আমরা কাঁদলাম নিজেদের দেখে। কী হতে পারতাম, কী হওয়া উচিত ছিল, সেটা দেখেই কাঁদলাম।

হয়তো সৃজিত একটা আশ্বাস দিল, এখনও সময় আছে। সেই আশ্বাসে কাঁদলাম। ছবি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতেই হয়, এটা একটা রূপকথা। এই রূপকথায় রাজা আছে, রানি আছে, রাজকন্যা আছে এবং দৈত্যও আছে। রূপকথার গল্পের মূল আকর্ষণ কিন্তু দৈত্য। কিন্তু এখানে অনেক দৈত্য আছে। যারা আমাদেরই আদলে গড়া। কিন্তু এ ছবির মূল দৈত্য অঞ্জন দত্ত। পর্দায় যাঁর উপস্থিতি সমস্ত চরিত্রকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু সৃজিতের রূপকথায় সে-ও অস্কার ওয়াইল্ডের দৈত্য হয়ে গেল। এ তো হওয়ারই ছিল। আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানতে চাই না।

আরও খবর
নার্গিসের রেকর্ড করা বার্তা পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন সঞ্জয়

আমরা মাথা হেঁট করে মোবাইল ফোনে বন্ধু খুঁজি। কিন্তু পাশের বাড়ির লোকটার খবর না রেখেই। রান্না করে ছবি পোস্ট করি দূরদূরান্তে। কিন্তু পাশের বাড়ির বৃদ্ধ মানুষটা, যাঁর ছেলেমেয়ে বিদেশে, তাঁকে খাবারটা একটু ‘টেস্ট’ করতে না দিয়েই।

আমরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরাই পাল্লা দিয়ে চলেছি। কী করে আর একটু স্বার্থপর হওয়া যায়।

এটা যেন সময়ের ডাক। সে ডাকে কান না দিলেই তুমি বোকা। তুমি সময়ের উপযোগী নও। সৃজিত এর বিরুদ্ধে গিয়েই হয়তো বলল, তবুও আমি বোকাই হব, ‘এটাই আমার অ্যাম্বিশন।’

এ ছবি সব্বারই দেখা উচিত, কারণ এই পৃথিবীতে সব মানুষই আসলে বোকা। চালাক হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। আসলে যন্ত্রণা সর্বজনীন। যন্ত্রণা আয়না খোঁজে। যে আয়নায় নিজেকে খুঁজে পায়, সেখানেই ধরা দেয়।

সাহির লুধিয়ানভির একটা শের মনে পড়ছে, ‘কউন রোতা হ্যায় কিসি অউর কে খাতির অ্যায় দোস্ত। সব কো আপনি হি কিসি বাত পে রোনা আয়া।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন