প্রেমকাহিনির উপেক্ষিতা নায়িকা সুলক্ষণা পণ্ডিত। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথম ছবিতেই সঞ্জীবকুমার তাঁর নায়ক। প্রথম ছবিতেই কি মন দিয়েছিলেন নায়ককে? সঞ্জীবকুমারের প্রয়াণের চল্লিশ বছর পর, তাঁর মৃত্যুদিনেই চিরবিদায় নিলেন ষাট-সত্তর দশকের জনপ্রিয় গায়িকা-নায়িকা সুলক্ষণা পণ্ডিত। আরও একবার সঞ্জীবকুমারের সঙ্গে তাঁর ‘প্রেমকাহিনি’ চর্চায়।
সাল ১৯৭৫। সুলক্ষণার প্রথম ছবি ‘উলঝন’। সেই প্রথম পরস্পরের মুখোমুখি তাঁরা। এর পর একে একে ‘সঙ্কোচ’, ‘হেরাফেরি’, ‘অপনাপন’, ‘খানদান’-এর মতো ছবির নায়িকা তিনি। শোনা যায়, সঞ্জীবকুমারের সঙ্গে ‘উলঝন’ ছাড়া আর কোনও ছবিতেই নাকি পর্দাভাগ করেননি। তার পরেও একতরফা প্রেমে ডুবে থেকেছেন সুলক্ষণা। সঞ্জীবকুমারের জীবন নিয়ে পরে একটি বই লেখেন হানিফ জ়াভেরি। তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘অঙ্গুর’ ছবির সময় থেকেই নাকি নায়ককে চোখে হারাতেন তাঁর স্বঘোষিত নায়িকা ‘প্রেমিকা’!
এ রকম ঘটার কারণও নাকি ছিল। তাঁর জীবনীতে লেখা, সেই সময় হেমা মালিনীকে প্রেমপ্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জীব। ‘ড্রিমগার্ল’ তাঁকে নিরাশ করেছিলেন। মন ভেঙে গিয়েছিল ‘অনামিকা’ ছবির নায়কের। অধিকাংশ সময় মদে ডুবে থাকতেন। সুলক্ষ্মণা সেই সময়ে এসে তাঁর হাল ধরতে চেয়েছিলেন। সঞ্জীবকুমারের জীবনীতে তাঁর ভাইঝি জিগনা শাহ বলেছিলেন, “সুলক্ষণাজি ওঁকে জোর করে মন্দিরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দাও’! সঞ্জীবকুমার শোনেননি। জানতেন, তিনি বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই কারও জীবন নষ্ট করতে চাননি।”
বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে লেখক সংবাদমাধ্যমকে আরও জানিয়েছিলেন, সঞ্জীবকুমার দুই নায়িকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নূতন আর হেমা মালিনী। সুলক্ষণার প্রতি তাঁর কোনও আকর্ষণ ছিল না। পুরোটাই ছিল সদ্যপ্রয়াত অভিনেত্রীর একতরফা। তাই প্রেমিকের থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানসিক দিক থেকে ভাঙতে শুরু করেন তিনি।
সাল ১৯৮৫। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে প্রয়াত সঞ্জীবকুমার। সুলক্ষণা পণ্ডিতের হৃদয় চুরমার। সেই সময়েই তাঁর মায়েরও মৃত্যু হয়। অতি প্রিয় দুই মানুষ পরপর চিরবিদায় নিতেই নায়িকা মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত। নিজেকে সামলাতে না পেরে অভিনয়, সমাজজীবন থেকে সরিয়ে অন্তরালে তিনি। নায়ক প্রেমিককে কোনও দিন ভুলতে পারেননি। তিনি তাঁকে সিঁদুর পরাননি। আমৃত্যু ‘চিরকুমারী’ রয়ে গেলেন সুলক্ষণা পণ্ডিত।
বলিউড সে দিনও তাঁর অনুভূতিকে সম্মান জানিয়েছিল। মৃত্যুর পরে তাই আরও একবার ‘অসম্পূর্ণ ভালবাসা’ স্মরণ করল মায়ানগরী।