Suman Mukhopadhyay

অনির্বাণের বিবৃতির অংশ ইংরেজিতে অনুবাদ করে সমর্থনের বার্তা সুমনের

ভোট-রাজনীতিতে কাজে আসে না এমন নাট্যশিল্পীদের গায়ে হাত তুলছে শাসকদল? তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অনির্বাণ। তাঁকে সমর্থন করলেন সুমন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৫৪
Share:

অনির্বাণের বক্তব্যের ইংরেজি তর্জমা করে আবার পোস্ট করলেন সুমন। সাফ জানালেন, থিয়েটারকর্মীদের প্রতি হিংস্রতা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ফাইল চিত্র

ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চন না হলে অভিনেতাদের পাত্তা দেওয়া হবে না? সম্প্রতি নাট্যকর্মী তথা অভিনেতা অমিত সাহাকে প্রহারের ঘটনায় শাসকদলকে ধিক্কার জানিয়েছিলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁকেই এ বার সমর্থন পরিচালক, নাট্যব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায়ের। অনির্বাণের বক্তব্যের ইংরেজি তর্জমা করে আবার পোস্ট করলেন সুমন। সাফ জানালেন, থিয়েটারকর্মীদের প্রতি হিংস্রতা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

সুমনের দাবি, তিনিও প্রতিবাদ সভায় যেতে পারেননি কাজের চাপে। কিন্তু ঘটনার প্রেক্ষিতে চুপ করে থাকার উপায় নেই। তাঁর কথায়, “সহকর্মী অনির্বাণ এত স্পষ্ট লিখেছেন, তারই কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি।” সুমন এর পর তাঁর নিজের পোস্টে অনির্বাণের বক্তব্য তুলে ধরেন। জানান, সেটি তাঁরও বক্তব্য।

এক দীর্ঘ বার্তায় শাসকদলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন অনির্বাণ। নতুন বছর, জানুয়ারির ১৫ তারিখ তাঁরও নাটকের শো রয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে লেখেন, ‘‘আমার পরের অভিনয় রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান।’’

Advertisement

এই প্রথম সরাসরি শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বর তুলতে দেখা গেল অনির্বাণকে। দীর্ঘ বার্তার এক অংশে তাঁর দাবি, “ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে!” তাঁর সেই বক্তব্য সমর্থন করে শেয়ার করেন আরও অজস্র শিল্পী।

গত ২৩ ডিসেম্বর বেলেঘাটার পার্টি অফিসে নাট্যোৎসব করার আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন অভিনেতা তথা ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’র নাট্য পরিচালক অমিত এবং তাঁর দলের সহকর্মী। তখনই অমিতকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন একাধিক নাট্যব্যক্তিত্ব-সহ টলিউডের পরিচালক এবং অভিনেতারাও। ২৮ ডিসেম্বর প্রতিবাদী সভায় গিয়েও মুখ খুলেছেন অনেকে। অনির্বাণ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করলেন সমাজমাধ্যমেই। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’র পরিচালক লিখেছেন, “আমি প্রতিবাদ করছি, আরও অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন।”

‘লুটেরা’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ভটভটি’-সহ বহু ছবিতে চেনা মুখ অমিত। পাশাপাশি নিজের নাট্যদলে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন তিনি। গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছিলেন অমিত বেলেঘাটার একটি মাঠে। কিন্তু তার আগেই কিছু রাজনৈতিক নেতা তাঁকে মারধর করে নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জানাজানি হলে সমাজমাধ্যমে শোরগোল পড়ে। অমিতের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন সহকর্মী তথা টলিউডের অভিনেতা এবং পরিচালকরাও। ২৮ ডিসেম্বর বেলেঘাটার রাসমেলা মাঠে আয়োজিত সভাতেও গিয়েছিলেন অভিনয় জগতের অনেকেই। তবে শুটিং থাকায় আসতে না-পারা অনির্বাণ তাঁর বক্তব্য লিখে দেন ফেসবুকে।

তাঁর কথায়, “আমি আজ বেলেঘাটাতেই শুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে। নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে। সুদূর বা অদূর ইতিহাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে।”

শিল্পীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে অনির্বাণ আরও লেখেন, “কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে এক দিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন (অভিযুক্ত), দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এ রকম কিছুই হয়তো হবে। আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।”

এর পরই তিনি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রসঙ্গ তোলেন। কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে যে মঞ্চে কিছু দিন আগেই বক্তব্য রেখে গিয়েছেন শাহরুখ-অমিতাভরা। অনির্বাণ লেখেন, “আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাক্‌স্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গিয়েছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন।

সে দিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছু দিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন।”

অনির্বাণ লেখেন, “চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই।’’ বাংলার রাজনীতিই যদি শিল্প সৃষ্টির অন্তরায় হয়, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন অনির্বাণ। নিজেকে তিনি সবার আগে থিয়েটারকর্মী বলেই মনে করেন। তাই আর এক থিয়েটারকর্মীর প্রতি এই ‘অন্যায়’ মেনে নেবেন না বলে জানান।

সকলকে আহ্বান জানিয়ে লিখলেন, “আসুন, প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদনপত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই।” এই একই বিবৃতির ইংরেজি অনুবাদ নিজের সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে ভাগ করে নিয়েছেন সুমন।

প্রতিবাদে সোচ্চার হন তরুণ অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও। নিজে এক জন থিয়েটারকর্মী হিসাবে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনিও। শাসকদলের হিংস্রতার বিরুদ্ধে অন্য শিল্পীদের প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘অমিত সাহা এবং অরূপ খাঁড়ার গায়ে হাত ওঠার ঘটনায় গোটা পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা এগিয়ে আসুক। দেখা যাক, কতজনের গায়ে হাত তুলবে এই তৃণমূলের লুম্পেন গুন্ডাবাহিনী।’’

ফেসবুকের দেওয়ালে ঋদ্ধি আরও লিখেছেন, ‘‘নাট্যোৎসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এরা দেখিয়ে দিল যে মানুষের থেকে কেকের মূল্য বেশি। সদ্য গজিয়ে ওঠা উৎসবের ভিড়ে আরেকটা উৎসব জুড়ে দেওয়া হোক, গণধোলাইয়ের উৎসব। যুক্তি আর বুদ্ধি চিতায় তুলে সব শাসকদল সেই গায়ে হাত তোলে, আবার তুলবে, বার বার তুলবে। আমরা ব্যর্থ, নির্লজ্জ, হতভাগ্য জনগণ। এই গায়ে হাত তোলা আমাদের সকলের গায়ে হাত তোলা। গণতন্ত্র পালন করা, ভোট এবং ট্যাক্স দেওয়া নাগরিককে রাতের বেলা পুলিশ ঘুষ চাইতে গিয়ে সুবিধে করতে না পেরে হেনস্থা করবে। মিথ্যে অভিযোগ এনে আর অমিত সাহাদের সুস্থ ভাবে নাট্যোৎসব আয়োজন করার জন্য মার খেতে হবে। আর আমাদের টালিগঞ্জের মহানায়ক মহানায়িকারা সভা আলো করে ঘুর ঘুর করবে ক্ষমতার মধুর পাশে, তাদের কাছে রাজনীতি একটা পার্ট টাইম জব...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন