নাটকে নামভূমিকায় অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়,দেবপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
নটী বিনোদিনী চারিদিক থেকে তখন ‘প্রতারিত’। তাঁর গুরু গিরিশ ঘোষ থেকে শুরু করে প্রেমিক রাজাবাবু— আঘাত পেয়েছেন সবার থেকে! শুধু অভিনয় এবং নাটককে ভালবেসে নীরবে সব ‘অপমান’ সয়েছেন তিনি। একটা সময়ের পরে অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন একসময় যৌনপল্লিতে বেড়ে ওঠা ব্যতিক্রমী এই নারী। তাঁর শেষ বয়সের খবর ক’জনই বা রাখেন? সম্প্রতি, রুক্মিণী মৈত্র বড়পর্দায় প্রথম আনেন তাঁর জীবনকথা। ছবিতে নটীর শেষ জীবনের আভাসটুকুই ছিল। এ বার মঞ্চে নটীর জীবনের শেষ অধ্যায়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব নাটকে আনছেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘নাট্যরঙ্গ’। নাম ‘সেই এক বিনোদিনী’। যেখানে ‘বৃদ্ধ’ নটীর সঙ্গী তাঁর উত্তরসূরি আর এক নটী তারাসুন্দরী।
নাটকে বিনোদিনী আর তারাসুন্দরী মুখোমুখি। তারাসুন্দরী বিনোদিনীর মুখ থেকে বার করছেন তাঁর জীবনের অজানা কাহিনি। তাঁরা যেন জবাব চাইছেন তাঁদের উত্তরসূরি অবহেলিত নটীদের থেকে। কেন সেই সব নটীর প্রতিভার যথাযোগ্য সুবিচার হয়নি?
এই বিষয়টি নিয়ে নাটক লিখলেন সুরজিৎ। পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। তিনিই বিনোদিনীর আত্মা। যিনি মুখোমুখি হবেন তারাসুন্দরীর। এই ভূমিকায় অভিনয় করবেন অভিনেতা দম্পতির মেয়ে দেবপ্রিয়া। এ ছাড়াও থাকবেন নাট্যরঙ্গ দলের অভিনেতারা।
বছরের শুরুতে বড়পর্দায় নটীর জীবন দেখে ফেলেছেন দর্শক। তাই কি তাঁর বার্ধক্যদশা মঞ্চে দেখাতে চাইছেন সুরজিৎ?
আনন্দবাজার ডট কম-এর প্রশ্নের জবাবে সুরজিৎ বললেন, “একেবারেই তাই। কাউকে জানতে গেলে তাঁর গোটা জীবন জানা বাঞ্ছনীয়। সেই জায়গা থেকেই আমার এই ভাবনা।” তাঁকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন নাট্যদলের সভাপতি এবং প্রধান নাট্য উপদেষ্টা স্বপন সেনগুপ্ত। জোরকদমে মহড়া চলছে। মঞ্চসজ্জায় বিলু দত্ত। নাটক লেখার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন সুরজিৎ। তাঁকে নাটক লিখতে সহযোগিতা করেছেন শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।
একটি নাটকে মা-বাবা-মেয়ে! বাংলা নাটকের মঞ্চে স্বজনপোষণ?
প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছেন সুরজিৎ। বলে উঠেছেন, “তা হলে তো ‘বহুরূপী’, ‘নান্দীকার’, ‘চেতনা’ বা ‘স্বপ্নসন্ধানী’র নাট্যদলের নাম সকলের আগে নিতে হয়। শম্ভু মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায় বা কৌশিক সেন কিন্তু তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরই মঞ্চে তুলে ধরেছেন। যাঁরা প্রত্যেকে মঞ্চ এবং পর্দাসফল।” পাশাপাশি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা, মেয়ে দেবপ্রিয়ার কাজের কথাও। “সভাপতি স্বপনদা নিজে অনিন্দিতাকে নাট্য পরিচালনার পাশাপাশি ‘বিনোদিনী’র চরিত্রে বেছেছেন। কারণ, অনিন্দিতা ২০০৯-এ ‘বিনোদিনী কথা’ নাটকে নামভূমিকায় অভিনয়ের জন্য ‘স্বপ্নসন্ধানী’র ‘শ্যামল সেন স্মৃতি সম্মান’ পেয়েছিল।” একই ভাবে কন্যা দেবপ্রিয়া ‘নাট্যরঙ্গ’র ‘মধ্যরাতের চুপকথা’ নাটকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে নাট্যজগতের বিশিষ্টদের প্রশংসা পেয়েছেন।