Taslima Nasrin

Taslima Nasrin: মৃত্যু বিষয়ক লেখা লিখতেই নেটমাধ্যমে ‘মৃত’ তসলিমা নাসরিন!

তসলিমা ঈশ্বরকে বিদায় জানিয়ে বলেন, ‘এ আমার টেম্পোরারি ভিজিট ছিল। এর পর পার্মানেন্ট যখন আসব, তখন অনেক গল্প হবে, কেমন?’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:৩৩
Share:

তসলিমা নাসরিন।

১৭ জানুয়ারি, শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুর পরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। প্রথম পংক্তিতেই লিখেছিলেন, ‘আমি চাই আমার মৃত্যুর খবর প্রচার হোক চারদিকে। প্রচার হোক যে, আমি আমার মরণোত্তর দেহ দান করেছি হাসপাতালে, বিজ্ঞান গবেষণার কাজে।’ এটুকু পড়েই ফেসবুক বুঝে নিয়েছে, লেখিকা আর বেঁচে নেই! সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আইডি-তে ‘রিমেমবারিং’ শব্দের যোগ। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক তোলপাড়। যাঁরা এত দিন লেখিকার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তাঁরাও ফেসবুকের এই ভ্রান্তিতে রুষ্ট। একের পর এক তোপ দেগেছেন ফেসবুকের পাতাতেই। মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর দলের এই বালখিল্য হজম করতে কষ্ট হয়েছে অনুরাগীদের। তাঁদের দাবি, পুরো পোস্ট পড়লেই স্পষ্ট তসলিমা শাঁওলি মিত্রের আদলে একটি শেষ ইচ্ছাপত্রের ভাবনা জানাতে চেয়েছেন।
সে সব না বুঝে জীবিতকে কী করে ‘মৃত’ বানিয়ে দিল নেট মাধ্যম?

Advertisement

যাঁকে নিয়ে এত হইচই সেই তসলিমা কী বলছেন? ঘটনায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে ভরা একটি লেখা তিনি ফের লিখেছেন। প্রথমেই জোরালো ঘোষণা, পুনরুত্থান! তার পরে পোস্টে বিশদে ২১ ঘণ্টা ‘মৃত’ থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। লেখিকার কথায়, ‘জি-হা-দিদের প্ররোচনায় ফেসবুক আমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল প্রায় একুশ ঘণ্টা আগে। এই একুশ ঘন্টায় আমি পরকালটা দেখে এসেছি।’ তার পরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই রসিকতা করে লিখেছেন , ‘উনি তো আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন, আমার জন্য বিশাল খানাপিনার আয়োজন করেছিলেন। খেয়ে দেয়ে বিশ্রামও নিলাম কিছু ক্ষণ। হুরগুলো ঘুরঘুর করছিল পায়ের কাছে। দুটো ফুটফুটে গেলবান আমাকে রূপোর গ্লাসে দ্রাক্ষারস পান করতে দিল। পান শেষ হওয়ার পর উনি এসে বললেন ‘যাও সাগরগুলোয় সাঁতরে এস। একটি দুধের, একটি মদের, আরেকটি মধুর সাগর'। আমি মধুর সাগরে সাঁতরে উঠে এলাম।’

ঈশ্বর নাকি তাঁকে দুধ এবং মদের সাগরে সাঁতরানোর অনুরোধও জানিয়েছিলেন। তিনি রাজি হননি। তাঁর ব্যাখ্যা, তিনি দুধ এবং মদ কোনওটাতেই আগ্রহী নন। বদলে বেদানার সাগর থাকলে সেখানে অনেক ক্ষণ সাঁতরাতেন তিনি!

Advertisement

তিনি লিখছেন, ‘এরপর ‘উনি’ আমাকে বেহেস্ত আর দোযখগুলো ঘুরিয়ে দেখালেন। আমার জন্য বেহেস্তের মনোরম যে জায়গাটি বরাদ্দ রেখেছেন, সেটিও দেখালেন। আমি বললাম, 'কেন, আমি তো আপনাকে নিয়ে কত হাবিজাবি বলি, আমাকে দোযখে দিন'। উনি বললেন, 'না, আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলেছি, যারা বুদ্ধিমান, আমার ভুল ধরিয়ে দেয়, বেহেস্তের লোভ করে না, তাদের আমি বেহেস্তে পাঠাব, আর যারা দিন রাত খারাপ কাজ করছে, পাপ করে পাপমোচনের জন্য হজ করে আসছে, বেহেস্তের লোভে আমার গুণগান গাইছে, তাদের সব ক’টাকে ধরে ধরে দোযখে নিক্ষেপ করব।’

লেখিকার আরও দাবি, ঈশ্বর নাকি তাঁকে আলিঙ্গনের অনুরোধও জানান! লেখিকা রাজি হলে তিনি জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন এঁকে দেন। ঈশ্বরের চোখ তখন ভিজে! কাছে দাঁড়ানো ডানাওয়ালা পক্ষিরাজ ঘোড়ার পিঠে চেপে তসলিমা বিদায় জানিয়ে বলেন, ‘এ আমার টেম্পোরারি ভিজিট ছিল। এরপর পার্মানেন্ট যখন আসব, তখন অনেক গল্প হবে, কেমন?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন