কী ভাবে অভিনেত্রী হলেন অমৃতা? ছবি: সংগৃহীত।
লবঙ্গ খাওয়া তাঁর নেশা। ব্যাগে এক কৌটো লবঙ্গ না থাকলে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান। আমজাদ আলি খানের অনুষ্ঠান দেখে, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোলে বড় হওয়েছেন অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার মেয়ে হলেও গ্রামের বাড়ি, পুকুর, ভাইবোনেদের মজা— এই সব মিলিয়ে বেড়ে ওঠা তাঁর। আনন্দবাজার ডট কমের রেকর্ডার চালু হতেই ছোটবেলায় ডুব দিলেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: ছোট থেকেই আপনার বাড়িতে তা হলে গানবাজনা, সিনেমার চর্চা!
অমৃতা: বাবা বিনোদন সাংবাদিক। সেই সূত্রে, ছোট থেকেই পরিবারে নাটক, সিনেমার চর্চা। বাবা-মা, আমি নাটক দেখতে যেতাম। রাত জেগে আমজাদ আলির অনুষ্ঠানও দেখেছি। তখন কিছুই বুঝতাম না। আর পুজোর ছুটি, গরমের ছুটি কাটত হুগলিতে গ্রামের বাড়িতে। নিকো পার্ক নয়, আমার ছোটবেলা কেটেছে সিনেমা, নাটক, বই, কবিতা, গান— এ সব নিয়েই।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার পড়াশোনা সমাজতত্ত্ব নিয়ে। তার পরে চাকরি না করে অভিনয়কে পেশা করলেন কেন?
অমৃতা: বাড়িতে কোনও দিনই সেই চাপ ছিল না। আর ছোট থেকে গান করতাম স্কুলে। একাদশে যখন পড়ি তখন সঙ্গীত ছিল অন্যতম বিষয়। বাড়িতে সবাই অলিখিত ভাবে জানতেনই, আমি দশটা-পাঁচটার চাকরি করব না। ভেবেছিলাম বাবার মতো সাংবাদিক হব। বাবা বলতেন, সাংবাদিকদের উল্টো দিকে বসার চেষ্টা করো। গান, নাচ শিখেছি বলে সুবিধা হয়েছিল। প্রথম অনিন্দ্যদা (চট্টোপাধ্যায়) আমায় বলেছিলেন একটা কাজের জন্য। তখন অবশ্য করা হয়ে ওঠেনি।
ওয়েব সিরিজ় থেকে সিনেমায় পরিপূর্ণ অমৃতার ঝুলি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: বাবা বিনোদন সাংবাদিক হওয়ায় সুবিধা হয়েছে, না কি অসুবিধা?
অমৃতা: দুটোই। সবাই মোটামুটি জানেন, আমি অমুকদার মেয়ে। ইন্ডাস্ট্রিতে তো নানা ধরনের মানুষ আছেন। অমুকদার মেয়ে হওয়ায় তাঁরা ভেবেচিন্তে কথা বলতেন। বাবার কারণেই কেউ আমায় কখনও যা খুশি প্রস্তাব দেননি। অমুকদার মেয়ে বলে বুঝেছেন, এখানে গন্ডগোল করা যাবে না। আবার সাংবাদিকের মেয়ে বলে অনেকেই ভেবেছেন আমার খুব অহং। বাবা কখনও গ্রুপবাজি করেননি। আমিও পারি না সেটা করতে।
প্রশ্ন: প্রযোজক, পরিচালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে তবেই কাজ পাওয়া যাবে। শুধু টলিউড নয়, সব ইন্ডাস্ট্রিতেই কমবেশি এমনটা শোনা যায়। আপনার সঙ্গে কখনও ঘটেছে?
অমৃতা: দশ বছর কাজ করছি আমি। প্রায় সব সময়েই পরিচালকদের তরফেই পেয়েছি কাজের প্রস্তাব। খুব কম সময় হয়েছে, প্রযোজকেরা আমায় সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। তা ছাড়া, ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বদনাম আছে, আমি নাকি খুব নাকউঁচু, গম্ভীর মানুষ। তাই সে ভাবে কোনও গন্ডগোলের প্রস্তাব পাইনি।
প্রশ্ন: সদ্য মুক্তি পেল ‘ভূতপূর্ব’। কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে ‘চাবিওয়ালা’। সারা বছর ধরেই আপনার কিছু না কিছু কাজ দেখা যায়। তা সে ওয়েব সিরিজ় হোক বা সিনেমা। তাও আপনাকে নিয়ে আলোচনা এত কম হয় কেন?
অমৃতা: বরাবর কাজের মাধ্যমেই কাজ পেয়েছি আমি। ইদানীং দেখছি শুধু কাজ করে কাজ পাওয়া যায় না। এমনকি, কাজ না করলেও চলে দেখছি। সে ক্ষেত্রে জনসংযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাজ থেকেই বরাবর কাজ পেয়েছি আমি। তাই বুঝতে পারি না, কাজ ছাড়া কী ভাবে প্রচারের আলোয় থাকতে হয়। আর কী নিয়ে প্রচার করলে শিরোনাম হবে তা নিয়ে ভাবিনি। কোনও দিন করিনি। আজ প্রেম ভাঙল বা গড়ল— এ সব সমাজমাধ্যমের পাতায় জানাতে চাই না। বাইরে ঘুরতে গেলাম, বাড়ি কিনলাম, গাড়ি কিনলাম— তা প্রচার করার প্রতিভা আমার নেই।
কেন প্রচার বিমুখ অমৃতা? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: নিজেকে এই ভাবে প্রচার করতে না পারা এটা কী নিজের ব্যর্থতা বলে মনে হয়?
অমৃতা: এটা না নিজের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। যখন মন ভাল আছে। সবই ভাল লাগছে। কিন্তু যখন মন ভাল নেই, এ সব নিয়ে ভাবতে বসি।
প্রশ্ন: কী ভাবেন?
অমৃতা: হয়তো দেখলাম, আমি দশ বছর ধরে অনেক ভাল চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু সমসাময়িক কেউ পাঁচ বছর কাজ করে অনেক কাজ পাচ্ছেন বা প্রচুর তাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তখন ভাবি, আমি কী ভুল করলাম বা আমার কী করা উচিত ছিল? তখন বুঝি, আলোচনাযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য সেই অভিনেত্রীর যে প্রতিভা আছে সেটা হয়তো আমার নেই। কাউকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে মানেই সে যে খুব ভাল অভিনয় করেন সেটাও তো নয়। এ সব ভাবি। তার পরে ভাবলাম, নিজের অভিনয় নিয়ে ঘষামাজা করব, না কি আলোচনাযোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধু আছে?
অমৃতা: স্কুল, কলেজের বন্ধুরাই এখনও আমার সঙ্গী। কর্মসূত্রে সাময়িক সখ্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু বন্ধু বলতে পারব না।
প্রশ্ন: আর বিশেষ বন্ধু? অমৃতার জীবনে কি কোনও রহস্যময় ব্যক্তি আছেন?
অমৃতা: এই উত্তরটা তোলা থাক। কাজের বাইরে আমার বাকিটা সত্যিই ব্যক্তিগত।