The Academy Of Fine Arts

ছাত্র বনাম ফেডারেশন! ‘দি অ্যাকাডেমি...’ ছবি নিয়ে জটে নয়া মোড়, উঠছে ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ

নবাগত পরিচালক জয়ব্রত দাসের ছবি ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ নিয়ে হইহই টলিপাড়ায়। কেউ বলছে টলিউডে চলছে ‘মাফিয়াগিরি’। কারও দাবি এই ছবি প্রতারণা করে বানানো।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:০৬
Share:

বাংলা ছবি মুক্তি নিয়ে জটিলতা সমাধান সূত্র কি আদৌ মিলবে! ছবি: সংগৃহীত।

১৪ নভেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল নবাগত পরিচালক জয়ব্রত দাসের ছবি ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’-এর। কিন্তু ফেডারেশনের বাধার মুখে পড়ে ছবির মুক্তি আটকে যায়। ফেডারেশনের দাবি, তাদের নিয়ম মানা হয়নি এ ক্ষেত্রে। তার পরেই নানা মহলে শুরু হয় হইচই। ছবি মুক্তির দাবিতে শুক্রবার ফেডারশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ছবির পরিচালক তথা সহ প্রযোজক জয়ব্রত ।

Advertisement

বৈঠকের পর ফেডারেশন সূত্রের খবর, রফাসূত্র এখনও মেলেনি। কারণ তাদের দাবি, ছবির পোস্টারে ‘প্রমোদ ফিল্মস্‌’ বলে যে প্রযোজনা সংস্থার নাম গিয়েছে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তবেই এগোবে। যদিও জয়ব্রতর দাবি, তাঁরা ছাত্র থাকাকালীন নিজেদের টাকা দিয়েই ছবির কাজ করেছেন। প্রমোদ ফিল্মস্‌ এই ছবির সঙ্গে খুব স্বল্প সময়ের জন্য যুক্ত হয়েছে।

ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের দাবি, এই ছবি আসলে একটা বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ তৈরি করেছে। একটি বাণিজ্যিক ছবিকে ‘স্টুডেন্ট ফিল্ম’ হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। আর তাতেই আপত্তি। ফেডারেশনের দাবি, যে কোনও বাণিজ্যিক ছবির মুক্তির ক্ষেত্রে তাদের থেকে অনুমতি নেওয়া জরুরি। যদি ছবিটি সত্যিই শুধু ছাত্রছাত্রীদের তৈরি হয়, তবে উল্টে ফেডারেশন তাদের সহায়তা করবে।

Advertisement

১২ নভেম্বর যখন ফেডারেশনের তরফ থেকে মেল মারফত ছবিটি মুক্তির বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়, সে সময়ে আনন্দবাজার ডট কমকে জয়ব্রত জানান, ছবিটি এসআরএফটিআই-এর ছাত্রছাত্রীরা মিলে তৈরি করেছেন। ছবির বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা। ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী রুদ্রনীল ঘোষ, সৌরভ দাস, পায়েল সরকার, দর্শনা বণিক কেউই পারিশ্রমিক নেননি। পড়ুয়াদের জন্য এমনিই কাজ করেছেন। অভিনেতাদের অনেকের বক্তব্য, আসলে বাংলা সিনেমার উন্নতির কথা ভেবেই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন তাঁরা।

ছবির সঙ্গে যুক্ত সকল কলাকুশলী এসআরএফটিআই-এর ছাত্রছাত্রী বলেও দাবি পরিচালকের। সেখানেই প্রশ্ন তুলেছেন ফেডারেশন সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘একটি ‘স্টুডেন্টস ফিল্ম’-এর নিবন্ধিকরণ কী করে এক জন প্রযোজক করতে পারেন? প্রমোদ ফিল্মসের নামে মুম্বইয়ে এই ছবির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সিনেমাটা যেহেতু বাংলার, স্বাভাবিক ভাবে ‘ইম্পা’য় নিবন্ধিকরণ হওয়া উচিত ছিল।’’ স্বরূপের দাবি, প্রমোদ ফিল্মসের কাছে বাংলার কুশলীরা লক্ষ লক্ষ টাকা পান। শুধু তা-ই নয়, এই ছবির বাজেট থেকে প্রচার কৌশলে যে খরচ করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্বরূপ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের ছবির বাজেট কত হয়? ২০-৩০ লক্ষ টাকা হতে পারে। আরও কম হয় অনেক সময়ে। কিন্তু এটা তো পুরো বাণিজ্যিক ছবি। সেটা কি ‘স্টুডেন্ট ফিল্ম’ হতে পারে? আমাদের তৃতীয় প্রশ্ন এই ছবিতে ইন্ডাস্ট্রির সাতটি বড় মুখ আছে। তাঁরা কি বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন? এত টাকা খরচ করে যে ছবির শুটিং হল, শহরে নামী রেস্তরাঁয় শুটিং হল— কোন টেকনিশিয়ানরা কাজ করলেন? সবটাই কি এসআরএফটিআই-এর ছাত্ররা করেছেন?’’

গত এক মাস ধরে এই ছবির প্রচার চলছে। প্রচার-ঝলক মুক্তি অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের পার্টিও হয়েছে এই ছবি উপলক্ষে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বরূপ। পাশপাশি ছবির পরিবেশনায় আইনক্স, পিভিআর, ইউফো কিউব— যেগুলির ডিস্ট্রিবিউশন নিতে খরচ হয় প্রায় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। এই পরিমাণ অর্থ, সবটাই কি ছবির পরিচালক তথা সহ-প্রযোজক জয়ব্রতের পকেট থেকে গিয়েছে? সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। স্বরূপের দাবি, এই ছবির প্রচারের স্বার্থে যা খরচ কিংবা পরিবেশনায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, সবটাই প্রমোদ ফিল্মসের করা। সেই কারণে তাঁরা ফের প্রমোদ ফিল্মসের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

ছবির অন্যতম অভিনেতা রুদ্রনীল এই গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁর সাফ কথা, ‘‘একটা ছবি মুক্তির জন্য প্রয়োজন সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র। যেটা এই ছবির রয়েছে। তাই অন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। আর এই ছবি যে ভাবে সাড়া পেয়েছিল দর্শকমহলে, তাতে হয়তো অন্য কোনও গোষ্ঠী শঙ্কিত হয়েছে। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র থাকার পরে, অগ্রিম বুকিং শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও, সব দুম করে বন্ধ করে দেন! টলিউডে একটা ‘মাফিয়াগিরি’র চক্রবূহ্য তৈরি হয়েছে। একটা নেক্সাস চলছে এখানে। নির্দিষ্ট পরিচালক বা প্রযোজকদের ছবি চলবে, তাঁরাই প্রেক্ষাগৃহ পাবে, ভাল শো পাবে। বাংলার দায়িত্বে থাকা ‘আইনক্স পিভিআর’-এর কর্তাব্যক্তিরা কার কাছে শিরদাঁড়া বিক্রি করলেন, সেটাও জানতে চাই। কাকে খুশি করতে এমন অনৈতিক কাজ করছেন?’’

রুদ্রনীল অবশ্য আশাবাদী, এখনও পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সবটা মিটমাট করে নেওয়া সম্ভব। টলিপাড়ায় গুঞ্জন, টাকাপয়সার বিনিময়ে বিষয়টির নিষ্পতির চেষ্টা হয়েছে। যদিও ফেডারেশনের সভাপতি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। এই ছবি কি আদৌ দিনের আলো দেখবে? প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement