আসছে আবার শবর
পরিচালনা: অরিন্দম শীল
অভিনয়: শাশ্বত, শুভ্রজিৎ, গৌরব, ললিতা চট্টোপাধ্যায়
৬.৫/১০
পরপর তিনটে খুন। তিনজনই অল্পবয়সি সুন্দরী, অবস্থাপন্ন। খুনের কায়দাও একই রকম। দ্বিতীয় খুনের পর অভিযুক্তকে পুলিশ বাঁচাল গণপ্রহারের হাত থেকে। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে অভিযুক্ত থাকা অবস্থাতেই তৃতীয় খুন! তা হলে খুনি কে? টানটান সাসপেন্স। আলো-আঁধারি ডিস্কোথেক, মাদক সেবন, ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়ের লাগামছাড়া জীবন, সোশ্যাল নেটওয়র্কের ফাঁদ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, সৎ বাবা-মা, প্রোমোটিং, যৌন নির্যাতন, মা-মেয়ের এক পুরুষের প্রতি প্রেম... জমজমাট শবর সিরিজের তিন নম্বর ছবি ‘আসছে আবার শবর’। এই মুহূর্তের সামাজিক সমস্যা ও তার পরিণতি বেশ গুছিয়ে বলেছে এই ছবিটি।
‘এবার শবর’ ও ‘ঈগলের চোখ’-এর চেয়ে ‘আসছে আবার শবর’-এর মেকিং বেশ পরিণত। শবর (শাশ্বত) ও নন্দর (শুভ্রজিৎ) জুটিও যেন শক্তিশালী হয়েছে এই ছবিতে। টানটান সাসপেন্সের মাঝে-মাঝে শবর ও নন্দর ভাঁড়ামোবর্জিত কমিক দৃশ্যগুলো দেখতে ভাল লাগে। বেড়েছে শবর ও সঞ্জীবের (গৌরব) বডি ফিটনেস। চন্দননগরের গঙ্গা, ঐতিহ্যশালী বাড়ি, টপ শটে লখনউ শহরের দৃশ্য দর্শকের ভাল লাগবে। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম লেগেছে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে। মীরকে পাওয়া গিয়েছে অন্যরকম চরিত্রে। অঞ্জনা বসুর অভিনয় ও গ্ল্যামারাস লুক নজর কাড়ে। এই ছবির গ্ল্যামার আরও বেড়েছে একঝাঁক ইয়ং আর্টিস্টের উপস্থিতিতে। তবে গ্ল্যামারের পাশাপাশি অভিনয়ে মন দিতে হবে দর্শনা ও দিতিকে। দিতির আড়ষ্টতা কোথাও যেন তাল কাটছিল। বহুদিন পর আবার পরদায় ললিতা চট্টোপাধ্যায়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও অভিনয়ে আজও তিনি সাবলীল। সিনেমাটোগ্রাফি, কালার ট্রিটমেন্ট, এডিটিং, সংলাপ মিলিয়ে এই শবর বেশ স্মার্ট। তারিফ করতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকেরও।
কিন্তু ছবিতে কিছু প্রশ্ন উত্তরহীন থেকে গেল। একটি দৃশ্যে খুনিকে ধরার জন্য তার পিছু নেয় শবর, নন্দ ও স়ঞ্জীব। অলিগলি, কুমোরটুলি, ভ্যান, কৌটো, পাইপ টপকে সকাল থেকে ছুটতে-ছুটতে (না হাঁপিয়ে!) সন্ধেবেলা গঙ্গার ধারে ধরে ফেলে খুনিকে। সারাদিন ধরে না দৌেড় খুনিকে থামাবার জন্য পায়ে একটা গুলি করলেই তো হত! একস্ট্রা চিজ টপিংয়ের মতো চেজিং সিন সাসপেন্স মুভিতে কাজ করে। যদি তাই হয়, তা হলে ত্রয়ী ও খুনির দৌড়নোর দৃশ্য আরও স্মার্ট হওয়া উচিত ছিল। কারণ আজকের বাঙালি দর্শক হলি-বলি ছবির চেজিং সিন দেখে দেখে চোখ পাকিয়েছেন।
আবার ধরুন, পিঠে ট্যাটু আছে কি না তা জানার জন্য রিঙ্কুর (দিতি) এক বন্ধুকে ডেকে মারধর করে জামা ছিঁড়ে দেখার দরকার কি আদৌ ছিল? জামা খুলতে বললেই যে কাজটা হয়ে যেত! বিজয় সেন (ইন্দ্রনীল) কি সত্যিই খুনি? এই উত্তর গোয়েন্দা শবরের অনেক আগেই কিছু দর্শক বুঝে যাবেন। কিছুদিন আগে ‘দাদাগিরি’-তে এই ছবির প্রোমোশনে এসে ছবির পরিচালকই তার আভাস দিয়েছিলেন। খুনি দাবি করে, সে গরিব ঘরের ছেলে। অথচ সে একদিনের মধ্যে ব্ল্যাকমেলের ১০ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ফেলে। দামি মোটর বাইক নিয়ে ঘোরে। আবার রিঙ্কুর আলমারিতে পাওয়া গর্ভনিরোধক বড়ির রহস্যও তো উন্মোচন হল না...
এমন কিছু ব্যাপার এড়িয়ে গেলেই, ব্যোমকেশ বক্সী ও ফেলুদার পর বাঙালি দর্শকের মনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তৈরি করেছে শবর দাশগুপ্ত। এই ছবি সেই জায়গাকে আরও মজবুত করল।