বাদ গেলেন না রুদ্রনীল ঘোষও। এ বার তিনিও গোয়েন্দা। তবে লেখার পাতায় জন্মানো গোয়েন্দা নয়, পরদার জন্য তৈরি। গোয়েন্দা ‘কে’। ছবির ট্রেলার দেখলে বোঝা যাবে, গড়পরতা গোয়েন্দা গল্প নয় এটা।
সমসাময়িক সকলেই গোয়েন্দা হচ্ছেন বলে কি রুদ্রনীলও সেই খাতেই বইলেন? ‘‘বাকিরা তো দেবতুল্য গোয়েন্দা। যাদের মধ্যে কোনও দোষ-গুণ নেই। কেউ কেউ তো মহিলাদের দিকে তাকায়ও না। আমার চরিত্রটা ভাল-মন্দ মেশানো একজন মানুষ। একটা মজার গল্প ধীরে ধীরে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের দিকে এগোয়,’’ জবাব রুদ্রনীলের। একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘ছবির পরিচালক অভিরূপ অনভিজ্ঞ হতে পারে, কিন্তু ভাবনায় নতুনত্ব আছে। আর অভিজ্ঞ নামী পরিচালকের ছবি মানেই দারুণ হবে, এমন তো নয়। ভাল ছবি করলে দর্শক দেখবে। গত দু’-তিন বছরে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’’
তাই কী? নতুনদের কত জনই বা সুযোগ দেন! ‘‘ভাল কাজ করলে নজরে সে আসবেই। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর কথা ধরুন কিংবা অয়ন চক্রবর্তীর ‘ষড়রিপু’। তা ছাড়া যাঁরা নামী পরিচালক তাঁরা যে প্রত্যেক ছবিতেই চার-ছয় মারছেন এমন তো নয়,’’ স্পষ্ট গলায় বললেন।
কিন্তু অভিনেতা রুদ্রনীলের পরদায় উপস্থিতি তো ক্রমশ কমে যাচ্ছে! এ বারেও চাঁচাছোলা জবাব, ‘‘কোনও দিনই কত বড় চরিত্র করছি ভেবে কাজ করিনি। কী করছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার চেহারা অতি সাধারণ। সেটাকে নানা ভাবে ভাঙা যায়। আসলে পছন্দ মতো ছবি না এলে করব না। ব্যস।’’
যিশু সেনগুপ্ত, আবির চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের থেকে কি পিছিয়ে পড়লেন? ‘‘দু’মাস অন্তর আমার ছবি রিলিজ করতে হবে, নইলে চলবে না, এমন তো নয়। এখানে আরবান ছবিতে টুকটুকে অভিনেতা না হলে হিরো হওয়া যায় না। সে রকম চরিত্র হলে, যিশু বা আবির করছে। গত বছরটা পরমের ভাল যায়নি। ঋত্বিকও ওই লিগটায় ঠাঁই পাচ্ছে না। আসলে আমরা এখানে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ধনুষকে দেখে বাহবা দিই আর নিজেরা নেওয়ার বেলায় কার্তিক ঠাকুর খুঁজি,’’ উত্তেজিত গলায় বললেন।
আপনার কি যিশু বা আবিরের উপরে রাগ আছে? ‘‘সেটা কখন বললাম? বরং আবিরকে ‘বিসর্জন’-এ কৌশিকদা যে চরিত্রটা দিয়েছে, সেটা দেখে খুব ভাল লাগল। আর এত দিন যিশুর মতো শক্তিশালী অভিনেতা েয ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে, সে কথা কারও মনে পড়েনি। সেটাই আশ্চর্যের। যেমন ‘কহানি’র পর সকলের হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনয়টা করতে পারেন! এই তো অবস্থা,’’ জবাব রুদ্রনীলের।
আরও পড়ুন: শুধু সিরিয়াল করেই মরে যাব না
সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলের ছবিতে অল্প পরিসরেও রুদ্রনীল নিজের ছাপ রেখেছেন। জানালেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ধূমকেতু’ সেই রকম একটা ছবি যেখানে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আফসোসের সুরে বললেন, ‘‘এই ছবিগুলো যখন রিলিজ করে না, খারাপ লাগে। ‘ধূমকেতু’তে কৌশিকদা আমাকে একেবারে নিংড়ে নিয়েছে। ওর তৈরি অন্যতম ব্রিলিয়ান্ট ছবি এটা। আসলে কী জানেন তো, আমাদের মতো অভিনেতাদের নিয়ে ছবি তৈরিতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই হাতে গোনা যে ক’টা ছবি পাই, সেগুলো যদি দর্শক দেখতে না পান, তা হলে হতাশ লাগে।’’
এখনও মনে করেন ‘কাঁটাতার’ ছবিতে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে যে চ্যালেঞ্জটা দিয়েছিলেন, সেই রকম আর কেউ এখনও দিতে পারল না!
আফসোস আছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় আর ‘অ্যাক্সিডেন্ট’-এর মতো ছবি করেন না। ‘‘ওঁরা এখন সাংসারিক টানাপড়েন নিয়ে ছবি করেন। সেখানে আমার করার মতো চরিত্র হলে নিশ্চয় ডাকবেন। ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ আমার অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। কলকাতার রাস্তায় পাগলের মতো বাস চালিয়েছি। এখন ভাবলেও অবাক লাগে,’’ বললেন রুদ্রনীল।
তিনি এখন কমিশনার রাইট টু পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তা হলে তো রাজনৈতিক কেরিয়ার ভালই চলছে? তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতিকে আমি কোনও দিনই কেরিয়ার হিসেবে দেখিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেটুকু দায়িত্ব দিতেন, সেটাই পালন করেছি। এটাও একটা সাম্মানিক পদ।’’ সরকারি কাজ সামলানোর পর সিনেমা করতে সমস্যা হয় না? ‘‘না। সরকারি কর্মীরা যাতে সাধারণ মানুষকে নাজেহাল না করেন সেটা দেখাই কাজ আমার।’’
সরকারি কাজ করে তা হলে হাতে অনেক সময় থাকে বলছেন? উল্টো দিক থেকে হো হো করে হাসির শব্দ এল!