অভিনয়। নিজস্ব চিত্র
সিহারসোল একটি গ্রাম। তবে অন্য গ্রামের থেকে খানিক আলাদা। এই গ্রামের ধমনীতে বয়ে চলেছে নাট্যচর্চার স্রোত। এই নাট্যচর্চার ইতিহাস একশো পেরিয়ে গিয়েছে। শুরু সেই ১৯১৩ সালে। এই গ্রামের রাজবাড়ির কাঠের মঞ্চে প্রথম মঞ্চস্থ হয় সিন্ধুবধ পালা। ১৯৩০ সালে মঞ্চটি পাকা হওয়ার পরে সেখানে ধারাবাহিক ভাবে নাটক মঞ্চস্থ হওয়া শুরু হয়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই মঞ্চেই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।
নাট্যকর্মী শশাঙ্কশেখর কাঞ্জিলাল জানান, এই গ্রামের রাজপরিবার সংস্কৃতি মনস্ক। তাঁদের বাড়িতে লেখক জগৎরাম রায়চৌধুরী তাঁর লেখা রামায়ণ শোনাতে এসেছেন। কাশীপুরের রাজবাড়িতে ম্যানেজার পদে কাজ করার সময় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সিহারসোল রাজবাড়িতে এসে জগৎরামের মুখে তাঁর রামায়ণের পাঠ শুনেছেন। এই গ্রামি ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। সেই কাজে বড় অবদান ছিল বিপ্লবী নিবারণচন্দ্র ঘটকের। এখানেই বিপ্লবী বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় বেশ কিছু দিন ছদ্মবেশে আত্মগোপন করেছিলেন বলে জনশ্রুতি। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত গ্রামবাসীরা সেই সময়ে দেশাত্মবোধক নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। এখন সামাজিক নাটকের চর্চাই বেশি চলছে।
তবে ২০০০ সালে পুরনো রাজবাড়িটির সঙ্গে মঞ্চটিও ভেঙে যায়। কিন্তু নাট্যচর্চা থাকেনি। কারণ, ১৯৯৬ সালেই সিয়ারশোল স্পোটর্স অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের ৫০ বছর পূর্তিতে তাদের নিজস্ব জমিতে নতুন মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছেন। মনোজ মিত্র সেই সুবণর্জয়ন্তী মঞ্চের উদ্বোধন করেন। এখন সেই মঞ্চেই চলছে নাট্যচর্চা। প্রবীণ থেকে নবীন— নাট্যচর্চার স্রোতটি গ্রামে সব প্রজন্মের মধ্যেই বয়ে চলেছে। পিছিয়ে নেই মহিলারাও। এই নাট্যচর্চায় তাঁরাও অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে এই গ্রামের দলগুলিকে নিয়ে শুরু হওয়া নাটক প্রতিযোগিতা। যা এখন প্রদর্শনমূলক নাট্যোৎসবে পরিণত হয়েছে।
নাট্যকর্মী ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় জানান, নাটকের উন্নতির জন্য সিহারসোল স্পোটর্স কালচালার অ্যাসোসিয়শন বেশ কয়েক বার কর্মশালার আয়োজন করেছে। অরুণ মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, নীলকণ্ঠ সেনগুপ্ত, দেবেশ রায়চৌধুরীরা প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছেন। এখানে নাটক করে গিয়েছেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এই গ্রামে নিজের পরিচালিত যাত্রা দেখতে এসেছিলেন উৎপল দত্ত। সিহারসোল স্পোটর্স অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৈণাক মণ্ডল ও ক্লাবের সম্পাদক নির্মল চট্টোপাধ্যায়রা জানান, নতুন প্রজন্মের কাছে নাটকের গুরুত্ব ও আকর্ষণ বাড়াতেই এ বার আলোচনাচক্র আয়োজিত হয়। ১২-১৫ অক্টোবর গ্রামের ১২টি দলকে নিয়ে নাট্যোৎসবের সূচনা করেন বর্ষীয়ান নির্দেশক ও অভিনেতা নীলকমল ঘটক। সংবর্ধনা জানানো হয় প্রবীন নেপথ্য আলোক শিল্পী দীপক শর্মা ও চন্দ্রকান্ত ঘটককে। নতুন প্রজন্মের নাট্যকর্মী রিয়া কর্মকার, নেহা প্রজাপতি, ডালিয়া চট্টোপাধ্যায়রা জানান, এ বার ১৫০ জন নাটকে অংশ নিচ্ছেন।