অতিরিক্ত তথ্যেও সৎ প্রচেষ্টা

পাঁচ বছর আগে ‘পান সিংহ তোমর’কে নিয়ে ছবি তৈরি করার সময় যে মুনশিয়ানার ছাপ তিনি রেখেছিলেন, তা আরও এক বার প্রতিফলিত হল তাঁর নতুন সিনেমা ‘রাগদেশ’-এ।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১১:২০
Share:

রাগদেশ

Advertisement

পরিচালনা: তিগমাংশু ধুলিয়া

অভিনয়: কুনাল কপূর, অমিত সাধ, মোহিত মারওয়া

Advertisement

৬/১০

ইতিহাস-নির্ভর ছবির ধারা বলিউডে শুরু হওয়ার পর থেকে যে সব পরিচালকের কথা বারবার সামনে এসেছে, তিগমাংশু ধুলিয়ার নাম তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকে। পাঁচ বছর আগে ‘পান সিংহ তোমর’কে নিয়ে ছবি তৈরি করার সময় যে মুনশিয়ানার ছাপ তিনি রেখেছিলেন, তা আরও এক বার প্রতিফলিত হল তাঁর নতুন সিনেমা ‘রাগদেশ’-এ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্তীর্ণ অধ্যায়ের বিভিন্ন পর্ব এবং চরিত্র নিয়ে নানা সময় নানা ছবি তৈরি হয়েছে বলিউডে। গাঁধী, ভগৎ সিংহ, মঙ্গল পাণ্ডে, সর্দার বল্লভভাই পটেল— সকলেই বন্দি হয়েছেন রুপোলি পর্দায়। হয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে ছবিও। কিন্তু তাঁর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ) নিয়ে আলাদা করে তেমন কাজ কোথায়! চারের দশকে খুবই অল্প সংখ্যক সেনা নিয়ে তৈরি আইএনএ তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। শেষ রক্তবিন্দুর বিনিময়ে হলেও স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে চেয়েছিল আইএনএ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আইএনএ তৈরি এবং তার গুরুত্বপূর্ণ তিন সৈন্য মেজর জেনারেল শাহনওয়াজ খান (কুনাল কপূর), লেফটেন্যান্ট কর্নেল গুরুবক্স সিংহ ধিলোঁ (অমিত সাধ) এবং কর্নেল প্রেম সেহগলের (‌মোহিত মারওয়া) গ্রেফতারি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, কোর্টরুম ট্রায়াল— এ নিয়েই বোনা হয়েছে গল্প। প্রতিটি চরিত্রে অভিনেতারা উৎকর্ষের মাত্রা ছাপিয়েছেন। কঠিন পরিশ্রমের ছাপ তাঁদের অভিনয়ে স্পষ্ট। ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগলের ভূমিকায় মৃদুলা মুরলী প্রশংসনীয়। তাঁদের আইনজীবী ভুলাভাই দেশাইয়ের ভূমিকায় কেন্নেথ দেশাইও যোগ্য সঙ্গত করেছেন।

সে সময়ের খুঁটিনাটি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি পরিচালক। চরিত্রদের সংলাপ, পোশাক, ছবির সেট— এ সব নিয়ে যে রীতিমতো গবেষণা করেছেন, তা স্পষ্ট। আলাদা কৃতিত্ব দাবি করেন সিনেম্যাটোগ্রাফার ঋষি পঞ্জাবি।

তবে এত নিখুঁত নির্মাণ খানিকটা হলেও মাঠে মারা গিয়েছে গল্পের দীর্ঘসূত্রিতায় এবং গল্প বলার ধরনে। আরও মেদহীন করা যেতে পারত। তেমনই, ছবির কোনও কোনও জায়গায় গিয়ে মনে হয়, তথ্যের ভারে বাধা পাচ্ছে ছবির সাবলীল গতি। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই স্বল্প চর্চিত অধ্যায় নিয়ে অনেকটা জানা হলেও, তা যেন কখনও ইতিহাস বইয়ের তথ্যনির্ভর জ্ঞান ভাণ্ডারের মতোই হয়ে ওঠে।

বস্তুত, এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন একটি ছবি অন্য দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যখন জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলি নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের অসহিষ্ণুতা প্রকট হয়ে উঠেছে, তখন চারের দশকের এই ইতিহাস, বীরেদের কীর্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই দেশের স্বাধীনতায় অসংখ্য মানুষ তাঁদের রক্ত ঝরিয়েছেন। দেশপ্রেম নিয়ে গড়ে ওঠা সাম্প্রতিকতম ধারণা এবং উদাহরণগুলির মুখে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় এই ছবি। নতুন করে মনে পড়িয়ে দেয়, খাদ্যাভ্যাস বা পোশাক দিয়ে দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসা মাপার চেষ্টা এবং সেই মাপকাঠিতেই দেশদ্রোহী তকমা লাগানোর চেষ্টা কতটা অর্থহীন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অথচ স্বল্পচর্চিত এমন একটি পর্বকে রুপোলি পর্দায় তুলে আনার জন্য যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস দরকার, সে পরীক্ষায় অতি অবশ্যই সসম্মান পাশ করেছেন ‘রাগদেশ’-এর পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন