Celebrity Interview

বক্স অফিসে সলমন বনাম জিৎ! লড়াইটা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরবের মতো, মত জিতের

এই প্রথম সর্বভারতীয় স্তরে মুক্তি পেল তাঁর ছবি। ‘চেঙ্গিজ়’ নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী জিৎ? জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৯
Share:

‘চেঙ্গিজ়’ ছবির একটি দৃশ্যে জিৎ। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির প্রচারে একাধিক শহরে ঘুরতে হয়েছে। কখনও ছবির প্রচারকৌশলে চূড়ান্ত সিলমোহর দিচ্ছেন। কখনও আবার অগ্রিম বুকিংয়ের খোঁজ নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তেও কোনও সুযোগ নষ্ট করতে নারাজ তিনি। ‘চেঙ্গিজ়’ মুক্তির আগে নিজের অফিসে সময় দিলেন জিৎ। দুধ চা এবং বিস্কুট সহযোগে শুরু হল আড্ডা।

Advertisement

প্রশ্ন: মুম্বই, দিল্লি, লখনউ, জয়পুরএই প্রথম একাধিক শহরে নিজের ছবির প্রচার করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা হল?

জিৎ: খুবই ভাল। সংবাদমাধ্যম এবং স্থানীয় মানুষেরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক কিছু শিখলাম।

Advertisement

প্রশ্ন: বাংলার বাইরে বাংলা ছবি ঘিরে মানুষের মধ্যে উৎসাহ কতটা চোখে পড়ল?

জিৎ: ‘চেঙ্গিজ়’-এর মতো ছবি যে বাংলায় হয়, সেই ধারণা কারও ছিল না। ওখানকার দর্শকের ধারণা যে, বাংলায় শুধুই অন্য ধারার ছবি তৈরি হয়। আশা করি, এই ছবিটা কিছুটা হলেও তাঁদের ধারণা বদলাতে পারবে।

প্রশ্ন: আপনি বাংলার সুপারস্টার। সেই স্টারডম কি অন্য শহরে ছবির প্রচারে কাজে এল?

জিৎ: সত্যি বলতে, হিন্দি বাজারে আমাকে খুব বেশি মানুষ চেনেন না। কিন্তু ট্রেলার দেখার পর তাঁরাও একটু আমার ছবিগুলো নিয়ে খোঁজখবর করছেন। এখনও পর্যন্ত এ রকম কাউকে পাইনি যাঁর ট্রেলারটা ভাল লাগেনি।

অন্যধারার তুলনায় বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করতেই বেশি পছন্দ করেন জিৎ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: দক্ষিণের সফল ছবির নায়করা হিন্দি ডাবিংয়ের দৌলতে দর্শকের কাছে বেশ পরিচিতআপনার ‘ওয়ান্টেড’ এবং ‘শত্রু’ শুধুমাত্র হিন্দিতে ডাব হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ?

জিৎ: এখনও জানি না। সবটাই নির্ভর করছে ‘চেঙ্গিজ়’ দর্শকের কতটা ভাল লাগছে তার উপর। আমার পুরনো ছবিগুলোর মধ্যে নিজের কাছে কিছু রয়েছে। তার থেকেও বেশি ছবি অন্যান্য প্রযোজকের কাছে রয়েছে। যদি এই ছবিটা ভাল ফল করে, তা হলে সেই সব ছবি হিন্দিতে ডাব করা হলে তাঁরাও লাভবান হবেন।

প্রশ্ন: সর্বভারতীয় স্তরে ‘চেঙ্গিজ়’ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। ‘রাবণ’ কী দোষ করেছিল?

জিৎ: এই ছবিটা আরও ভাল। আমি সময়কে খুব বিশ্বাস করি। ‘রাবণ’ মুক্তির পর সমাজমাধ্যমে প্রচুর প্রতিক্রিয়া এসেছিল। দর্শক সর্বভারতীয় স্তরে আমাকে দেখতে চাইছিলেন। তাই সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোতে থাকি। অবশেষে সেটা বাস্তবায়িত হল।

প্রশ্ন: অতিমারির পরবর্তী সময়ে বাংলা ছবির ব্যবসা নিয়ে আলোচনা চলছেই। নীরজ পাণ্ডে (ছবির গল্পকার) এবং ‘এএ ফিল্মস’ (‘বাহুবলী ২’ এবং ‘কেজিএফ’-এর পরিবেশক) এর মতো সর্বভারতীয় নাম জড়িয়ে গেল বলেই কি সাহস পেলেন?

জিৎ: নীরজ পাণ্ডের আসাতে বিষয়টা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তার পর রোহিত রায় আমাদের ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হলেন। সব শেষে অনিল থারানিকে (এএ ফিল্মস-এর কর্ণধার) ছবিটা দেখানোর পর ওঁর পছন্দ হয় এবং উনি ‘চেঙ্গিজ়’ রিলিজ় করতে রাজি হন।

প্রশ্ন: এ বার তো হিন্দিতেও আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বিপরীতে রয়েছে সলমন খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’। ছবিটা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে তেমন উত্তেজনা নেই বলে শোনা যাচ্ছে। আপনার কী মনে হচ্ছে?

জিৎ: আমি চাই দুটো ছবিই ভাল চলুক। কিন্তু দিনের শেষে যেটা ভাল হবে, দর্শকও সেই ছবিই দেখবেন।

‘চেঙ্গিজ়’ ছবির প্রচারের ফাঁকে ছবির অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জিৎ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ‘পাঠান’-এর মতো আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারবে কি?

জিৎ: সে রকম তো মনে হচ্ছে না। এখনই কিছু বলাটা ঠিক নয়। তবে ছবির প্রচার করতে গিয়ে সলমনের সঙ্গে আমার ছবির তুলনা টানা হচ্ছে, সেটা দেখে ভাল লেগেছে। দেখুন, ওঁরা চ্যাম্পিয়ন। আমরা সেখানে আন্ডারডগ। জানি না, বলা উচিত হবে কি না। তবে, বিশ্বকাপ ফুটবলে সৌদি আরবও আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছিল! তাই আগে থেকে কিছু বলা উচিত নয়। সময় সব উত্তর দিয়ে দেয়।

প্রশ্ন: অনেকে এ রকমও বলছেন, বাকি প্রদেশের কথা ভাবতে গিয়ে এ বারে বাংলায় ছবির প্রচার ব্রাত্য রয়ে গেল।

জিৎ: একদমই নয়। যতটা পেরেছি, সময় দিয়েছি। আমি বাংলার ছেলে। বাংলাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। হয়তো আমরা নিজে থেকে কাউকে অ্যাপ্রোচ করিনি। কিন্তু যাঁরা সময় চেয়েছেন, তাঁদের আমি হতাশ করিনি।

প্রশ্ন: ‘জুবিলি’ দেখলেন?

জিৎ: না, বিগত দিন কুড়ি আমি এতটাই ব্যস্ত যে, কিছুই দেখা হয়নি।

প্রশ্ন: ‘জুবিলি’তে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রশংসিত। হিন্দি থেকে ওয়েব সিরিজ়ের প্রস্তাব এলে রাজি হবেন?

জিৎ: আগে দেখতে হবে, আমি এত দিন কী কী তৈরি করতে পেরেছি। তার সঙ্গেই দর্শক আমাকে কতটা পছন্দ করছেন। ট্যালেন্ট হিসেবে আমি নিজে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছি— এ রকম বেশ কিছু ফ্যাক্টর বিচার করতে হবে। তার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারব। আমি এবং আমার টিম খুবই খোলামনে কাজ করি। সে রকম কোনও প্রস্তাব যদি আসে আর যদি আমার মনে হয় যে, সেটা আমার পেশাদার জীবনে নতুন কিছু যোগ করতে পারবে, তা হলে নিশ্চয়ই রাজি হব।

লখনউতে ছবির প্রচারের ফাঁকে জিৎ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: সময় পেলে ওটিটির কনটেন্ট দেখেন?

জিৎ: খুব একটা নয়। দর্শকের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসার পিছনেই বেশি সময় দিই। যখন সেটা করার থাকে না, বা কেউ যদি ভাল কিছু দেখার পরামর্শ দেন তখন দেখি। (একটু ভেবে) যেমন লোকের মুখে শুনেই ‘কান্তারা’ দেখেছিলাম। ‘পাঠান’ এবং ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ আমি প্রথম দিনেই দেখেছি। আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল (হাসি)।

প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরে বাংলার দর্শক দক্ষিণী অ্যাকশন ছবির প্রতি ঝুঁকেছেন। বাংলায় বাণিজ্যিক অ্যাকশন ছবির অভাব কি তার অন্যতম কারণ?

জিৎ: এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বাণিজ্যিক ছবিই ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু অনেক সময়েই অনেকে তা বিশ্বাস করেন না বা কোণঠাসার চেষ্টা করেন। ঠিক আছে। বাণিজ্যিক ছবিও আবার এক দিন তার নিজের আসনে ফিরে আসবে এবং সেটা সর্বভারতীয় স্তরে।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনিও তো ‘বাচ্চা শ্বশুর’ বা ‘অসুর’-এর মতো অন্য ধারার ছবি নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু অনুরাগীরা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ জিৎকেই ভোট দিয়েছে।

জিৎ: আমারও নিজেকে সেই ভাবেই দেখতে ভাল লাগে। ‘বাচ্চা শ্বশুর’ করতে খুব বেশি ভাল লাগে না! দুই ঘরানার মধ্যে তুলনা করতে বললে, আমি ‘রাবণ’ এবং ‘চেঙ্গিজ়’-এর শুটিং বেশি উপভোগ করব।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, বিগত দশ বছরে বাংলা সিনেমা একটু বেশিই সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে?

জিৎ: সেটা আমি বলার কেউ নই। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কিছু যোগ করতে পারছি কি না, সেটা আমাকে বেশি ভাবায়।

প্রশ্ন: আপনি এখন হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে ছবি করছেননেপথ্যে কোনও বিশেষ কারণ?

জিৎ: আমার কাছে ‘চেঙ্গিজ়’ খুবই স্পেশ্যাল। সে দিক থেকে ছবিটা যদি ভাল ভাবে গৃহীত হয়, তা হলে এই সময় নেওয়াটা সার্থক বলে মনে করব। সংখ্যার তুলনায় আমি ছবির গুণগত মানে বিশ্বাসী।

প্রশ্ন: শেষ দুটো ছবিতে নতুন নায়িকাদের কাস্ট করেছেন। অনেকেই জানতে চান, কোয়েল, শুভশ্রী বা মিমি, নুসরতদের সঙ্গে কি আপনি আর কাজ করবেন না?

জিৎ: কেন করব না! আমার নায়িকাদের সঙ্গে আমি অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখি। পাশাপাশি নতুনদেরও তো সুযোগ দিতে হবে। শুধু নায়িকা নয়, সেটা সিনেমার যে কোনও ক্ষেত্রেই হতে পারে। নতুনদের সুযোগ দিলে, সেটা তো ইন্ডাস্ট্রির জন্যও ভাল লক্ষণ। এর মধ্যে অন্য কোনও কারণ নেই।

প্রশ্ন: ‘সাথী’র মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখা জিৎ এবং আজকে হিন্দি বাজারে পা রাখা জিৎ— মাঝে কেটেছে ২১টা বছরএই দুই জিতের মধ্যে কী কী পরিবর্তন এসেছে?

জিৎ: ভেতরের মানুষটা একই আছে। কিন্তু উপরের স্তরে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। যাই করি না কেন, এক জন মানুষ এবং শিল্পী হিসাবে প্রতি দিন আরও ভাল কিছু করতে চাই। বিগত দুই দশকে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে অজস্র ভুল করেছি। ধাক্কা খেয়েছি। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছি। হয়তো সময়ের সঙ্গে এখন একটু বেশি পরিণতমনস্ক হয়েছি।

প্রশ্ন: পরের ছবি ‘মানুষ’-এর শুটিং তো...

জিৎ: (থামিয়ে দিয়ে) এখন শুধুই ‘চেঙ্গিজ়’ (হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন